ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ফণী’ মোকাবেলায়-

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৫ মে ২০১৯

‘ফণী’ মোকাবেলায়-

প্রকৃতির ওপর মানুষের হাত নেই, তবে এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সচেষ্ট হবার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সেই সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করেছে। ফণী নামের ভয়াল ও বিপুল আকারের ঘূর্ণিঝড় ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে- এমন আশঙ্কায় বেশ আগে থেকেই সচেতনতা ও সতর্কতা লক্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকলেও প্রয়োজনীয় সব নির্দেশ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি সমন্বিতভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সময়মতো সারাদেশে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ক্ষতি কমিয়ে আনতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাদ জুমা মসজিদসমূহে দোয়ার আহ্বান জানান। সেনাবাহিনীকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। প্রস্তুত রাখা হয় নৌবাহিনীর ৩২টি জাহাজ। সব মিলিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতিই বলা যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন ঘূর্ণিঝড়ের যাত্রাপথ, তার গতি, সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে আগেভাগে জানা যাচ্ছে। ‘ফণী’ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে বেশ কিছু প্রস্তুতি নেয়া হয়। সদরঘাট টার্মিনালসহ সারাদেশের ৪১টি রুটের যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ ঘোষণা এর অন্যতম। উপকূলের ১৯ জেলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এই জেলাগুলোতে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে এবং ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে সেখানে প্রস্তুত রাখা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন (এএফডি), ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলে। মন্ত্রণালয়ের বিশেষ রেডিওর পক্ষ থেকে নিয়মিত বার্তা গেছে। সেখান থেকে সাবধান হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সওজ, এলজিইডিসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থাকে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়ার বিষয়টি দেশবাসীর জানা। স্মরণযোগ্য যে, ১৯৭০ সালের ১৩ নবেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে সেটি ছিল ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি। ওই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এরপর ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়েও ১ লাখ ৩৮ হাজারের মতো প্রাণহানি ঘটেছিল। সেই আমলে আগেভাগে ঘূর্ণিঝড় আসার খবর যেমন মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি, তেমনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও উপকূল থেকে মানুষজনকে সরিয়ে আনার কার্যক্রমও তেমন জোরদার ছিল না। আশার কথা হচ্ছে, সেই সীমাবদ্ধতা থেকে এখন বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কবল থেকে নিরাপত্তার লক্ষ্যে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলাগুলোর ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়। এটি দারুণ সাফল্য। ফণীর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছিল। এ সময় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এলাকা ভিত্তিতে ওই প্রচারণার কাজটি করে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছিল কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। শনিবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ভেতরেও দেশের মানুষের আস্থাশীল থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ফণী কি আকারে তার ফণা তুলবে, কতটা ছোবল হানবে-সেটি ছিল অনিশ্চিত। যদিও পরে ফণীর বিদায়ে মানুষ স্বস্তি লাভ করেছে। সমুদ্রেসৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় এবারই প্রথম প্রস্তুতির ব্যাপকতা লক্ষ্য করা গেছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা যে বহুলাংশে বেড়েছে এটি তারই প্রমাণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল এই সময়েও অনুভব করা গেছে। দুর্যোগ আসবে। সেটি রুখে দেয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু জানমালের ক্ষতি রোধে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও প্রস্তুতি যে সন্তোষজনক তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×