ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে বসেই মিলবে নক্সা অনুমোদন ও অন্যান্য সেবা

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ৩ মে ২০১৯

ঘরে বসেই মিলবে  নক্সা অনুমোদন ও  অন্যান্য সেবা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষ যখন উদভ্রান্ত হয়, রাজনীতির চূড়ান্ত দেউলিয়াপনায় পৌঁছে যায়, তখন নিজের অস্তিত্বের শেকড় এদিক-ওদিক, শূন্যে খোঁজে। তাই উদভ্রান্তের বিএনপি আজ প্রলাপ বকছে এমনটাই মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। একই সঙ্গে এখন থেকে ভবনের নক্সা অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রসহ অন্যান্য সকল সেবা অনলাইনেই প্রদান করা হবে। দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করতে আর নাগরিক হয়রানির অবসানে সেবা সহজ করার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সকল কাজ দ্রুত করতেই অনলাইনে সেবা চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সকল বিভাগে এই অনলাইন পদ্ধতি চালু করা হবে বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার রাজউকের ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নির্মাণ অনুমোদন অটোমেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজউকের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদউল্লা খন্দকার। এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আখতার হোসেন এবং মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, রাজউকের সদস্যবৃন্দ ও কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘসূত্রতা আর হয়রানির অবসানে অনলাইনে সকল সেবা পেতে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো। প্রথমবারের মতো এমন নাগরিক সেবার যুগান্তকারী পরিবর্তনের কাজ শুরু হলো। এখন থেকে স্বচ্ছতা আনার ভিত্তি হিসেবে টেবিলে টেবিলে ধরনা দিয়ে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না। বাসায় কিংবা বিশ্বের যে কোন জায়গায় বসে নক্সা অনুমোদনসহ ছাড়পত্র ও অন্যান্য সেবা অনলাইনে নেয়া যাবে। কোন প্রকার হার্ড কপি দিতে হবে না। সফট কপি অনলাইনে দিলেই সেবা পাবেন ও সকল তথ্যই অনলাইনেই জানতে পারবেন গ্রাহকগণ। মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘসূত্রতার যন্ত্রণা সেবা গ্রহীতারা বোঝেন। মূলত দেশের মালিক জনগণ, আমরা জনগণের সেবক। মালিকদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া শেখ হাসিনা সরকারের লক্ষ্য। আমরা আজ যুগান্তকারী পরিবর্তনের যে ধারা সূচনা করলাম সেটা এখানে শেষ হবে না, এটা চলমান প্রক্রিয়া। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, সারা দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয় ও বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। এই হাতের মুঠোয় আনার পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু করার স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনায় তারই সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় কার্যত বাংলাদেশকে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে কেন মন্ত্রণালয় পিছিয়ে থাকবে, মন্ত্রণালয়ের অধীনের দফতর সংস্থা পিছিয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার পর তিনি বলেছিলেন, তোমার প্রথম কাজ হবে কর্মময় পরিবেশ গতিশীল করা, স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা এবং জনবান্ধবে পরিণত করা। রেজাউল করিম বলেন, রাজউকের সিটিজেন চার্টার বড় হরফে টানানো থাকবে। সেবা গ্রহণে একটা সময় নাগরিকের যে সময় লাগতো, সেখান থেকে যে উত্তরণ হয়েছে সেটা মানুষকে জানতে হবে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কি কি স্তরে নাগরিকদের সুবিধা দেয়া আছে, সেটা তাকে জানতে হবে। যারা কিছু বোঝেন না তাদের জন্য হেল্প ডেস্ক থাকবে। রাজউকের আটটি জোনের প্রতিটিতে এক্সপার্ট টিম থাকবে। কেন মানুষ সেবা পাবে না, কেন রাজউকের নানা সমালোচনা হবে। সেই সমালোচনার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আজ আমরা এ কর্মসূচী নিয়েছি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ই সকল মন্ত্রণালয় ও দফতর-সংস্থার আগে এই আটোমেশনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং কাযকর করছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আকাশে, জলে, স্থলে সবর্ত্রই বাঙালী জাতির