ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ৫ মে ২০১৯

চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করাচ্ছে পুলিশের মেয়ে। থানা ও পরিবেশ অফিসের সঙ্গে প্রতারণা করেই অনুমতি আদায় করেছে। এদিকে অপরাধ বন্ধে পুলিশের মোবাইল এ্যাপস ‘৯৯৯’ এখন আর সেবা দিতে নারাজ। ফলে রাতের আঁধারে পাহাড়কাটার অপরাধ ঘটলেও পুলিশ কিছুই বলছে না। ফলে অপরাধী চক্র চাঙ্গা অবস্থানে। গত মঙ্গলবার রাতে ‘৯৯৯’ থেকে বলা হয়েছে ‘৩৩৩’ এ পুলিশের ডিসি বা থানার ওসিকে জানাতে বলা হচ্ছে। তবে এতে পরিচয় গোপন থাকবে না। ‘৯৯৯’ থেকে বলা হচ্ছে শুধু অগ্নিনির্বাপণ, এ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্য সেবা ছাড়া আর কোন সেবা পাওয়া যাবে না। সরকার সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে বিভিন্ন সেবা দেয়ার চেষ্টা করলেও স্বার্থান্বেষী পুলিশের একটি চক্র সরকারের এই সেবাকে কুলষিত করছে অর্থ লাভের আশায়। গত মঙ্গলবার রাত থেকে আমেরিকা প্রবাসী পুলিশের এক সাবেক ড্রাইভারের মেয়ের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার আকবরশাহ থানাধীন আকবরশাহ মাজারের পাহাড় কেটে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের মতো ঘটনা ঘটছে। রাতের আঁধারেই পাহাড় কাটার এমন চিত্র তুলতে গিয়ে সকালে প্রতিবেদককেও হয়রানি করেছে এই নারী। তবে সাবেক পুলিশের এই মেয়ে জনৈক চুমকী পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে এই পাহাড় কাটছে এমন প্রতারণার ফাঁদে প্রচার চালিয়েছে এলাকায়। যা পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (মেট্রো) আজাদুর রহমান মল্লিক বলেছেন, ওই নারী প্রতারণা করেই রাস্তা সংস্কারের নামে একটি আদেশ নিয়েছেন। যাতে পরিষ্কারভাবে লেখা রয়েছে পাহাড় কাটা বা পরিচর্যা নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে, আকবরশাহ থানার ওসি জসিম উদ্দিনও পরিবেশ অধিদফরের কাগজের দোহাই দিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি। এমনকি কাজ বন্ধে কোন পদক্ষেপও নেননি। অথচ ওই কাগজে পাহাড়কাটা বা ছাঁটা নিষিদ্ধ করে রাস্তা সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। পুলিশের সাপোর্ট পেয়ে ভূমিদস্যু চক্র দাপটের সঙ্গে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার পর থেকে মাঝখানে একদিন বৃহস্পতিবার ছাড়া শনিবার পর্যন্ত টানা চার দিনের বন্ধের পর শুরু হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পুলিশের মেয়ে চুমকী দাপুটের সঙ্গে পাহাড় কেটে দেয়াল নির্মাণ করে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে শ্রমিক সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কাজের টার্গেট নিয়ে রাস্তা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে আসছিল। বিষয়টি ছুটির ফাঁদে মাজারের পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা। কারণ পরিবেশ অধিদফতর ও আকবরশাহ থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার উদ্যোগ নিয়েছে চক্রটি। এদিকে, সংবাদকর্মীর পক্ষ থেকে পাহাড় কাটা বন্ধে বিষয়টি পুলিশের ‘৯৯৯’ এ্যাপসের সহায়তা নেয়ার চেষ্টা করা হলে, মঙ্গলবার রাত ১০টা ০৩ মিনিটের সময় পুলিশের অপরপ্রান্তের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ‘অনুগ্রহপূর্বক লাইনে থাকুন’ কোথাও একটু কথা বলে জানালেন, ‘আপনি ‘৩৩৩’ এ পুলিশের ডিসির নাম্বার পাবেন’ এতে প্রতিবেদক অনীহা প্রকাশ করলে তিনি আবার বলেন, আপনার নাম ও ঠিকানা বলুন, ‘আপনি ওসির সাহায্য নিতে পারেন’। পুলিশ বিষয়টি জানে এমন তথ্য দেয়া হলে বলা হয় ‘এ ধরনের সুবিধা দেয়া হয় না ‘৯৯৯’ থেকে। শুধু অগ্নিনির্বাপণ, এ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সুবিধাদি দেয়া হয় এই ‘৯৯৯’ এ্যাপস থেকে। এভাবে কেটে গেল ৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ড। এরপর ‘৯৯৯’ এর পরামর্শ অনুযায়ী আকবরশাহ থানার ওসি জসিম উদ্দিনকে জানানো হলে মঙ্গলবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদফতর থেকে একটা অনুমতি দেয়া হয়েছে। যা আমাকে দেয়া হয়েছে। আমার কিছুই করার নেই। পরিবেশের অফিসের সঙ্গে প্রতিবেদককে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন ওসি। বুধবার সকালে প্রতিবেদক ঘটনাস্থলের ছবি তোলায় ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের মেয়ে চুমকী বলেন, কেন পাহাড় কাটার ছবি তোলা হলো। এই রাস্তা আমি কিনেছি কাজও করাচ্ছি। পরিবেশ অফিসের অনুমতি নিয়ে আমি পাহাড় কেটে রাস্তা বানাচ্ছি। কেউ কিছুই করতে পারবে না। প্রতিবেদককেও দেখে নেয়ার হুমকি দিলেন পুলিশের এই মেয়ে। পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (মেট্রো) আজাদুর রহমান মল্লিক বলেছেন, পরিবেশ অধিদফতর পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দেয়নি। রাস্তা নির্মাণের কাজ পরিবেশের নয়। সিটি কর্পোরেশন বা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাস্তার কাজ করে। তবে ওই মহিলা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে কারণ, আবেদনকারী প্রবাসে থাকেন তা আমরা জানতাম না। যে অনুমতির কথা বলছে মূলত সেখানে লেখা রয়েছে, পাহাড় কর্তন বা মোচন না করে রাস্তা সংস্কার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে গত ২৮ এপ্রিল।
×