ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লাস করতে হয় ভয়ে ভয়ে

তাড়াশে ৫০ স্কুলভবন ঝুঁকিপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৫ মে ২০১৯

তাড়াশে ৫০ স্কুলভবন ঝুঁকিপূর্ণ

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে ভয়ে ভয়ে। কখন মাথার ওপর ভেঙ্গে পড়বে ছাদ কিংবা ছাদের প্লাস্টার সেই আতঙ্ক নিয়েই প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষেই ক্লাস করতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষক অভিভাবক সবাই থাকেন আতঙ্কে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার চৌড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন দশা। সিরাজগঞ্জ জেলায় এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা একশ’ তিয়াত্তর। ১৯২৬ সালে তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের চৌড়া গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এরপর কেটে গেছে ৭০ বছর। ১৯৯৬ সালে এসে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন নির্মাণ করে দেয় সরকার। বিদ্যালয়টির পাকা ভবনের তিনটি শ্রেণীকক্ষ এবং একটি শিক্ষকদের অফিস কক্ষ। ভবনের দেয়ালজুড়ে বড় বড় ফাটল, আবার কোথাও কোথাও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ায় বেরিয়ে এসেছে মূল কাঠামোর রড। বর্ষায় ফাটল দিয়ে পানি চুয়ে পড়ে শ্রেণীকক্ষে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষেই ক্লাস করতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ভবনটি নির্মাণের পর নতুন করে কোন সংস্কার না হওয়ায় দেয়াল জুড়ে ফাটল ও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীকক্ষে আমাদের ক্লাস করতে হয় ভয়ে ভয়ে। আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান জানায়, ক্লাস চলাকালে অনেকবার ছাদের প্লাস্টার খসে পড়েছে। অনেকের শরীরে ছোট খাটো জখমও আছে। অভিভাবক ফজলুল হক জানান, আমার মেয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। কিন্তু বিদ্যালয়টির কক্ষগুলোর যে অবস্থা আমরা তাতে চিন্তায় থাকি। এ ছাড়াও বিদ্যালয়টি যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। আর এতে বড় দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ১৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০টি বিদ্যালয়ই বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে ১৪টি। এসব বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের ছাদ ও বারান্দায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাড়াশ উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের মধ্য উপজেলার চৌড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাদোসৈয়দপুর মধ্যপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুন্দইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুয়ারাখী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানীরহাট চককলামুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর-হামকুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিরল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিলট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুল্টা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিঘরিয়া-১ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চকরুসুলাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকুশাবাড়ি-২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালুপাড়া-বাঁশবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁটাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ভবন না করা হলে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুর মধ্যপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, স্কুলের ভবনটি অনেক পুরনো হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের মধ্য ক্লাস করতে হয়। ভবনের দেয়ালে সামান্য একটি পেরেক লাগাতে লাগলেও প্লাস্টার খসে পড়ে। চৌড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল করিম জানান, বিদ্যালয়টির ভবনের বয়স প্রায় ২৫ বছর হওয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া সে সময়ে ভবন নির্মাণের সময় অনিয়ম ছিল বলে টেকসই হয়নি। বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে কয়েক বছর গেলেও এখনও আমরা নতুন ভবন পাইনি। ঝড়ের সময় আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভবনের বাইরে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীক মোহাম্মাদ ইউসুফ রেজা চৌড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের একটি জরাজীর্ণ স্বীকার করে জনকণ্ঠকে জানান জেলায় একশ ৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন জরাজীর্ণ। তিনি আরও জানান কোথাও দুটি ভবনের একটি ভবন জরাজীর্ণ। আবার কোথাও তিনটির একটি। তবে এগুলো সংস্কার করার জন্য উপজেলা পর্যায় থেকে এবং জেলা কার্যালয় থেকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
×