ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪ হাজার ৭১ সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত ॥ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

উপকূলীয় এলাকার ১২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

প্রকাশিত: ১০:১২, ৪ মে ২০১৯

  উপকূলীয় এলাকার ১২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফণীর আঘাত মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ সকল মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৬টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এক বৈঠকের পর জানায়- উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর আগে বিকেলেই আবহাওয়া অধিদফতর এক সংবাদ সম্মেলনে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল দিয়ে ফণী অতিক্রমের খবর জানায়; যদিও সকালেই হওয়ার কথা। ওড়িশায় আঘাত হানার পর বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ফণীর গতিবেগ কমে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার হওয়ার কথা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার বলেন, দেশের ১৯ জেলার ১৪৭ উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; সেখানে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এই ১৯ জেলায় চার হাজার ৭১ আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব এলাকা থেকে অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর ২১ থেকে ২৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার কথাও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, মানুষের কোন ক্ষতি হতে দেব না এজন্য ৪ হাজার ৭১ আশ্রয়কেন্দ্র পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন। সাত হাজার আশ্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজন, চার হাজার ৭১ প্রস্তুত করেছি। জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র করার জন্য। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে, সেখানে মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে অন্যরাও এ কাজে অংশ নিচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সন্ধ্যার আগে সমস্ত লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে, একটি লোককেও রেখে আসা হবে না। এনামুর বলেন, মানুষের পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব গবাদিপশুও সরিয়ে আনতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলার প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে ২০০ টন করে চাল এবং দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে, একটি পরিবার এক প্যাকেট শুকনো খাবার সাত দিন খেতে পারবে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা করে ডিসিদের দেয়া আছে, যে কোন পরিস্থিতে যে কোন কিছু কিনতে পারবেন তারা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল, তথ্য সচিব আব্দুল মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। একিদে আমাদের প্রতিনিধিরা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে যে খবর জানিয়েছেন তাতে বলা হচ্ছে, বিকেলেও অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। সাধারণ মানুষের যাতে কোন ক্ষতি না হয় এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বরগুনা নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী আতঙ্কে আমতলী-তালতলী উপজেলার উপকূলীয় এলাকার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ জানমাল ও গবাদিপশু নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। এতে সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে রয়েছে উপচেপড়া ভিড়। ফণীর প্রভাবে আমতলী ও তালতলী উপজেলায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপকূলীয় মানুষ ও জেলেদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে দুই হাজার ৫শ’ ২০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মৎস্যজীবীরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি ২ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের চরাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী ও অমাবস্যার প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে। মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বিকেল পাঁচটার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আমতলী ও তালতলীতে মানুকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং শুরু করছে। শুক্রবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন আশারচর, খোট্টারচর, নিদ্রাসকিনা, ফকিরহাট, বালিয়াতলী, জয়ালভাঙ্গা, তেঁতুলবাড়িয়া, নিউপাড়া, চরপাড়া, গাবতলী, ছোটবগী, পঁচাকোড়ালিয়া, আমতলী উপজেলার পশুরবুনিয়া, লোচা, ফেরিঘাট, আমুয়ারচর, বৈঠাকাটা, আঙ্গুলকাটা, গুলিশাখালীর নাইয়াপাড়া ও হরিদ্রাবাড়িয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে বসবাসরত লোকজন নিরাপদ স্থান সাইক্লোন শেল্টার ও দ্বিতলা পাকা ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। উপকূলীয় এলাকার সকল মাছধরা ট্রলার ও নৌকা তীরে ফিরে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। তালতলী উপজেলার গাবতলী গ্রামের ইসহাক হাওলাদার জানান, দুপুরের পর থেকে মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, সাইক্লোন শেল্টার কম হওয়ায় মানুষকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। আমতলী ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (রেড ক্রিসেন্ট) কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আছাদ বলেন, মানুষ নিরাপদ স্থান ১শ’ ৪৫ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের জান-মাল রক্ষায় দুই হাজার ৫শ’ ২০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাশ শুভ বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সকল মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আনা হয়েছে। যাতে কোন মানুষের ক্ষতি না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব থেকে মানুষকে নিরাপদে রাখতে সাইক্লোন শেল্টারে নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবমুক্ত রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পটুয়াখালী নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী থেকে জানান, ফণীর প্রভাবে পটুয়াখালীতে দুপুরে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাগর উত্তাল রয়েছে এবং বাতাসের গতি বাড়তে শুরু করছে। উপকূলীয় অরক্ষিত বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এদিকে