ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নারী-পুরুষের ভরসার নাম মরিয়ম বুবু

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ৪ মে ২০১৯

 নারী-পুরুষের ভরসার নাম মরিয়ম বুবু

যুবতী ও বিধবা নারীদের ভরসার নাম এখন মরিয়ম বুবু। দূর-দূরান্ত থেকে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও ছুটে আসছেন এই মরিয়ম বুবুর কাছে কাজ শিখতে। টানাটানির সংসারে কাজ শিখে পরিবারের কিছু বাড়তি আয়ের জন্য আসা। বর্তমানে আয় হয় দু’শ’ থেকে তিন শ’ টাকা। কোনদিনও তাও মেলে না। তাই কষ্ট করে কিছু শিখে যদি আয় বাড়ানো যায়। আর এসব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মরিয়ম বুবু। খুলেছেন মহিলা উন্নয়ন সমিতি। সমিতিতে এখন সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনশ’ জনে। সবাই মিলে চলছে বেঁচে থাকার লড়াই। মরিয়ম বুবুর জীবনটা সহজ ছিল না। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দর্জি দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ^রী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের আস্করনগর বাণিয়াটারী গ্রামে। দরিদ্র স্বামীর সংসারে সন্তান আসার পর টানাটানিটা যেন বেড়েই চলছিল। সংসারের দৈন্য দেখে স্বামীর কাছ থেকে দর্জির কাজ শিখে নেন উদ্যমী মরিয়ম বেগম। এরপর বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন আধুনিক পোশাক তৈরির কলাকৌশলের। হয়ে ওঠেন দক্ষ প্রশিক্ষক। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। উৎসাহীরা ভিড়তে থাকেন তার কাছে। ফলে ২০০৬ সালে গড়ে তোলেন ‘আস্করনগর বানিয়াটারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি’। পাশে সহায়তার হাত বাড়ায় সরকারী সেবা সংগঠনগুলো। তিনি নাগেশ^রী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে সমিতির রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হন। এরপর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও উপজেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন পান। এলাকার গরিব ও বিধবা নারীদের ডেকে এনে তিনি সেলাই প্রশিক্ষণসহ ১৬ ধরনের কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেন। এ সময় তিনি তিনশো নারীকে সমিতির মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণসহ টেইলারিং ব্লক বাটিক এম্বয়ডারী, কাটচুপি, বাঁশের তৈরি মোড়া, কার্পেট, পুতির বিভিন্ন ধরনের ভ্যানেটি ব্যাগ, পার্সব্যাগ, শোপিচ, বেতের শীতল পাটি, বিভিন্ন ডিজাইনের হাতপাখা, প্যান্ট, শার্ট, বোরকা, লেহেঙ্গা, কামিজ, পায়জামা, সাফারি শার্ট, রাজ কোট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া তৈরিতে সহায়তা করার পাশাপাশি কাটিং মাস্টার হিসেবে গোটা জেলায় খ্যাতি ছড়িয়েছেন। তার এই উদ্বুদ্ধকরণ কর্মকা-ের ফলে ২০১৪ সালে নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসন থেকে জয়িতা সম্মাননা পান। ২০১৫ সালে ডায়বেটিকসে আক্রান্ত স্বামী মারা যাওয়ার পর নারীদের আর্থিক উন্নয়নে সহযোগিতা করার মানসে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়েন তিনি। -রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে
×