ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গোপনীয় তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ॥ নয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী মরডান্ট

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরখাস্ত

প্রকাশিত: ১১:৫০, ৩ মে ২০১৯

 ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরখাস্ত

রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য ফাঁসের দায়ে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গেভিন উইলিয়ামসনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে গেভিন উইলিয়ামসনকে বরখাস্ত করেন। বরখাস্তের পর তার বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। ব্রিটিশ ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) এক বৈঠকে চীনের মোবাইল জায়ান্ট হুয়াওয়েকে নিয়ে এক আলোচনায় তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ওঠে উইলিয়ামসনের বিরুদ্ধে। উইলিয়ামসন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। খবর বিবিসি অনলাইনের। ব্রিটেনের বিরোধীদলগুলো বলছে, গেভিন উইলিয়ামসনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে হবে। অন্যথায় দেশের গোপনীয় তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে। গেভিন উইলিয়ামসন বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ক্যাঙ্গারু আদালতের সিদ্ধান্তের অনুরুপ অভিযোগ আনা হয়েছে। স্কাই নিউজকে এক তাৎক্ষণিক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমি আমার সন্তানদের নামে শপথ করে বলছি, আমি কোনোও তথ্য ফাঁসের সঙ্গে জড়িত নই। আবার এই তথ্য ফাঁসের বিষয়টি যারা প্রকাশ করেছেন তাদের সঙ্গেও আমার তেমন সম্পর্ক নেই। ব্রিটেনের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্যার মার্ক সেড উইল এই তথ্য ফাঁসের বিষয়টি সবার নজরে আনেন। ২০১৭ সাল থেকে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন গেভিন উইলিয়ামসন। চীনের প্রখ্যাত মোবাইল প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে বর্তমানে ব্রিটেনের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করছে। সম্প্রতি হুয়াওয়েকে ব্রিটেনের গোপন তথ্য দেন বলে গেভিন উইলিয়ামসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গোপনীয় বিষয়গুলো এনএসসিতে আলোচনায় ওঠে। জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরাই এর সদস্য থাকেন এবং সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রয়োজনে সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদেরও বৈঠকে ডাকা হয়ে থাকে। এনএসসির গত সপ্তাহের বৈঠকে চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানিকে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের কাজ দেয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দ্য টেলিগ্রাফ খবর প্রকাশ করলে তা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে দেশটির পার্লামেন্টে। কেননা হুয়াওয়ের সঙ্গে এখন যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন চলছে। হুয়াওয়ে প্রধানের মেয়ে ও কোম্পানির প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মেং ওয়ান ঝুকে কানাডায় গ্রেফতারের পর তা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে জটিলতা দেখা দিয়েছে। টেলিকম খাতে পণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ কোম্পানি হুয়াওয়ের প্রযুক্তি নিয়ে ঘোর সন্দেহ থেকে বন্ধু রাষ্ট্রদের তা ব্যবহার না করতে আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের ধারণা, তাদের প্রযুক্তি চীনের পক্ষে গোয়েন্দাগিরির কাজে ব্যবহৃত হয়। যদিও হুয়াওয়ে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এর মধ্যেই চীনের কোম্পানিকে কাজ দেয়ার খবর ফাঁস হলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে টেরেসা মের সরকার। তাই বরখাস্ত হতে হল প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়ামসনকে। পদত্যাগ করতে বলে উইলিয়ামসনকে লেখা চিঠিতে টেরেসা মে বলেছেন, এই তথ্য ফাঁসের একটি তদন্তে তার দায়িত্বহীনতার প্রমাণই উঠে এসেছে। আর কাউকে দায়ী করার মতো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উইলিয়ামসন আগেই এই ঘটনায় তার দায় অস্বীকার করে আসছিলেন। বরখাস্ত হওয়ার পরও তিনি বিবিসিকে বলেছেন, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হলে তিনি নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন। উইলিয়ামসনকে বরখাস্ত করার পর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী পেনি মরডান্টকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে মরডান্টই প্রথম নারী। মরডান্ট নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় কারামন্ত্রী রোরি স্টুয়ার্টকে আনা হয়েছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। ব্রিটেনের অন্যতম বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্র্যাট দেশটির পুলিশ প্রধানকে লেখা এক চিঠিতে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্দের আহ্বান জানিয়েছে। দলটির সহকারী প্রধান জো সুইনসন বলেছেন, রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস বিধি ভঙ্গের কারণে উইলিয়ামসনের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক। এরপর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, এটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ও ক্যাবিনেট দফতরের কাজ। আমরা আগেই কোন তদন্তে নামতে পারি না। ব্রিটেনের সাবেক সেনা প্রধান লর্ড ডানাট বৃহস্পতিবার বলেন, এটি সত্যিই দুঃখজনক। আর আমাদের প্রতিরক্ষা বিষয়ের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক খবর। তবে লর্ড ডানাট উইলিয়ামসনের কাজের প্রশংসা করেন, তিনি বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে উইলিয়ামসন কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন।
×