সংকেত চলাকালীন পটুয়াখালীর নদী ও খালগুলোতে জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি একটু বেশি হয়েছে। এসব এলাকায় অরক্ষিত বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্রায় ১০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৪নং দেউলি সুবিধা ইউনিয়নের মিন্দিয়াবাদ এলাকায় অরক্ষিত বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে কোন গ্রাম বা বসতবাড়ি প্লাবিত হয়নি। ভাঙ্গা বাঁধ থাকার কারণে লালুয়া ইউনিয়নে চারিপারা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ দিয়ে মহিপুরের নিজামপুর এলাকায় কিছু পানি প্রবেশ করেছে। রাঙ্গাবালির মধ্য চালিতাবুনিয়া, চিনাবুনিয়া, গরুভাংগা এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। তবে এই এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও এই এলাকার লোকজন গলাচিপা উপজেলায় ও রাঙ্গাবালি এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এরা শহরে তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আছে। ঝুঁকি মাথায় রেখে সকাল হতে কলাপাড়া, রাঙ্গাবালি ও গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন দ্বীপ ও চরে এ পর্যন্ত ৪০হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ ৬ উপজেলার সকল জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও কমিউনিটি ভলান্টিয়ার এবং রেড ক্রিসেন্টসহ সকল দফতর বা সংস্থা প্রস্তুত আছে। সাতক্ষীরা স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে জানান. শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত জেলার তিনটি উপজেলা থেকে ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্নস্থানে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার ও জরুরী মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ১৫ হ্াজার সিনথেটিক ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে । শ্যামনগর উপজেলার দাতনেখালি, হরিনগর, কৈখালী, রমজাননগরে স্বেচ্ছাশ্রমে এবং গাবুরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালিভর্তি বস্তা ফেলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের এলাকাগুলো মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছে। আশাশুনির কুড়ি কাউনিয়া এলাকায় জরাজীর্ণ বাঁধ উপচে এলাকায় পানি ঢুকেছে। নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেলেও নদীতে ভাটি থাকায় বিকেল সাড়ে ৪টায় এ রিপোর্ট রেখা পর্যন্ত ঝড়োবাতাস আর পানির চাপে বাঁধ ভাঙ্গার কোন ঘটনা ঘটেনি। উপকূলজুড়ে দুপুর থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে জোয়ারের পানি আর ফণীর তা-বে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে উপকূলবাসী। এদিকে শুক্রবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ও সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচীর প্রেসব্রিফিং করেন। জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যানুযায়ী জেলায় ১৩৭ আশ্রয়কেন্দ্র ও ১১৬ মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজন উঠতে শুরু করেছে। জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ১২শ’ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৩১৬ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা, ১১৭ বান টিন, গৃহ নির্মাণে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ও ৪০ পিস শাড়ি মজুদ আছে। জেলার তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। অপর চারটি উপজেলায়ও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কলাপাড়া নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, থেকে জানান, ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার বেলা একটার দিকে প্রবল ঝড়োহাওয়া বয়ে গেছে। হঠাৎ ঝড়োহাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হলে কলাপাড়াসহ গোটা উপকূলের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শত শত গাছপালার শাখা- প্রশাখা ভেঙ্গে গেছে। বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ঝড়ের সময় গাছের ডাল ভেঙ্গে গুরুতর জখম হয়েছে মনসাতলী গ্রামের জাহাঙ্গীর সিকদার (৬০), হাবিব মুন্সী (৩৩) ও সূর্য বেগম (৪০)। এরা হোন্ডায় যাচ্ছিল। আহত তিন জনকেই গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খেপুপাড়া রাডার স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ফণীর অগ্রভাগের একটি ছোট আঘাত ছিল এটি। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি হচ্ছিল। লালুয়ার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ এলাকার চারিপাড়া গ্রামসহ সাতটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বলে সেখানকার সাবেক মেম্বার মজিবর হাওলাদার নিশ্চিত করেছেন। দুপুরের অস্বাভাবিক জোয়ারের ঝাপটায় বিধ্বস্ত বাঁধ এলাকায় প্রবেশ করা পানিতে এখন অন্তত এক হাজার পরিবার বন্দী হয়ে পড়েছে। ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল আকন জানান, দুপুরের ঝড়োহাওয়ার সময় গঙ্গামতির কয়েক শ’ মানুষ দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে গেলেও পরে তারা আবার বাড়িঘরে ফিরে গেছেন। তবে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাতে থাকার জন্য ব্যবস্থার কথা জানালেন চেয়ারম্যান জলিল আকন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর রহমান জানান, প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এসব আশ্রীতের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার সরবরাহের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকাসহ এখানকার অবকাঠামোসহ জনবল ফণীর প্রভাব থেকে নিরাপদ এবং নিরাপত্তার সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলায় ৪৩০ ইউনিটের আওতায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) ছয় হাজার ৪৫০ সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তুত রয়েছে এক হাজার ৭শ’ স্বেচ্ছাসেবী। কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আওতায় এক হাজার ২শ’ লোক প্রস্তুত এর মধ্যে ৭শ’ জনকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায়, অন্যদের জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের পক্ষ থেকে ৮৯ মেডিক্যাল টিমসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ছয়টি ইউনিটের ৩৬ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ১৩৮ জনের বিদ্যুত বিভাগের ছয়টি টিম প্রস্তুত রয়েছে। পুরো জেলায় ৫৩৮ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার নেয়া হয়েছে।
×