ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফণী মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ১১:০১, ৩ মে ২০১৯

  ফণী মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের (বিসিজেএফ) সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, উপকূলের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য ৪০ হাজার ৭১ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুত, সুপেয় পানি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ফণীর ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং তাদের সহায়তার জন্য আমরা ৪৭ লাখ ভলেন্টিয়ার নিয়োজিত করেছি। উপকূলের লোকজন অনেক সময় আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চায় না। আমরা তাদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে বলেছি। সরকারের যে প্রস্তুতি তাতে ফণী আঘাত করলেও প্রাণহানির কোন আশঙ্কা নেই।’ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফণীর ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশেষ দোয়া করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ডাঃ এনামুর রহমান আরও বলেন, আমরা খবর পেয়েছি ফণী উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হেনেছে। এরপর যদি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে, তাহলে দুর্বল হয়ে যাবে, তাতে বাংলাদেশের ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যাবে। যদি উত্তরে সরে যায় তাহলে বাংলাদেশের ক্ষয়-ক্ষতি বাড়তে পারে। এজন্যই আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ১৯ জেলায় অতিরিক্ত ৫ লাখ করে নগদ টাকা, ২০০ টন করে চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট করে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য ৩০ ওয়াটার ট্রাক মাউন্টেন পাঠানো হয়েছে। এসব ট্রাক লবণাক্ত পানিকে সুপেয় পানিতে রূপান্তর করে খাবার জন্য সরবরাহ করবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি সকালে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর (ছাত্রলীগ, যুবলীগ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের উপকূলীয় জেলাসমূহের সদস্যদের ফণী মোকাবেলায় সহায়তা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রামে আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকলেও কক্সবাজারে আঘাত হানার কোন সম্ভাবনা নেই। ফলে ঘূর্ণিঝড়ে রোহিঙ্গাদের ক্ষয়-ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই। তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ৩২শ’ ভলেন্টিয়ার প্রস্তুত করা হয়েছে। তারাও আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঝড় জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানছে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার কোন বিকল্প নেই। আপনারা জনগণকে সতেচন করার দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা এ ব্যাপারে আপনাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরও সহযোগিতা করতে চাই। আমরা আপনাদের জন্য যৌথ কর্মশালার আয়োজন করব। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বেড়ে গেছে। ফলে অনেকে দেশেই দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে পৃথক করা হয়েছে। আমাদের দেশে পৃথক মন্ত্রণালয় হওয়ার কারণে কাজ করতে সুবিধে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে। এজন্য ইতোমধ্যে আমরা মংলা এবং পায়রা বন্দরে বিশেষ করে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অর্ধেক এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারি করেছি। এরপরের সঙ্কেতটি আসবে মহাবিপদ সঙ্কেত। আমরা এখন মহাবিপদ সঙ্কেতের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’ শাহ কামাল বলেন, ‘সঙ্কেতের স্তরগুলো হচ্ছে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত হুঁশিয়ারি সঙ্কেত। ৫, ৬ ও ৭ হচ্ছে বিপদ সঙ্কেত। বিপদ সঙ্কেতগুলো বাংলাদেশে হয় বন্দরকেন্দ্রিক। ৮, ৯ ও ১০ নম্বর হচ্ছে মহাবিপদ সঙ্কেত। আমরা এখন মহাবিপদ সঙ্কেতের সামনে এসেছি। ইতোমধ্যে আমরা বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৪৭ লাখ স্বেচ্ছাসেবক আছে। পৃথিবীর বহু দেশে এত লোকই নেই। এসব স্বেচ্ছাসেবক জীবন বাজি রেখে কাজ করে। আমরা একটি মানুষকেও হারাতে চাই না। এ জন্য উপকূলীয় ১৯ জেলার সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিজেএফের সভাপতি কাওসার রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মহসীন উপস্থিত ছিলেন।
×