ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝড়বৃষ্টিতে ফাঁকা রাজধানীর রাস্তাঘাট

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৫ মে ২০১৯

ঝড়বৃষ্টিতে ফাঁকা রাজধানীর রাস্তাঘাট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শক্তি হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। উপকূলের ১৯ জেলাসহ সারাদেশে তান্ডব শেষে চলছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিকাশ। অন্যান্য জেলার মতো রাজধানীতেও দিনভর ছিল ফণীর প্রভাব। শুক্রবার সকালের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে ঢাকার আকাশ। রাতভর কয়েকদফা বর্ষণ হয়। শনিবার সারাদিন থেমে থেমে ঝড় বৃষ্টিতে কার্যত ফাঁকা ছিল যানজটের এই নগরী। অনেক রাস্তায় পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে সাধারণ মানুষকে অল্প হলেও ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। ফণীর প্রভাবে ঢাকা থেকে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বলতে গেলে বন্ধই ছিল। সদরঘাট টার্মিনালজুড়ে ছিল পিনপতন নীরবতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত নদী বন্দরে নৌযান, যাত্রী ছিল না। তবে স্বাভাবিক ছিল ট্রেন চলাচল। বিমানযাত্রায় কিছুটা বিঘ্ন হয়েছে। শহরজুড়ে গণপরিবহন ও প্রাইভেটকারের খুব বেশি দেখা যায়নি। কিছু রিক্সা চলাচল করেছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে নগরবাসীকে বাইরে বের হতে দেখা যায়নি। ফণীর সর্বশেষ খবর জানতে সবার চোখ ছিল টেলিভিশনের দিকে। এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দেশের সব ফেরিঘাট সারাদিন বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় চালু হয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট। গুরুত্বপূর্ণ নৌ-রুটগুলোর কোনটাই স্বাভাবিক হয়নি শনিবার রাত পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নৌ চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে না। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশায় তা-ব চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শনিবার সকালে বাংলাদেশে ঢোকার পর দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। ‘ফণী’র প্রভাবে সকাল থেকেই বৃষ্টির মুখোমুখি হতে হয়েছে রাজধানীর বাসিন্দাদের। সঙ্গে যোগ হয় ঘূর্ণি বাতাস। মধ্যরাত পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আজও ঢাকায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণও কমবে। রয়েছে বজ্রপাতের সম্ভাবনা। শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বিশ দিন পর শুক্রবার ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে। রাতেও বৃষ্টি থাকবে। এদিকে আবহাওয়া পুরোপুরি ভাল না হওয়া পর্যন্ত নদীতে ছোট নৌকা চলাচল করতে দেয়া হবে না। পাশাপাশি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে ও ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত বরিশাল জেলা প্রশাসন। ঢাকার চিত্র ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে রাজধানীর সড়কে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম ছিল। সরেজমিন রাজধানীর বংশাল, গুলিস্তান, মীরপুর, পল্টন, মতিঝিল, শান্তিনগর, রামপুরা, বাড্ডা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ঘুরে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও অফিসগামীদেরই সড়কে দেখা গেছে। ফণীর পূর্বাভাস পেয়ে শনিবার অধিকাংশ স্কুল বন্ধ ছিল। যাদের অফিস খোলা তাদের অনেকে দুই-তিন গুণ ভাড়া দিয়ে রিক্সায় চলাচল করতে হয়। এদিকে বৃষ্টির কারণে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মিরপুর, মতিঝিল, শান্তিনগর, রাজারবাগ, পল্টন, মৌচাকসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে। সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় সম্ভাব্য দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা এবং তথ্য আদান প্রদানের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, জরুরী প্রয়োজনে ০২-৯৫৫৬০১৪ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। অপরদিকে রাজধানী ঢাকায় সম্ভাব্য দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা এবং তথ্য আদান প্রদানে গত পরশু নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও (ডিএনসিসি)। এজন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে লেভেল ১০, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর : ০২-৯৮৫১৩২৩ ও ০২-৫৫০৫২০৮৪ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র সতর্কতায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় ২৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকা ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আবারও ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার দিকে ফেরি চলাচল শুরু হয়। তবে প্রাথমিকভাবে সীমিত আকারে ছোট ফেরিগুলো চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে নিরাপত্তা জনিত কারণে এ রুটে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে বাংলাদেশ বিআইডব্লিউটিসি। জনশূন্য সদরঘাট ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণীর সতর্কতা হিসেবে সারাদেশে নৌযান চলাচলে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তাই বহুদিন পর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটে দেখা গেল প্লাটফর্ম তথা পন্টুন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নেই কোন নৌযান। এমনকি নৌকার দেখাও মিলেনি। পুরো বন্দর প্রায় ফাঁকা দেখা যায়। কোন লঞ্চ আসেনি, ছেড়েও যায়নি। তবে আগে থেকেই বন্দরে যেসব লঞ্চ ছিল সেগুলোকে আশপাশের নিরাপদ স্থানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যে কারণে সদরঘাটে যাত্রীও আসেনি। ঘাটে প্রবেশের প্রায় সবকটি গেটে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের অনুসন্ধান কক্ষে বসে থাকা মোঃ শাহেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে সারাদেশে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাই কোন ধরনের নৌযান চলাচল করছে না। এ জন্য তারা একটি বাদে ঘাটের অন্য প্রবেশ পথে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। যেটি খোলা রাখা হয় ওটা দিয়ে ঘাট সংশ্লিষ্টরা যাতায়াত করছে।’ ঘাট ইন্সপেক্টর ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সাগরে বিপদ সঙ্কেত না কমছে ততক্ষণ নৌচলাচল বন্ধ রাখা হবে। বিপদ সঙ্কেত কমে আসলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তারপর থেকেই লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হবে।
×