ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অন্ধ্রে ফণীর প্রভাবে উপড়ে পড়েছে গাছপালা বৈদ্যুতিক খুঁটি

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৩ মে ২০১৯

 অন্ধ্রে ফণীর প্রভাবে উপড়ে পড়েছে গাছপালা বৈদ্যুতিক খুঁটি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে অগ্রসর হতে থাকা ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশায় বৃহস্পতিবার ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে তীব্র বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে তীব্র হাওয়া এবং বৃষ্টির জেরে অন্ধ্রপ্রদেশের রাস্তার ধারে বৈদ্যুতিক পোল ও গাছ-পালা উপড়ে পড়েছে। তবে এতে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। ঝড়ে হতাহতের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভারতের উপকূলীয় এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৮ লাখ মানুষকে। এদিকে ফণীর সম্ভাব্য তান্ডব মোকাবেলায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পশ্চিমবঙ্গে অনেক স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ৪৩টির বেশি ট্রেনের যাত্রা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়া টুডের। ঝড় ও বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে বাড়ি-ঘর ছাড়ছেন তারা। অন্ধ্রপ্রদেশের কাকদ্বীপের উপকূলীয় থানা এলাকায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় কাঁচা বাড়ির বাসিন্দাদের ইতোমধ্যে আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। উপকূলীয় রাজ্য ওড়িশায় অত্যন্ত ভারি ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত এলাকায় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে বইছে। এদিকে, ফণীর সম্ভাব্য তা-ব মোকাবেলার প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জরুরী বৈঠক করেছেন। ভারতের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনী (এনডিআরএফ) ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বৈঠকে ফণীর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় নেয়া প্রস্তুতির বিষয়ে নরেন্দ্র মোদিকে অবগত করেন। ঝুঁকিপ্রবণ রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতে মোদি তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বৃহস্পতিবার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশার পুরী উপকূল থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। বিকেলের দিকে পুরী শহরের দক্ষিণ উপকূলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ওড়িশা সরকার ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রায় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৪ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। এই রাজ্য থেকে মোট ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৫ জনকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ৪ হাজার ৮৫২টি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব পর্যটককে হোটেল ছেড়ে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। বাঙালী পর্যটকদের জন্য পুরী-কলকাতা বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। ১০৩টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পুরী, কেন্দ্রাপড়া, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, গজপতি, কটক, জাজপুরের আট লাখেরও বেশি মানুষকে ওড়িশা উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৮৭৯-য়েরও বেশি সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষদের এই সাইক্লোন সেন্টারেই আপাতত রাখা হয়েছে। নৌবাহিনী, উপকূল রক্ষা বাহিনী এবং বির্পযয় মোকাবেলা বাহিনীর ৭৮টি দল ইতোমধ্যে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসের ঘূর্ণিঝড় ফণী শুক্রবার ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করে সন্ধ্যার দিকে খুলনাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে পৌঁছাতে পারে। তবে ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে দেখা দিতে পারে শুক্রবার সকাল থেকেই। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
×