ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কথোপকথন

শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা এখন প্লাস্টিক ব্যবসার মতো ॥ রিয়াজ রনি

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ৪ মে ২০১৯

 শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা এখন প্লাস্টিক ব্যবসার মতো ॥ রিয়াজ রনি

রিয়াজ রনি। বহুগুণের অধিকারী রিয়াজ রনি অনেকটাই প্রচারবিমুখ। একাধারে বাংলাদেশের তরুণ একজন নির্মাতা রিয়াজ রনি, প্রযোজক, নাট্যকার, অভিনেতা ও সংবাদ কর্মী। এক সময় অসংখ্য নাটক নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছে। নাটক প্রযোজক হিসেবেও পরিচিতি আছে তার। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু নাটকে। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন। বর্তমানে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে কর্মরত। আগামী ১৯ মে তার পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’ মুক্তি পাচ্ছে। ‘বেহুলা’ এবং সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। এই সময়ের ব্যস্ততা কী নিয়ে? রিয়াজ রনি : এই মুহূর্তে ব্যস্ততা ১৯ মে মুক্তি পেতে যাওয়া আমার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’র অনলাইন প্রচার নিয়ে। এছাড়া নিয়মিত বিজ্ঞাপন ও তথ্যচিত্রে কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি আমার লেখা ও সুরে একটি গানের কাজ চলছে। ‘দিলসুরত’ শিরোনামের সুফি ঘরানার গানটি লাবনী হাবীব গাইবেন সুমন কল্যাণের সঙ্গীত পরিচালনায়। প্রযোজনা করছে নূর মিডিয়া। ‘বেহুলা’ প্রসঙ্গে জানতে চাই। রিয়াজ রনি : ‘বেহুলা’ নামটি এ চলচ্চিত্রে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি মূলত ক্ষমতা, বৈষম্য, সমাজ ও ধর্মীয় নিয়মের জালে অবরুদ্ধ মানবতার ছবি। এমন একটি ব্যবস্থায় নারী কিভাবে ‘বেহুলা’ হয়ে যায় তাই দেখানো হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। গুণী নির্মাতা হয়েও দীর্ঘদিন নির্মাণে বিরতি, কেন? রিয়াজ রনি : কারণ অনেক। প্রথমত আমি মূলধারার কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। একজন নির্মাতা করবে সমৃদ্ধ শিল্প নির্মাণের কাজটি। এখানে সেই চর্চা নেই। দ্বিতীয়ত এ অঙ্গনের পৃষ্ঠপোষকতা উপযুক্তদের হাতে নেই। এ অঙ্গন নিয়ন্ত্রণ করে বিজ্ঞাপনদাতারা। ফলে এখানের শিল্প-সংস্কৃতি এখন প্লাস্টিক ব্যবসার মতো। তৃতীয়ত আমাদের প্রচারমাধ্যমগুলোর ভাল প্রডাকশন প্রচারের বিমুখতা। অনেকটা ‘তেল-মসলা কম কিন্তু ভাজি হতে হবে কড়কড়া ও সুস্বাদু’ এমন অবস্থা। তাই প্রডাকশনও হয়ে গেছে কেবল চোখের। মনের মধ্যে থাকে না। বলতে পারেন- ‘ওয়ান টাইম ইউজ’র মতো। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রুচিহীন উপহারের রেওয়াজ। এতো প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে কেন কাজ করতে হবে? তাছাড়া নাটক নির্মাণ আমার একমাত্র পেশা নয়। তাই মানের প্রশ্নে আপোস করতে পারিনি বলে নির্মাণ থেকে দূরে। এ পর্যন্ত কতগুলো নাটক নির্মাণ করেছেন? রিয়াজ রনি : ‘এবং ফেরা’, ‘কালের আয়না’, ‘জ্বলে জলে’, ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘আদর্শলিপি’, ‘হরোস্কোপ’সহ প্রায় ৩৫টি নাটক এ পর্যন্ত নির্মাণ করেছি। প্রচার করেছে চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, একুশে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম। দেশে স্যাটেলাইট টিভির যাত্রাকালে মনির খান ও বিবিসি বাংলার রাশিদা খান বানুসহ বেশ কিছু শিল্পীর মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছিলাম। এছাড়া নিজস্ব বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘আফরাজ কমিউনিকেশন্স’ থেকে নিয়মিত সরকারী-বেসরকারী তথ্যচিত্র ও বিজ্ঞাপন নির্মাণ করছি। ‘বেহুলা’ আমার নির্মিত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। আপনার শুরুর সময় এবং এই সময়ের নাটকের মানের বিষয়টি কিভাবে বিচার করেন? রিয়াজ রনি : ঢাকার মিডিয়ায় আমার কাজ শুরু ১৯৯২ সাল থেকে। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতার উপলব্ধি হলো- সময়ের স্বাভাবিক পরিবর্তনকে মেনে নিতে হয় বা মানিয়ে যায়। কিন্তু এখনকার পরিবর্তন আমার কাছে অনেকটাই অস্বাভাবিক। যেখানে যার থাকার কথা সেখানে যেন সে নেই। মেধাবী যারা লেগে আছেন তারাও অনেকটা স্রোতে ভাসছেন বলে মনে করি। নতুন নাটকের কোন খবর আছে কি? রিয়াজ রনি : ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেল এটিউবের জন্য ওয়েব সিরিজের প্রি-প্রডাকশনের কাজ চলছে। এছাড়া আরও কয়েকটি কাজের জন্য পরিকল্পনা চলছে। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের কোন পরিকল্পনা আছে? রিয়াজ রনি : পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য গল্প নিয়ে কাজ করছি গত ৮ বছর ধরে। বিষয় : চাইল্ড সাইকোলজি উইথ প্যারেন্ট। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে প্রি-প্রডাকশন শুরুর পরিকল্পনা আছে। আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা? রিয়াজ রনি : আমার কাছে যা সত্য এবং যেভাবে এ পৃথিবীকে দেখতে চাই সেই বার্তা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। চ্যানেলের কাজ কতটা এনজয় করেন? রিয়াজ রনি : টেলিভিশনের সংবাদ প্রযোজনার কাজ যদিও অনেকটা ছকে বাঁধা তবু এর প্রতিমুহূর্তের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকে খুব উপভোগ করি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তরুণদের নিয়ে আপনার মন্তব্য? রিয়াজ রনি : অধ্যবসায়টা জরুরী। নতুন প্রজন্মের অনেকেই মেধাবী। প্রয়োজন সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। সুযোগ পেলে ওরাও লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। -সাজু আহমেদ
×