ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নরসিংদীর বালাপুরের জমিদার বাড়ি

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ৪ মে ২০১৯

  নরসিংদীর বালাপুরের জমিদার বাড়ি

নরসিংদী সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের বালাপুরের জমিদার বাড়ি এখন বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। চারদিকে শুধু খাঁ খাঁ করছে। এক কালে এ জমিদারবাড়িতে জাঁকজমক বৈঠকখানায় বিচার কাজ চলতো। সকাল সন্ধ্যা বাজতো শঙ্খ। জমিদার বাড়ির রমণীরা দল বেঁধে পুকুরে স্নান করে এসে পূজায় বসতো। আজ সেই মন্দির নি®প্রাণ। অযত্ন আর অবহেলায় গাছ গাছালীতে আচ্ছন্ন। অপরিচ্ছন্ন ঘরে প্রতীমার স্থান দখল করে ফেলছে বহিরাগত কিছু সংখ্যক দখলদার ও সর্পকূল। শুধু এই সাপের ভয়েই কেউ মন্দিরে যায় না। নরসিংদী জেলা সদর থেকে সোজা দক্ষিণে পাইকারচর ইউনিয়নের মেঘনা নদী সংলগ্ন বালাপুর গ্রাম। সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১৭ কি.মি. দক্ষিণে মেঘনা নদীর ধার ঘেঁষে বালাপুরের জমিদার কালী মোহন সাহা (কালী বাবু) পিতামহ নবীন চন্দ্র সাহার বাড়ি। নবীন চন্দ্র সাহার ছিল ৩ পুত্র কালী মোহন সাহা (জমিদার বাবু), আশুতোষ সাহা, মনোরঞ্জন সাহা। এদের মধ্যে জমিদার কালী বাবুই ছিল প্রধান। বংশধর হিসাবে অনিল চন্দ্র সাহা তার ২ ছেলে অজিৎ চন্দ্র সাহা ও অশিত চন্দ্র সাহা (কালী বাবুর ভাতিজা) এবং (ভাতিজা) বীরেন চন্দ্র সাহার ছেলে দেবাশীষ চন্দ্র সাহা। জমিদারী স্টেট প্রায় ৩২০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত একটি বিশাল আকারের কারুকাজ করা দালান রয়েছে। দালানটিতে ১০৩টি কক্ষ রয়েছে। দালানটির পূর্বদিকে ৩য় তলা, উত্তর দিকে ১তলা, দক্ষিণ দিকে ২য় তলা এবং পশ্চিম দিকে একটি বিশাল আকারের কারুকাজে খচিত গেটসহ ২য় তলা রয়েছে। বাড়িটির চতুর দিকেই রয়েছে ইমারত ও কারুকার্য পূর্ণ একটি সুসম্পন্ন দালান। যার প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে মোজাইক, টাইলস্ লাগানো ও কারুকার্য খচিত দরজা জানালা। জমিদার বাড়ি ঘিরে পশ্চিমে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর, উত্তরে রয়েছে বিশাল আকারে দুর্গা পূজামন্ডপ, অতিথিদের থাকা-খাওয়া ঘুমানোর জন্য আরও রয়েছে ৩১ কক্ষবিশিষ্ট একটি দালান। তার পাশেই রয়েছে বালাপুর হাই স্কুল। উত্তরে রয়েছে পুরাকীর্ত্তি বিশিষ্ট অসমাপ্ত কলেজ। তার সম্মুখেই একটি বিশাল পুকুর। পাশেই রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলার জন্য একটি বিশাল মাঠ। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে জমিদার কালীবাবু পরিবার পরিজন নিয়ে ভারতের কলকাতায় চলে যান। জমিদার বাবু ভারতে চলে যাবার সময় তাদের জমিদারি দেখা শোনার দায়িত্বে নিয়োজিতদের এই বিশাল সম্পত্তি ও জমিদারির ভিটে তত্ত্বাবধানের জন্য নির্দেশ দিয়ে যান। তার দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে তত্ত্বাবধায়কগণ তাদের তৈরি কাগজ পত্রের মাধ্যমে এসব সম্পত্তি ভোগ দখল করতে থাকেন। প্রায় ৩২০ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বালাপুরের জমিদার বাড়ি। এই বাড়ি থেকে প্রায় ২ কি.মি. দূরে (ভংগার চর সংলগ্ন) মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত কারুকার্য খচিত ১ তলাবিশিষ্ট একটি বিশাল দালান ছিল। এটা ছিল স্টিমার ঘাট। ভারতের কলকাতা থেকে স্টিমার এসে এখানে মাল খালাস করতো এবং জমিদার বাবু স্টিমারে চড়েই কলকাতা সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করত। এটাকে এখনো বলা হয় স্টিমার ঘাট এবং রাতের বেলায় জমিদার বাবু ঘোড়া দৌড়িয়ে স্টিমার ঘাটে এসে প্রমোদ বালাদের নিয়ে ভোগ বিলাস করতো। কালের সাক্ষী স্টিমার ঘাট এখন মেঘনা বিলীন হয়ে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এসে এই বাড়ি দেখতেই সারা বেলা কেটে যায়। তবে কালী বাবুর এই ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি আজও তার স্মৃতি বহন করছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আজ তা ধ্বংসের মুখে। সংস্কার করা না হলে এক সময় এ ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি প্রাচীন স্থাপত্য নিয়ে লুটিয়ে পড়বে মাটিতে, হারিয়ে যাবে বালাপুরের জমিদারের ইতিহাস। -মোস্তফা কামাল সরকার, নরসিংদী থেকে
×