ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিস্থিতি আজ স্বাভাবিক হবে

বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন এক কোটি গ্রাহক

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৫ মে ২০১৯

বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন এক কোটি গ্রাহক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্বল ফণীর আঘাতে দেশের প্রায় এক কোটি গ্রাহক বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। দেশের মোট বিদ্যুত গ্রাহকের সংখ্যা তিন কোটি ৩০ লাখের মধ্যে এক কোটি গ্রাহক বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল। শনিবার দুপুরের পর থেকে বিদ্যুত বিতরণ একটু একটু করে স্বাভাবিক হয়। তবে সারাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আজ রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। যদিও ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি নয় বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে গাছ বা ডাল পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। এর বাইরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সব সমিতি মিলিয়ে ১২৯ খুঁটি পড়ে গেছে। আর পিডিবির পড়েছে ৮০ খুঁটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আজ সারাদিন লাগবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড শনিবার বিকেলে যে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন গ্রাহকের তালিকা তৈরি করে তাতে দেখা যায় ৮১ লাখ ৬ হাজার ৫০০ গ্রাহক বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল। আরইবির মোট গ্রাহক সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখের মতো। অর্থাৎ তাদের মোট গ্রাহকের অর্ধেক ছিল বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন। এছাড়া ঝড়ের কবলে পড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিদ্যুত বিতরণ করে থাকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। দেশের ২১ জেলার অধিকাংশ গ্রাহক এ সময় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল। এছাড়াও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে সারাদেশে তাদের বিতরণ এলাকায় ৮০ খুঁটি পড়ে গেছে। বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় সোয়া দুই লাখের কাছাকাছি। আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মঈন উদ্দিন শনিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, বিকেলেই সব মানুষ আমরা নামিয়ে দিয়েছি। আশা করছি তাদের মধ্যে পরিস্থিতি অনেক জায়গা স্বাভাবিক হবে। আর যেটা সম্ভব হবে না তা কালকের মধ্যে স্বাভাবিক করা হবে। আরইবি সূত্র বলছে, যেখানে আরইবির প্রতিদিন ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হয় সেখানে শনিবার বিকেলে সরবরাহ ছিল মাত্র এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বিভিন্ন সমিতির মোট তিন হাজার ৭২৬ ফিডারের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৩ ফিডার বন্ধ ছিল। আরইবির একজন কর্মকর্তা জানান, আরইবির বেশিরভাগ লাইন গ্রামের ভেতর দিয়ে। সব লাইনের ওপরই কিছু না কিছু গাছপালা আছে। ঝড় আসলে এসব গাছপালার ডাল ভেঙ্গে পড়ে। মানুষের যাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয় এজন্য আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরে দুর্যোগ চলে গেলে লাইনগুলো পুনঃপরীক্ষা করে আবার সরবরাহ শুরু করা হয়। এক্ষেত্রেও আমরা ধীরে ধীরে সব লাইন ঠিক করে বিদ্যুত সরবরাহর ব্যবস্থা করছি। ঝড়ের প্রকোপে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ওজোপাডিকোর বেশিরভাগ গ্রাহক শুক্রবার বিকেল থেকে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল। শনিবার সকালে ফণী খুলনা এলাকা দিয়ে অতিক্রম করার পর আবার বিদ্যুত বিতরণ স্বাভাবিক করে ওজোপাডিকো। সব শেষ তারা চরফ্যাশান এবং পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের সরবরাহ লাইনটি চালু করেছে। জানতে চাইলে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৗশলী মোঃ শফিক উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বিকেল নাগাদ সবগুলো ফিডার চালু করেছি। তবে ঝড়ের সময় মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই বিদ্যুত বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এছাড়া শুক্রবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে কিছু লাইন ট্রিপ করে যায়। যা দ্রুত সারিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গাতেই লাইনের ওপর তার পড়ে ছিড়ে গেছে। যেগুলো সারতে আমাদের সময় লেগেছে। এদিকে ঝড়ের কবলে পড়ে পিডিবির বিতরণ এলাকার ৮০টি খুঁটি পড়ে গেছে। পিডিবির জনসংযোগ পরিদফতরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী জানান, সোয়া দুই লাখের মতো গ্রাহক বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আশা করা হচ্ছে শনিবার রাত এবং রবিবার সকালের মধ্যে সকলের মধ্যে বিতরণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। ফণীর কারণে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল এবং ফেনীর পিডিবি গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিদ্যুত সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর কোন ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী বলেন, আমাদের কোন সাবস্টেশন বা কোন লাইনের কোন ক্ষতি হয়নি। বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের ত্রুটি সারিয়ে বিদ্যুত নিতে চাইলেই আমরা সরবরাহ করছি। প্রসঙ্গত গত কয়েকদিন ধরে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হলেও শুক্রবার দিনের বেলা ৭ হাজার ৭৯৮ মেগাওয়াট এবং রাতে আরও কমিয়ে ৭ হাজার ৫৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার দিনের বেলা আরও কমিয়ে ৪ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট আর রাতে সর্বোচ্চ ৭ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানি যতক্ষণ লাইনের ত্রুটে সারিয়ে তোলার ঘোষণা দেবে ততক্ষণ উৎপাদন সীমিত রাখা হবে বলে জানা গেছে।
×