স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়ের শহর গ্রাম সর্বত্রই চলছে রমরমা ক্রিকেট জুয়া। আগে কেবল শহর এলাকায় ক্রিকেট জুয়ার বাজি ধরতে দেখা গেলেও এখন মহামারি আকারে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া যুবকসহ সব শ্রেণীপেশার মানুষ। এমনকি যারা নিরক্ষর তারাই বাজি ধরছেন আইপিএল, বিপিএল কিংবা যে কোন ক্রিকেট খেলায়। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরছেন জুয়ারিরা। এই ক্রিকেট জুয়ার নেশায় পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয় ডিলারদের ছত্রছায়ায় এই জুয়ার বাজি হয় মোবাইল ফোনে। ফলে এই জুয়া চক্র থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৪ সালের দিকে পঞ্চগড়ে প্রকাশ্যে আসে ক্রিকেট জুয়ার বিষয়টি। শুরুতে হাসি তামাশা দিয়ে শুরু হয় বাজি ধরা। এরপর তা ক্রমেই পেশাদার জুয়ায় রূপ নেয়। গত কয়েক বছরে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। ক্রিকেটপ্রেমী থেকে শুরু করে নিরক্ষর সব শ্রেণীর মানুষই এখন ক্রিকেট জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে।
পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলা সদর, বোদা, দেবীগঞ্জ, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম যেখানে ডিশের লাইন পৌঁছেছে সেখানেই এই জুয়ার দেখা মিলবে। আইপিএল, বিপিএলসহ যে কোন ক্রিকেট খেলা শুরু হলেই শহর গ্রাম কিংবা মোড়ের চায়ের দোকানে টিভিতে খেলা দেখার ধুম পড়ে যায়। এদের অধিকাংশ ভাল করে ক্রিকেট সম্পর্কে জানেই না। কেবল জানে চার, ছক্কা ও আউট। বাজি ধরতে ধরতে তারা ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে কিছুটা আয়ত্তও করেছে।
বর্তমানে ভারতে চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল)। আইপিএল মানেই ক্রিকেট জুয়ারিদের ভরা মৌসুম। খেলা শুরু হলেই টিভির সামনে দেখা যায় জুয়াড়িদের আনাগোনা। পঞ্চগড়ে ক্রিকেট জুয়ার সবচেয়ে বড় মার্কেট তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকা। স্থানীয়রা জানায়, প্রতি রাতে এই এলাকায় ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকার জুয়া চলে। ক্রিকেট জুয়ার পুরো ব্যবস্থায় থাকেন কয়েকজন বড় ডিলার। তারা দুই পক্ষের লোকজনের কাছে মোবাইলে অর্ডার নেয়। জুয়ায় বিজয়ীদের ঠিকমতো টাকাও পরিশোধ করে তারা। হাজারে ১০০ টাকা করে কমিশন নেয় এইসব ডিলার। এদের মধ্যে ভজনপুর এলাকার ছাত্রদল নেতা হাসিনুর রহমান লাবু, তার ছোট ভাই লিটন, ভজনপুর বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী রবি, পানের দোকানদার বাসেদ আলী, মুদি দোকানদার তসলিম উদ্দিন, মোটর পার্সের দোকানদার মাসুম, মোবাইলের দোকানদার সাজ্জাদ সাজু, নরসুন্দর দিলীপ, কলেজপাড়া এলাকার নিশাত ও পাথরঘাটা এলাকার আল আমিনের নাম উঠে এসেছে। জানা যায়, পর্দার পেছনে থেকে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এসব ডিলারদের কেউ কেউ এখন লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। অপরদিকে জুয়া খেলে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ভজনপুরের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী। জুয়ার নেশায় নগদ টাকা থেকে শুরু করে, বাড়ির আসবাবপত্র, স্ত্রীর গহনা পর্যন্ত দিয়ে বাজি ধরছে জুয়ারিরা। জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে তাদের পরিবারের লোকজনও বিপাকে পড়েছেন। অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে পরিবারে। পুরো এলাকার মানুষের কাছে এখন জুয়া এক সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। ভজনপুরের মোবাইল দোকানদার সাজ্জাদ সাজু বলেন, আমি ক্রিকেট খেলা খুব পছন্দ করি। হঠাৎ কিভাবে যে জুয়ায় মজে গেলাম বুঝতেই পারিনি। শুরুতে ৫০০ টাকা দিয়ে খেলা শুরু করি। একটা সময় এক দিনেই বাজি ধরেছিলাম ৪ লাখ টাকা। আমি ছোট থেকে ব্যবসা করে যে টাকা উপার্জন করেছিলাম তা এই জুয়ায় হারিয়েছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: