ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মতিলাল দেব রায়

নিরাপদ সড়ক নিয়ে কিছু কথা

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ৫ মে ২০১৯

নিরাপদ সড়ক নিয়ে কিছু কথা

কাগজপত্রবিহীন বা রেজিস্ট্রেশনবিহীন বাস, ট্রাক, টেম্পো, মিনিবাস, বেবিট্যাক্সি, কার ইত্যাদি নামের দানবগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এদের কিছু হচ্ছে না। এদেরকে নতুন নতুন আইন করে সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এরা আটক হয় না। আইনের আওতায়ও আসে না। রেজিস্ট্রেশনহীন যানবাহন এবং লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদের জনসাধারণের রাস্তায় নামার কোন অধিকার নেই। এদের কাছ থেকে রাস্তাকে নিরাপদ করা সময়ের দাবি। কারণ, এরাই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, এরাই সড়কের ঘাতক। সড়ক দুর্ঘটনায় সুন্দর পৃথিবী থেকে চিরতরে যারা বিদায় নিয়েছেন সেই পরিবারের সদস্যরা যে কি পরিমাণ মর্ম যাতনায় দিন যাপন করেন তা নিজের পরিবারে ঘটলে উপলব্ধি করতে পারবেন। যে কোন সময় দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ এদের দ্বারা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যেতে পারেন, তাই কালবিলম্ব না করে এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজে বাঁচুন এবং সকলকে বাঁচতে সহায়তা করুন। সড়কে কি পরিমাণ বিশৃঙ্খলা স্বেচ্ছাচারিতা, অরাজকতা চলছে তা শুধু দেশের প্রত্যন্ত একটি হাওড় বেষ্টিত অবহেলিত জেলা শহরের একটি পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। এখানে বিআরটিএ নামক সরকারী কর্তৃপক্ষের কোন অস্তিত্ব আছে কি-না। সুনামগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা সূত্র থেকে জানা যায়- জেলায় চলাচলকারী লেগুনা ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। বিআরটিএর সূত্র থেকে আরও জানা যায় যে, এই ৬ হাজার যানবাহনের বিপরীতে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে মাত্র ২৫৮১টির। অর্থাৎ ৬০ ভাগ লেগুনা ও অটোরিক্সা সড়কে চলছে কোনরূপ বিধিবদ্ধ অনুমতি ও অনুমোদন ছাড়া। অথচ এই বিপুলসংখ্যক যানবাহনের একটিও ধরা পড়ছে না। এই ৬ হাজার লেগুনা অটোরিক্সা চালাচ্ছে ৬ হাজার চালক। কিন্তু সুনামগঞ্জ বিআরটিএর তথ্যমতে, লেগুনা-অটোরিক্স ইত্যাদি যানবাহন চালকের লাইসেন্স সংখ্যা মাত্র ১৮১৮টি। বাকি যানবাহনগুলোর লাইসেন্স নেই, এরা লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে গাড়ি চালায়। যাত্রী সাধারণ এদের কাছে কতদূর নিরাপদ ইত্যাদি বিষয়গুলো কি কেউ বিবেচনায় নিয়ে ভেবে দেখেছেন। এই অবৈধ যানবাহন ও অবৈধ চালকের বেপরোয়া গাড়ি চলানোর কারণে নিরীহ সহজ সরল মানুষের মহামূল্যবান জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে তার দায়ভার কে বহন করবে- বিআরটিএর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা না সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমিতি, না যানবাহন মালিক সমিতি, না চালক সমিতি, না ট্রাফিক পুলিশ, না স্থানীয় প্রশাসন, না যোগাযোগ মন্ত্রণালয়!? যান বাহন নিয়ন্ত্রণ, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তা এতদিনের আপনাদের কাজের ফলাফল যদি এই হয়Ñ তা হলে আপনারাই বলুন, আপনারা কি সঠিক দায়িত্ব পালন করছেন নাকি আপনাদের গাফিলতির কারণে পরিবহন সেক্টরে এত বিশৃঙ্খলা ও জঞ্জালের সৃষ্টি হয়েছে যার ক্ষতিকর প্রভাব দেশের মানুষ বহন করছে। বিআরটিএ তে যারা কাজ করেন তারা যদি নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা দিতে না পারেন দয়া করে এ দায়িত্ব ছেড়ে দিন এবং যারা এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তাদের সুযোগ করে দিন যাতে করে তারা এ দায়িত্ব পালন করতে পারে। কারও জন্য দেশের উন্নতি থেমে থাকবে না, এই সমস্যার সমাধান অবশ্যই হবে। যারা নিরাপদ সড়কের জন্য বাধা তারা এ থেকে কেটে পড়ুন। যাত্রী সাধারণকে সড়কে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হলে নিজেদের কিছু নিয়ম মানতে হবে, না হলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। সব সময় রাস্তার বাম পাশে হাঁটুন, রাস্তা ক্রস করবেন জেব্রা ক্রসিং লেখার ওপর দিয়ে অথবা ওভারব্রিজ দিয়ে, রাস্তার নিয়ম সবার মানা নাগরিক দায়িত্ব। যদি ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন, প্রশাসন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সড়ক নিরাপত্তা দিতে না পারে তবে দেশের যুব সম্প্রদায় কিন্তু এবার আর বসে থাকবে না তারা দেশের আনাচে-কানাচে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে তুলবে এবং প্রতিদিন এলাকাভিত্তিক বাস স্টপেজে বসে যাত্রী সাধারণকে ড্রাইভারের লাইসেন্স এবং গাড়ির রেজিস্ট্রেশন আছে কি-না তা পরীক্ষা করে যাত্রীদের বলে দেবে কোন্ গাড়ির ড্রাইভারেব লাইসেন্স আছে আর কোন্ গাড়ির নেই। যাত্রীগণ নিরাপদ ভ্রমণ করতে চাইলে নিরাপদ গাড়িতে উঠবেন। এ ব্যাপারে জনসাধারণকে আরও সচেতন করতে হবে। এ কার্যক্রম প্রথমে ঢাকা শহরে শুরু করতে হবে এবং আস্তে আস্তে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশের সকল যুব সম্প্রদায়, ছাত্র-ছাত্রীরা এই কাজে আংশগ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে বাঁচান এবং ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকেন। প্রতি জেলা শহরে যে সকল বাস, ট্রাক টেম্পো ট্যাক্সির মালিককে খুঁজে বের করে তাদের অনুরোধ করবেন তারা যেন লাইসেন্সবিহীন চালককে গাড়ি না দেন, তারা যদি লাইসেন্সহীন ড্রাইভারের হাতে গাড়ি হস্তান্তর না করেন তা হলে চালক গাড়ি কোথায় পাবে। এতদিন ধরে এত মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে- মালিকরা দেখেশুনে চুপ করে বসে আছেন এবং মুনাফার কথাই চিন্তা করছেন। দুর্ঘটনা ঘটলে সবাইকে দোষ দেয়া হয় কিন্তু মালিককে কিছুই বলা হয় না। এখন থেকে দুর্ঘটনা ঘটলে যদি কাগজপত্রহীন কোন গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটায় তা হলে প্রথমেই মালিককে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে কোন আপোস করলে এ অবস্থার কোন উন্নতি হবে না। গাড়ির মালিক যতই প্রভাবশালী হোন না কেন তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। মালিকপক্ষকে যা করতে হবে মালিকপক্ষকে এখন থেকে সকল গাড়িচালকের জন্য আলদা ফাইল তৈরি করে তা যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে। সকল চালককে এখন থেকে আইডি কার্ড দিতে হবে এবং ভোটার আইডি সঙ্গে রাখতে হবে যাতে করে সরকারী কর্তৃপক্ষ চাহিবা মাত্র যেন দেখাতে পারেন। শুধু সরকারের ওপর দোষ চাপালেই হবে না, মুনাফা নেবেন আপনি, রাস্তায় মানুষ মারবে আপনার ফিটনেস এবং লাইসেন্সবিহীন চালক-এর কোন ফাইল রাখবেন না, তা হয় না। জনগণকে সাময়িক বোকা বানাতে পারবেন, কিন্তু চিরদিন এদেরকে দাবিয়ে মুনাফা লাভ করতে পারবেন না। দেশের সরকারের এমন কোন পর্যায় বাকি নেই যে, সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলেননি কিন্তু আজ পর্যন্ত বাস, ট্রাক মালিক এ ব্যাপারে কেন কোন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসছেন না। যতদূর জানা যায় গাড়ির মালিক, বাসের মালিক, ট্রাকের মালিক সমাজে তারা খুবই প্রভাবশালী তাই দেশের সড়ককে নিরাপদ করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেশের তথা সমাজের উন্নয়নে আপনিও অংশীদার হোন, আপনার আমার সবার নাগরিক দায়িত্ব।
×