ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেবে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সার্বিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি নিয়ে বিএনপির অভিযোগকে তাদের মিথ্যাচার ও নোংরা রাজনীতির বহির্প্রকাশ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বিএনপির এসব কথা অনেকে পাগলের প্রলাপ মনে করে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। তারা নিজেদের সমস্যাগুলো ঢাকার জন্যই সরকারের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচারে লিপ্ত। শনিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর যে মাত্রায় আঘাত হানার এবং ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কা ছিল, সেটা হয়নি। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সে জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তারপরও যেটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যে পরিবারের যতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে ওই পরিবারগুলোর মাঝে কোন হতাশা কাজ না করে। মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর ভয়াবহ আঘাত হানার যে পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল, সেই তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারের পক্ষ থেকে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নিজস্ব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎপেক্ষণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় ফণী দুই হাজার কিলোমিটার দূরে থাকতেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আগাম তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়। তবে ফণী ভারতের উড়িষ্যায় যে মাত্রায় আঘাত করেছে, সেটা দুর্বল হয়ে ভয়াবহতা কমে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কা ছিলÑ সেটা কেটে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। উপকূলবর্তী ১৯টি জেলার প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রশাসনের পাশাপাশি আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই সব জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও এমপিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং এগিয়ে আসে। হানিফ আরও বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা মনিটরিং সেল গঠন করে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটর করছি। উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের মনিটরিং সেলে শতাধিক ফোনকল এসেছে। ফোন করে অনেকে এলাকায় তাদের সমস্যার কথা জানালে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। যে সব এলাকায় ক্ষতি হয়েছে আমরা তার সার্বিক তথ্য নিচ্ছি। ফণীর প্রভাব কমে গেলে ওই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আওয়াম লীগের টিম যাবে। ‘সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে’- বিএনপির এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে সবাই জানে। এবার যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল, ইতিহাসে এর আগে এত প্রস্তুতির কোন রেকর্ড নেই। যে ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে তার মধ্যে ৬ জনই মারা গেছেন বজ্রপাতের কারণে। এই প্রাকৃতিক আঘাত কি করে ঠেকানো সম্ভব? বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা এ ধরনের মিথ্যাচার করছেন, তাদের নোংরা ভাষায় কিছু বলা যায় না। তাই তাদের অনেকেই পাগলের প্রলাপের সঙ্গে তুলনা করছেন। আসলে বিএনপি রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, ছিটকে পড়েছে। বিএনপি আজকে কোন্দলে জর্জরিত। তারা নিজেদের সমস্যা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই সরকারের কর্মকা- নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যাচার করে। তারা নানা কথাবার্তা বলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নিজেদের ব্যর্থতা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপির এসব অভিযোগ মিথ্যাচার ও নোংরা রাজনীতির বহির্প্রকাশ। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডাঃ দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত নন্দী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য সাবেক ডাকসু ভিপি আকতারুজ্জামান, এস এম কামাল হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু প্রমুখ।