ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে ঈদকে কেন্দ্র করে টার্গেট ১০ কোটি পাঞ্জাবি

প্রকাশিত: ১২:১১, ৩ মে ২০১৯

কেরানীগঞ্জে ঈদকে কেন্দ্র করে টার্গেট ১০ কোটি পাঞ্জাবি

সালাহ্উদ্দিন মিয়া, কেরানীগঞ্জ ॥ আসছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ। মুসলমানদের ঈদের শখের জামা-কাপড় হলো পায়জামা-পাঞ্জাবি। ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জের তৈরি পাঞ্জাবি দখল করে নিয়েছে সারাদেশের অভিজাত ও শৌখিন মার্কেট, বিপণি-বিতান ও শপিংমলগুলো। দেশীয় তৈরি পাঞ্জাবিগুলোর সৌন্দর্য ও বাহারি ডিজাইন বিদেশী পাঞ্জাবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রেতাদের মন জয় করে নিচ্ছে। ঈদ বাজারের চাহিদা জোগান দিতে গিয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করতে হচ্ছে পাঞ্জাবি তৈরির কর্মচারীদের, তারা বলছে, ৬ মাস আগ থেকে পাঞ্জাবি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই ঈদ বাজারকে সামাল দিতে কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লী থেকে প্রায় ১০ কোটি পাঞ্জাবি সর্বরাহ করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলারা শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নের দেশীয় পোশাক তৈরির কারখানাগুলোতে পাঞ্জাবি তৈরির ধুম পড়েছে। ইতোমধ্যে এখানকার তৈরি পাঞ্জাবি ঢাকাসহ সারাদেশের মার্কেট ও শপিংমলগুলো দখল করে নিয়েছে। সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটে ক্রেতার প্রচুর ভিড়। তারা নিজ নিজ পছন্দমতো ডিজাইনের পায়জামা-পাঞ্জাবি ও ফতুয়া খরিদ করছেন। ক্রেতারা তৈরি পোশাক খরিদ করে খেয়া নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ ও মিনি ট্রাকে বোঝাই করে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। পাঞ্জাবি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৩ মাস আগ থেকে পাঞ্জাবি বেচাকেনা শুরু হয়েছে। মফস্বলের পাইকাররা অনেকে পাঞ্জাবি কিনতে এসে ২/৩ দিন হোটেলে অবস্থান করছে। এ ব্যাপারে হাজী করিম মার্কেটের শুভরাজ পাঞ্জাবির মালিক শেখ আনোয়ার বলেন, এবার ৩ মাস আগ থেকেই পাঞ্জাবির বাজার শুরু হয়েছে। ভারতীয় পাঞ্জাবির সঙ্গে দেশীয় পাঞ্জাবি পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় পাঞ্জাবি টেকশই, দামে কম এবং দেখতেও সুন্দর। ভারতীয় পাঞ্জাবির চেয়ে বাংলাদেশী পাঞ্জাবি কোন অংশে কম নয়। ক্রেতাদের নজর সহজে কেড়ে নেয়। তিনি আরও বলেন, কারচুপি, লক্ষৌ হাতের কাজ, সেঞ্চুরি ইউনিটিকা, ব্যাকসি, পাবনা সিল্ক, রাজশাহী সিল্কের পাঞ্জাবির চাহিদা অনেক বেশি। প্রকার ভেদে একটি পাঞ্জাবির পাইকারি মূল্য ২শ’ ৫০ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। আলম মার্কেটের মুসলিম কালেকশন পাঞ্জাবির মালিক মুসলিম ঢালী বলেন, এবার ঈদে শর্ট পাঞ্জাবি, নবাব, বুটা, পিডি, বল সেরওয়ানী, রেমবো, রিচি ও হাজারী বুটা ধুমসে চলছে। এসব পাঞ্জাবির চাহিদা অনেক। চাহিদা অনুযায়ী পাঞ্জাবির সরবরাহ করতে পারছি না। প্রকারভেদে একটি পাঞ্জাবির মূল্য ৬শ’ ৫০ থেকে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত। হাজী করিম মার্কেটের সনি বিক্রমপুর গার্মেন্টেসের মালিক সিরাজ মিয়া বলেন, দেশীয় ইউনিটিকা, সেঞ্চুরি, আদি, স্পেশাল আদি, ওপেন সেরওয়ানী, ওপেন সিলিকাজ ও জিপসি পাঞ্জাবি এ বছর বেশি চলছে। প্রকার ভেদে পাইকারি ১টি পাঞ্জাবির মূল্য ৭শ’ টাকা থেকে ১৩শ’ টাকা। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর ব্যবসা অনেক ভাল। এর আগে ঈদ বাজার থরে থরে চলত। কিন্তু এ বছর সেরকম নয়। এ বছর ঈদ বাজার একটানা চলছে। কোন প্রকার থামাথামি নেই। তবে সুতার মূল্য ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা তেমন লাভ নেই। মশিউর মার্কেটের বড় গলির নিউ কাশেম গার্মেন্টেসের মালিক হাজী কাশেম বলেন, এবারের ঈদ বাজারে ফতুয়া বিক্রি শুরু হয়েছে আরও তিন মাস আগ থেকে। ঈদের বেচা-বিক্রি ইতোমধ্যে আমরা শুরু করেছি। সামান্য ক’টা দিন আর বাকি আছে। এ বছর অন্য বছরের তুলনায় বিক্রি ভাল। আশা করি এ বছর ফতুয়া বিক্রির ফলাফল ভাল হবে। তবে গ্যাস ও বিদ্যুত ঘাটতির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। কেরানীগঞ্জের তরিক টাওয়ারের লিজা গার্মেন্টসের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের তৈরি পোশাক বিক্রি আরও তিন মাস আগ থেকে শুরু হয়েছে আগামী ২৫-২৬ রোজা পর্যন্ত বিক্রি বেশি হবে। তিনি বলেন, কাপড়ের বড় শত্রু আগুন। এখানে ৭ সহ¯্রাধিক তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু একটিও দমকল বাহিনীর অফিস নেই। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি এই এলাকায় ১টি দমকল বাহিনীর অফিস প্রতিষ্ঠা করার জন্য এছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীর ঘাটগুলো টোলমুক্ত করলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। সরকারও কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব পাবে।
×