ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নব্য জেএমবি ডন আবু আল বাঙালীই নতুন হামলার ছক কষছে!

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৪ মে ২০১৯

 নব্য জেএমবি ডন আবু আল বাঙালীই নতুন হামলার ছক কষছে!

শংকর কুমার দে ॥ নব্য জেএমবি জঙ্গী গোষ্ঠীর শীর্ষ জঙ্গী পরিচিত কে এই ডন? ডনের নামই কি আইএসপন্থী জঙ্গী নেতা আবু মুহাম্মদ আল বাঙালী? এই ডনই আইএস জঙ্গী আবু মুহাম্মদ আল বাঙালী সেজে নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলার জঙ্গী আস্তানায় দুই জঙ্গী আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনার তদন্তে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। আইএসের হয়ে সাইট ইন্টেলিজেন্স নামে হামলার যে দায় স্বীকার করা হচ্ছে তারাই বা কে, কারা? কোথা থেকে এই ধরনের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভয়ভীতি, আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তাও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছে তদন্ত সংস্থা। বসিলায় যে দুই জঙ্গী আত্মঘাতী হয়েছে সেই সুজন ও সুমনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। আত্মঘাতী এই দুই জঙ্গীর পরিচয় উদঘাটনে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, বাংলাদেশে কোন আইএস জঙ্গী নেই এটা প্রায় নিশ্চিত। কারা আইএসের নাম ব্যবহার করে দায় স্বীকারের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। ভয়ভীতি, আতঙ্ক, উদ্বেগ ছড়ানোর উদ্দেশে আইএসের নাম ব্যবহার করছে দেশী জঙ্গীরাই। আইএসের নাম যারাই ব্যবহার করুক না কেন, আজ হোক কাল হোক তারা ধরা পড়বেই। তবে আত্মঘাতী দুই জঙ্গীর পরিচয় পাওয়া যায়নি এবং যাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে তাদের জঙ্গী সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে ডন নামে একজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। আইএসপন্থী নব্য জেএমবির আবু মুহাম্মদ আল বাঙালী দাবিদারই ডন নামের ব্যক্তি কিনা তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তবে আইএসপন্থী কিছু জঙ্গী নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করছে এমনটাই আলামত পাওয়া যাচ্ছে। বসিলায় জঙ্গী আস্তানায় দুই জঙ্গী আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় ইঙ্গিত দেয় দেশের গোপন ডেরায় আরও জঙ্গী লুকিয়ে রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ জঙ্গী হামলার প্রায় পাঁচদিন পর বসিলার জঙ্গী আস্তানায় দুই জঙ্গীর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একই দিনে রাজধানীর গুলিস্তানে ট্রাফিক পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের ঘটনার পর আইএসের দায় স্বীকার করার ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে মূলত : ভয়ভীতি, আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়ানোর উদ্দেশে। এ কারণেই বাংলাদেশে জঙ্গীদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ কী জঙ্গী হামলার ঝুঁকিতে? জঙ্গীরা কি নতুন করে কোন হামলার ছক কষছে? তবে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের দায় স্বীকারের ঘটনাগুলো জঙ্গীদের প্রোপাগা-া। চ্যানেলগুলো থেকেও হুমকি সংবলিত বিভিন্ন বার্তা বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গুলিস্তানে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে বলেছেন, বৈশ্বিক যে উগ্রবাদের প্রভাব আছে সারাবিশ্বে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য, কোন নৈরাজ্য উগ্রবাদ দমানোর জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে জঙ্গীদের সংঘবদ্ধ বা বড় ধরনের নাশকতা ঘটনার ক্ষমতা নেই। ’১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর তাদের বিধ্বস্ত করা হয়েছে। কখনও কখনও তারা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটনোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে, সেগুলো আমরা নজরদারিতে রাখছি। ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রীলঙ্কার জঙ্গী হামলার পর দেশের জঙ্গীরা অনেক বেশি তৎপর। তারা নতুন করে কিছু হুমকি সংবলিত বিভিন্ন রকমের বার্তা পোস্ট করে জনমনে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সম্প্রতি জঙ্গীদের প্রোপাগান্ডা চ্যানেল আল মুরসালাত মিডিয়া থেকে ‘শীঘ্রই আসছে, ইনশাল্লাহ’ লেখা একটি পোস্টার নিয়ে হইচই শুরু হয়। তবে এটি জঙ্গীদের একটি ভিডিও ‘নাশীদ’ প্রকাশের পোস্টার ছিল বলে জানিয়েছেন নিয়মিত জঙ্গীবাদ পর্যবেক্ষণ করেন এমন ব্যক্তিরা। কিন্তু এই ঘটনার তিন দিনের মাথায়, গুলিস্তানে তিন পুলিশ সদস্যকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় মোটরবাইকে থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। পুলিশের বিশেষজ্ঞরা বোমাটিকে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি বলে মনে করছেন। ওদিন সকালেই মোহাম্মদপুরের বসিলায় জঙ্গী আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানের সময় দুই জঙ্গী আত্মঘাতী হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে দুটি পিস্তল ও চারটি আইইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গীরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে, ছক কষছে হামলার। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গীদের প্রোপাগান্ডা চ্যানেলে গত কিছুদিন ধরেই তারা এমন কিছু উপকরণ পাচ্ছেন, যাতে মনে হচ্ছে জঙ্গীরা আবার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি দুনিয়াজুড়ে যে ‘লোন উলফ’ বা লিডারলেস জিহাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে, সে সম্পর্কিত একটি অনলাইন ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে, যাতে কৌশল ও টার্গেট উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গত কয়েকদিনে হুমকি সংবলিত কয়েকটি বার্তাকেও তারা একেবারে উড়িয়ে দিতে চাইছেন না। এজন্য ঢাকাসহ সারাদেশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর উপাসনালয়ের সামনেও পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি আল মুরসালাত মিডিয়া থেকে বাংলা, ইংরেজী ও হিন্দী ভাষায় একটি বার্তা প্রকাশ করা হয় আবু মুহাম্মদ আল বাঙালী নামে, যাকে ‘বাংলার খালিফা’ বা আমীর ঘোষণা করা হয়েছে কয়েক মাস আগেই। ওই বার্তায় বাংলাদেশ ও ভারতের ‘তাগুত’ (জঙ্গীদের ভাষায় পুলিশ) বাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা। আবু মুহাম্মদ আল বাঙালীর নাম তারা এর আগেও শুনেছেন। তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। আর যেভাবে একের পর এক হুমকির কথা বলা হচ্ছে, সে রকম শক্তি বা সামর্থ্য এখন বাংলাদেশের কোন জঙ্গী সংগঠনের নেই। এমনকি হামলার জন্য যেসব রসদ বা বিস্ফোরক প্রয়োজন সেসব সংগ্রহ করাও তাদের পক্ষে এখন কঠিন। তবে পাকিস্তানের মাসুদ আজহারকে জাতিসংঘ থেকে ইন্টারন্যাশনাল টেররিস্ট ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় একটা বড় ঘটনা ঘটল। আমরা তো একই বলয়ের ভেতরে। আর বাংলাদেশে এ ধরনের সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কর্মকান্ড তো নতুন নয়, প্রায় দুই-তিন দশক ধরে হচ্ছে। বসিলায় সেদিন অপারেশন হলো, গুলিস্তানের ঘটনায় ব্যবহৃত বোমাটি আইইডি। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, তারা (জঙ্গী) চেষ্টা করছে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোন হুমকি উড়িয়ে না দিয়ে সতর্ক থেকে নজরদারি বাড়িয়ে জঙ্গীবিরোধী জিরো টলারেন্স অব্যাহত আছে বলে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×