ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

থানচির দুর্গম থাংলংপাড়া স্কুল

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৪ মে ২০১৯

থানচির দুর্গম থাংলংপাড়া স্কুল

বান্দরবানের থানচির দুর্গম জনপদের অসহায় মানুষগুলো যেখানে অন্ন যোগাতেই হিমশিম খায় সেখানে ঢেউটিন কিনে নিজ উদ্যোগে স্কুল মেরামত করে নিজেদের সন্তানদের শিক্ষা অর্জনের পথ সুগম করবে, সেটা ভাবা যেন দুঃস্বপ্ন। বাঁশের তৈরি স্কুল ঘরের ঢেউটিন কাল বৈশাখী ঝড়ে উড়ে যাওয়ায় থানচিতে একদিকে তপ্ত রোদ, অন্যদিকে মেঘের গর্জনের ওপর নির্ভর করে চলছে আদিবাসী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন। স্কুলের শিক্ষার্থী থংওই ম্রো ও মাংপুং ম্রো বলেন, আমাদের স্কুলের জন্য কেউ ঢেউটিন এর ব্যবস্থা করে দিলে। আমরা লেখাপড়া করে অনেক বড় হব। জানা গেছে, বান্দরবানে থানচি উপজেলার ২নং তিন্দু ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে থাংলং ম্রো পাড়া অবস্থান। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় ২০১৫ সালে পাড়াবাসীদের উদ্যোগে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করেন একটি স্কুল ঘর। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহযোগিতা পাতলা ঢেউটিন দিয়ে স্কুল ঘরটি নির্মাণ করেন। পাড়াবাসীদের মাসিক চাঁদা দিয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগ করেন। প্রথমে ৩৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। পরে পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সালে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত ৫৬ জন শিক্ষার্থী স্কুলটিতে অধ্যয়ন করত, তারা সবাই গরিব আদিবাসী পরিবারের সন্তান। আরও জানা গেছে, ২০১৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ইউনিসেফের সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্কুলটিতে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেন। মোট দু’জন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে স্কুলটি। মাসখানেক আগে কালবৈশাখী ঝড় ও তুফানে স্কুলের ঢেউটিন উড়ে জঙ্গলে দিয়ে পড়ে। আর তাতেই ঢেউটিনগুলো ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়ায় শিক্ষার্ত্রীরা যেন খোলা আকাশের নিচেই শিক্ষা অর্জন করছে। স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আইচেম ম্রো ও লেনরুং ম্রো বলেন, প্রচন্ড রোদ ও গরমের মধ্যে জীবন ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তনয়া ম্রো জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে স্কুল ঘরটিই উড়ে যায়, তবে পাড়াবাসীরা কোন রকম কষ্ট করে স্কুল ঘরটি মেরামত করে। কিন্তু অর্থ সঙ্কটের কারণে ঢেউটিন ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই গরমে ও মেঘের গর্জনের শব্দ শুনলেই স্কুলে ছুটির ঘণ্টা দিয়ে দিতে হয়। ইউনিসেফের সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত শিক্ষক তৃপ্তি ত্রিপুরা জানান, স্কুলের সমস্যা কথা উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রীতি কুমার তংচংগ্যাকে জানিয়েছি কিন্তু অনেক দিন হলো কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। উপজেলা তিন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মংপ্রুঅং মারমা জানান, আমাদের ইউনিয়নের এই মুহূর্তে কোন বরাদ্দ নেই। আগামী জুন মাসের বরাদ্দ হলে সহযোগিতা করব। তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। শুধু টেউটিন নয়, পুরো স্কুল ঘরটি সংস্কার করা খুবই জরুরী। জানা যায়, স্কুলটির বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে রোদ থেকে বাঁচার জন্য খুব ভোরে ও সন্ধ্যাকালীন সময়ের দুই শিফটে ক্লাস করান শিক্ষকরা। আকাশে সামান্য মেঘের শব্দ হলেই ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে স্কুল ছুটি দেন তারা। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী ক্ষুদে শিক্ষাত্রীরা। এসএমসি কমিটি সভাপতি ও পাড়ার প্রধান (কারবারী) নেকখ্যাইং ম্রো জানান, আমাদের পাড়ায় প্রায় ৬০ পরিবারের বসবাস, সবাই হতদরিদ্র তাই ঢেউটিন ক্রয় করার সম্ভব নয়। আমি স্কুলের সমস্যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি কিন্তু কোন প্রকার আশ্বাস পেলাম না । এই ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, আমি গত ২৮ এপ্রিল থানচিতে যোগদান করছি। মাত্র দু’দিন হলো তার মধ্যে ৫-৬টা স্কুলের ভিজিট করেছি। থাংলং ম্রো পাড়া স্কুলের সমস্যার বিষয় আমি জানি না। -এস বাসু দাশ, বান্দরবান থেকে
×