ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আত্রাই তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে বাঁধ

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ৪ মে ২০১৯

 আত্রাই তীর ঘেঁষে  বালু উত্তোলন ॥  হুমকিতে বাঁধ

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর মহিষবাথান ঘাটে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে অবাধে বালু উত্তোলনে বাঁধের কংক্রিটের ব্লক (সিসি) ধসে পড়ে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা। বাঁধটি ভেঙ্গে পড়লে সরকারী খাদ্য গুদাম, সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১৪-১৫টি এনজিও অফিসসহ অন্তত ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়বে। জানা গেছে, মহিষবাথান ঘাটে একইস্থানে সারিবেঁধে ১০ থেকে ১২টি ড্রেজার বসিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি প্রভাবশালী মহল। নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করায় সিসি ব্লকের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে সিসি ব্লক নদীতে ধসে পড়ছে। ফলে ফসলি জমিসহ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বালু উত্তোলনে ওই এলাকার প্রায় অর্ধকিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্নস্থান নদীতে ধসে পড়ায় গত ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার এলাকাবাসী বালু উত্তোলনে বাধা প্রদান করে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে ‘মহাদেবপুরে নীতিমালা উপেক্ষা করে বালু উত্তোলনের মহোৎসব’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় নড়েচড়ে বসে উপজেলা প্রশাসন। সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা খাতুন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের বাধার মুখে বালু উত্তোলনকারীরা কয়েকটি ড্রেজার মেশিন তুলে নেয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চলে আসার পর তারা আবারও ড্রেজিং করে বালু তুলতে থাকে। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন করলে বুধবার সন্ধ্যায় ইউএনও আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আগমন টের পেয়ে বালু উত্তোলনকারী ও ট্রাক ড্রাইভাররা ট্রাক ফেলে পালিয়ে গেলে ট্রাকের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়া হয়। এলাকাবাসী জানায়, নদীর পানি কমে যাওয়ায় দু-তিন মাস ধরে খনন যন্ত্র দিয়ে বালু তোলা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু তোলা হয়। প্রশাসন এসব যন্ত্র বন্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। তখন দু/এক দিন বালু তোলা বন্ধ থাকে। কিন্তু পরে আবার শুরু হয়। নীতিমালা উপেক্ষা করে সারিবেঁধে কয়েক হাত পর পর খননযন্ত্র বসিয়ে নদীতে চলে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে করে তা বিক্রি করে বিশেষ একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি না থাকায় একটি প্রভাবশালী মহল খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। যে কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। ফলে বালু উত্তোলনকারীরা বেপরোয়া। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প, খননযন্ত্র (ড্রেজিং) বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা ৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অনান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা হতে সর্বনিম্ন ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আত্রাই নদী থেকে বালু তোলার ক্ষেত্রে আইন মানা হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু তোলার কাজে জড়িত কয়েক শ্রমিক জানান, প্রশাসনের লোকজন অভিযানে আসার আগেই এলাকায় খবর চলে আসে। এ কারণে কর্মকর্তারা আসার আগেই ব্যবসায়ীরা মেশিন সরিয়ে নেয়। অভিযানের পর সুযোগ বুঝে আবার বালু তোলা অব্যাহত রাখা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেন জানান, মহিষবাথান ঘাটে তিন দফায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। খননযন্ত্র ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ। নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেউ বালু তুললে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×