ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৯০ শতাংশের বেশি পরিবহন শ্রমিকের সাপ্তাহিক ছুটি নেই

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ৫ মে ২০১৯

৯০ শতাংশের বেশি পরিবহন শ্রমিকের সাপ্তাহিক ছুটি নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন প্রকার ছুটি ছাড়াই কাজ করতে হয় পরিবহন শ্রমিকদের। দেশের ৯০ শতাংশের বেশি পরিবহন শ্রমিক সাপ্তাহিক ছুটি পান না। ৯৮ ভাগ শ্রমিক সরকারী ছুটির দিনেও কাজ করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আইএলও কনভেনশন-১-এর শতবর্ষ পূর্তি এবং বাংলাদেশে কর্মঘণ্টার বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। বিলসের তথ্য বিভাগের উপপরিচালক ইউসুফ আল মামুন জানান, নিরাপত্তাকর্মী, পরিবহন খাত, হোটেল-রেস্তরাঁ, রি-রোলিং মিল ও হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ পাঁচটি প্রচলিত বেসরকারী খাতের শ্রমিকদের ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৫০ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ২০ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক কোন কর্মবিরতি ছাড়াই কাজ করেন। ৯০ শতাংশের বেশি পরিবহন শ্রমিকের সাপ্তাহিক ছুটি নেই। ৯৮ শতাংশ শ্রমিক সরকারী ছুটির দিনেও কাজ করেন। দূরপাল্লার পরিবহন চালকরা যেন ৫ ঘণ্টার বেশি একটানা গাড়ি না চালান, তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার প্রতিফলন পাওয়া যায়নি বিলসের গবেষণা প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক-চতুর্থাংশ নিরাপত্তাকর্মী দৈনিক ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ৫০ শতাংশ কর্মী কোন কর্মবিরতি পান না। প্রায় ৬৬ শতাংশ নিরাপত্তাকর্মীর সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারিত নেই। সরকারী ছুটির দিনে কাজ করেন ৮৬ শতাংশ কর্মী। বিলসের প্রতিবেদন বলছে, হোটেল ও রেস্তরাঁয় কাজ করা প্রায় ৯৮ শতাংশ শ্রমিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। প্রায় ১৪ শতাংশ শ্রমিক ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। কর্মবিরতি ছাড়া কাজ করেন ২৬ শতাংশ শ্রমিক। ৮০ শতাংশের বেশি শ্রমিকের কোন সাপ্তাহিক ছুটি নেই। রি-রোলিং খাতে ৯২ শতাংশ শ্রমিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। প্রায় ১৬ শতাংশ দৈনিক ১৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করেন। ৯৬ শতাংশ শ্রমিককে দৈনিক একাধিক শিফটে কাজ করতে দেখা যায়। এছাড়াও ৪৪ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক গড়ে দুটি কারখানায় কাজ করেন। রি-রোলিং খাতের এক-তৃতীয়াংশের বেশি শ্রমিককে দৈনিক গড়ে তিনটি কারখানায় কাজ করতে দেখা গেছে বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিলসের মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আইএলও’র সদস্য হলেও এতদিনেও আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়ন করছে না। শ্রম আইন থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে কাজ করার পরামর্শ দেন এই রাজনৈতিক নেতা। বিলসের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের মহাপরিচালক শিবনাথ রায় বলেন, দেশে পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনের সব ধারা আমরা পরিপূর্ণ করতে পারিনি। শ্রমিকদের বেশি কাজ করালে তার জন্য ন্যায্য মজুরি পরিশোধ করতে হবে। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক জাকির হোসেন, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এ কে এম নাসিম, বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান শুক্কুর মাহমুদ, ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন প্রমুখ।
×