ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ জেলায় ৮ জনের মৃত্যু ;###;উপকূলীয় জেলাগুলোতে হাজার হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত ;###;আশ্রয় কেন্দ্র থেকে লোকজনকে বাড়ি ফিরতে বলা হয়েছে

বিপদ কেটে গেছে ॥ গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে ফণীর বাংলাদেশ ভূখণ্ড অতিক্রম

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৫ মে ২০১৯

বিপদ কেটে গেছে ॥ গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে ফণীর বাংলাদেশ ভূখণ্ড অতিক্রম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিপদ কেটে গেছে। এটি শনিবার সকাল ৬টায় দেশের ভূখন্ডে ঢুকে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে রাতেই বাংলাদেশ ভূখন্ড অতিক্রম করে ভারতের অসম ও মেঘালয়ে চলে যায়। এর প্রভাবে আজও দেশের বিভিন্নস্থানে বৃষ্টিপাত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বিপদ সঙ্কেত ৭ নম্বর থেকে নামিয়ে দেশের সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে এখনও উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। তবে এর প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ঝড়োহওয়া ও বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে গাছপালা উপড়ে, ডাল ভেঙ্গে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে। কোন কোন এলাকায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজনকে বিকেল থেকেই বাড়িঘরে ফিরতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে ঘরচাপা পড়ে ৫ জেলায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ২ জন, বরগুনার পাথরঘাটায় ২ জন, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ এবং ভোলায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় আহত হয়েছে শতাধিক লোক। জনকণ্ঠের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ফণীর প্রভাবে খুলনায় ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে চার ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভোলায় ২ শতধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে অর্ধশত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। চাঁদপুরের চরাঞ্চলে শতাধিক বসতবাড়ি ও গাছপালা লন্ডভন্ড হয়েছে। পটুয়াখালীতে বাঁধ ভেঙ্গে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়া ‘ফণী’ শুক্রবার সকালে ভারতের ওড়িশা উপকূলে প্রায় ২শ’ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এত পর্যটননগরী পুরী ও তার আশপাশ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বহু গাছপাল বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী ঝড়ে ওড়িশায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এটি পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতায় আঘাত হানলে ভারি বৃষ্টিপাত ছাড়া কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এটি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে আঘাত করলে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ‘ফণী’ ওড়িশায় আঘাত হানার পরই এটি দুর্বল হতে থাকে। কিছু দুর্বল হয়ে শক্তি খুইয়ে ওইদিন পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হয়। শনিবার সকাল ৬টায় বাংলাদেশের উপকূলে এটি প্রবেশ করে সাধারণ ঝড়ের রূপ নিয়ে। আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, যখন ‘ফণী’ বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখন এর গতিবেগ ছিল মাত্র ৬২ কিলোমিটার। দমকা ও ঝড়োহাওয়াসহকারে এটি ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। এর পরেই এটি আরও দুর্বল হয়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এদিকে সকাল ৯টা নাগাদ এটি আরও শক্তি খুইয়ে দেশের মধ্যাঞ্চল ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ ও ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করে। এই সময় ঢাকায়সহ এসব এলকায় কিছুটা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়। এরপর শনিবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় থেকে আর দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে পাবনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এলাকায় অবস্থান করে। পরে এটি আরও উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে জামালপুর হয়ে দেশের ভূখন্ড অতিক্রম করে ভারতের অসম ও মেঘালয়ের দিকে চলে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এর প্রভাবে উত্তর ভারতের অসম-মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হবে। এ কারণে দেশের হাওড় অঞ্চলে পানি বেড়ে বন্য দেখা দিতে পারে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপে রূপ নিলেও আজও সারাদেশে বৃষ্টিপাত হবে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দেশের ভূখন্ডে আঘাত ॥ গত ২৬ এপ্রিল সাগরে জন্ম নেয়া লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড় ফণীতে পরিণত হয়। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এটি বহু পথ পাড়ি দিয়ে স্থলভাগে পৌঁছায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, প্রথমে এটি লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরে ক্রমান্বয়ে শক্তি বৃদ্ধি করে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীতে পরিণত হয়। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপকূলীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্যানেল থেকে বাছাই করে বাংলাদেশের দেয়া নাম ফণী থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নামকরণ করা হয়। এটি বহু পথ ও উপকূল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে এসে দুর্বল হয়ে পড়ে। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী প্রায় ২৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপকূলে পৌঁছায়। এই পথ পাড়ি দেয়ার সময় ক্ষণে ক্ষণে তার গতিপথ ও বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করেছে। প্রথমদিকে এটি ভারতে অন্ধ্র প্রদেশ ও তামিলনাড়ুর দিকে অগ্রসর হয়। তার আগে এটি শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন উপকূল পাড়ি দিয়ে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্ধ্রের কাছাকাছি এসে গতিপথ পরিবর্তন করে উড়িশা অভিমুখী হয়। বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি হওয়ায় আবহাওয়া অফিস থেকে দেশের সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৭ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করা হয়। বিশ্বের আবহাওয়াবিষয়ক কয়েকটি সংস্থার পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার রেকর্ড গড়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। গত দুই দশকে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা প্রবল ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে এই ফণী। জানা গেছে, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলা। বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে এরা যথাক্রমে ১৫০০ ও ৯০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল। আর ফণী ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়ার পর দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে শুক্রবার সকালে ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানে। এদিন রাত ১২টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির গতিমুখ ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দিকে। এ সময় সমুদ্রে প্রায় ২ হাজার ও ভূমিতে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। দেশের ইতিহাসে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণী অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও এটি যখন দেশের ভূখ-ে আঘাত হানে তখন এর গতিবেগ ছিল মাত্র ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। তবে এটি ওড়িশায় প্রায় ২শ’ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। পরে এটি দুর্বল হয়ে যায়। এর আগে দেশের ভূখ-ে প্রথম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে ১৯৭০ সালের ১২ নবেম্বর। এটি ওই সময় ২২৪ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রামে আঘাত হানে। এতে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। তবে এর চেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয় ১৯৯১ সালে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল। শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল এটি। ২২৫ কিলোমিটার বেগের ওই ঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১০ থেকে ২২ ফুট পর্যন্ত। ১৯৮৫ সালের উরিরচর ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৫৪ কিলোমিটার। নিকট অতীতে সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়টি আসে ২০০৭ সালে। যা সিডর নামে পরিচিত ছিল। এর ক্ষত এখনও উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, এটির তীব্রতা ছিল ২২৩ কিলোমিটার। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আইলায়। যা ২০০৯ সালে আঘাত করে। শক্তির বিবেচনায় এটি ছিল ফণীর চেয়েও দুর্বল। ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার ক্ষয়ক্ষতি- খুলনা ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণীর আতঙ্কে শুক্রবার বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে জেলার উপকূলীয় উপজেলার বাসিন্দা। ভোরে কয়রা, দাকোপ, পাইগাছা উপজেলা, বটিয়াঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হলেও কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাকোপের বানিশান্তা বাজার এলাকায় এবং কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া ও ঘাটাখালি এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। এদিকে শনিবার উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত থেকে খুলনার উপকূলীয় এলাকা রক্ষা পেলেও বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। বরগুনা ॥ পাথরঘাটায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঘরচাপা পড়ে দু’জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও দু’জন। মধ্যরাতের পর পাথরঘাটায় প্রচন্ড বেগে ঝড়োহাওয়া বইতে শুরু করে। রাত তিনটার দিকে উপজেলার দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামে ঝড়ে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে। এতে ঘরচাপা পড়ে নূরজাহান বেগম (৬০) নামের এক বৃদ্ধ ও জাহিদুল ইসলাম (৮) নামের এক শিশু নিহত হন। নিহত নুরজাহান ও জাহিদুল সম্পর্কে দাদি-নাতি। লক্ষ্মীপুর ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে লক্ষ্মীপুরে আনোয়ারা বেগম (৭০) নামে এক নারী নিহত হয়েছে। ঘরচাপা পড়ে আহত হয়েছে অন্তত ১৫জন। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক এবং প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। রামগতি উপজেলার পোড়াগাছা গ্রামে বেড়াতে যেয়ে মনোয়ারা বেগমকে ফণীর প্রচণ্ড বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায় এবং পরে মাটিতে পড়ে তিনি মারা যান। নিহতের স্বামীর বাড়ি একই উপজেলা চরআলগীতে। জেলা প্রশাসক অঞ্চন চন্দ্র পাল নিহতের খবরটি নিশ্চিত করেছেন। ফণীর তাণ্ডবে রামগতি এবং কমলনগরে দুটি স্কুল, ৭/৮টি পোল্ট্রি খামারসহ দু’শতাধিক ঘরবাড়ি পড়ে গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চরাঞ্চলসমূহে ৪-৫ ফুটের জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। ভোলা ॥ শুক্রবার রাতে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণীর তাণ্ডবে ৩ শতাধিক কাঁচা- পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রাম। তেঁতুলিয়া নদীর তীরের এই গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে এ সময় গাছচাপা পড়ে রানী বেগম (৫০) নামের এক গৃহবধূ নিহত হয়েছে। এছাড়াও জেলায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাঁধ ভেঙ্গে ৩ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ২ সহস্রধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন চর নিজামে শতাধিক গবাধিপশুর মৃত্যু হয়েছে । এছাড়াও তজুমদ্দিন উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। কলাপাড়া॥ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝড়ের সময় গাছের ডাল পড়ে গুরুতর জখম হাবিব মুসল্লি (৩৭) বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শুক্রবার মধ্যরাতে হাবিব মারা গেছেন। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে কলাপাড়ার পায়রা বন্দরসহ কুয়াকাটার উপকূলীয় এলাকায় সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ঝড়োহাওয়া ও বজ্র-বৃষ্টিতে বিপুলসংখ্যক গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। ফণীর তা-বে কলাপাড়ায় সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৪৬টি ঘর। চাঁদপুর ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে চাঁদপুরে ব্যাপক ঝড়োহাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। মেঘনা নদীর পশ্চিমপারে চরাঞ্চলে প্রায় শতাধিক বসতঘর ও গাছপালা ভেঙ্গে লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ছিন্নমূলদের বেশ কয়েকটি ঘর। তবে এই ঘটনায় কেউ হাতহত হয়নি। সাতক্ষীরা ॥ ফণীর প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫শ’৫২টি কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া জেলায় ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রায় ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের গাইনবাড়ি আশ্রয়কেন্দ্রে আয়নামতি বিবি (৯২) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের মৃত কওছার আলীর স্ত্রী। শুক্রবার মধ্যরাতে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। চট্টগ্রাম ॥ আবহাওয়া অধিদফতর বিপদ সঙ্কেত নামিয়ে নেয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করে। সচল হয় চট্টগ্রাম বন্দর। সন্ধ্যার মধ্যে অবস্থা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে নগরীর হালিশহর, সীতাকুন্ড এবং আনোয়ারার কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জানান, প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিপদ সঙ্কেত নামিয়ে ফেলায় শনিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) সচল হয়। বহির্নোঙ্গরেও পণ্য ওঠানামা শুরু হয়।
×