সার্বভৌমত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। সাতষট্টি বছরের সীমানা বিরোধের অবসান করতে পেরেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আইনানুগ প্রক্রিয়ায় আমরা আন্তর্জাতিক পরিম-লে সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছি। আকাশসীমায় আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। বাংলাদেশে উন্নয়নের মহাসড়কে দ্ব্যর্থহীনভাবে একজন মানুষ এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি শুধু রক্তের উত্তরসূরি না, আদর্শেরও উত্তরসূরি, তিনি শুধু দেশীয় নেতৃত্ব নয়, আন্তর্জাতিক পরিম-লের নেত্রী, তিনি শেখ হাসিনা। সমসাময়িক রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, আমাদের অনাকাক্সিক্ষত কথাবার্তাও শুনতে হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু অপ্রয়োজনীয়। আমার কাছে মনে হয়, মানুষ যখন উদভ্রান্ত হয়, রাজনীতির চূড়ান্ত দেউলিয়াপনায় পৌঁছে যায় তখন বোধ হয় নিজের অস্তিত্বের শেকড় এদিক-ওদিক, শূন্যে খোঁজে। দেউলিয়াপনার ভেতর থেকে বিএনপি বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখে দেখে না। শুধু রাজনৈতিকভাবে মির্জা ফখরুলকে প্যারালাইজড করার জন্যই সংসদে শপথ গ্রহণ করতে দেয়নি বিএনপি। দল, মত, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে উপস্থিত সকলের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের সুযোগ আমরা সকলে নেই। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সকলের শামিল হওয়া উচিত। এই শামিল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনরূপ সহিংসতা, অপরাজনীতি, অন্যায়, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের পরে স্বাধীন হওয়া দেশও অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। আমরা কেন পারব না। তাই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রোল মডেলে সবাই শরীক হোন। তিনি বলেন, মনে রাখবেন আমরা কেউ ফেরেশতা না, আমরা একেবারে সৎ, দুর্নীতিমুক্ত হতে পেরেছি সে দাবি করা নিরর্থক হবে। কিন্তু যতটুকু আমরা এগিয়ে যাই সেখানে সকলের সুনির্দিষ্ট সহযোগিতা চাই। আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য ভাল বাংলাদেশ রাখতে হবে। আমাদের সন্তানরা যদি একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, সন্ত্রাসমুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ পেতে পারে তাহলে আমাদের সমস্ত ত্যাগ, সাধনা স্বার্থক হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, রাজউককে উৎসাহিত করুন। আজকে যে শুভ সূচনা আমরা করলাম তা অব্যাহত থাকবে। সেবা পেতে কাউকে টেবিলে টেবিলে আর ধরনা দিতে হবে না। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, মানুষের ভালবাসা পাওয়ার চেয়ে বিত্ত-বৈভব বড় নয়। চিত্তকে বিত্তবান করেন। নৈতিকতাকে বড় করেন, মূল্যবোধকে বড় করেন। আসুন আমরা সকলে মিলে শুধু দৃশ্যমান উন্নয়ন নয়, নীতি-নৈতিকতায়, মূল্যবোধে উন্নত হই। অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদউল্লা খন্দকার বলেন, আগে যে কোন নক্সা অনুমোদন বা রাজউকের যে কোন কাজে ভোগান্তি পেতে হতো। জমির ফাইল পাওয়া যায় না বা কোন তথ্যই পাওয়া যায় না এমন ঘটনার মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাপক ভোগান্তি হতো। অনলাইন পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে রাজউকেই প্রথমবারের মতো নাগরিক সেবায় ডিজিটাল পদ্ধতির সেবা চালু করা হলো। তবে তিনি রাজউকের এই সেবা পদ্ধতি যেন কিছুদিন পরেই বন্ধ না হয়ে যায় ও কোন অভিযোগ যেন আটকে না থাকে তার প্রতি গুরুত্ব দিতে রাজউককে বিশেষ লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, আজ অনলাইনে সেবা পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে রাজউকের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো। এখন থেকে নক্সা অনুমোদনে ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রে যে কেউ কোন প্রকার সেবা পেতে হটলাইনে ফোন করলেই সেবা পাবেন। রাজউকেও আসতে হবে না। চেয়ারম্যান বলেন, ভবন অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ও বহুতল ভবনের সনদ অনলাইনে পেতে আগামী এক মাসের মধ্যেই চালু করা হবে। এর মাধ্যমে ভবনের নক্সা অনুমোদনে পূর্বের ১৬ ধাপ থেকে মাত্র ৪ ধাপে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া বাস্তবে শুরু হলো।
×