ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবহন সেক্টরে এখন ১০ নং সতর্ক সঙ্কেত চলছে

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৩ মে ২০১৯

 পরিবহন সেক্টরে এখন ১০ নং সতর্ক সঙ্কেত চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক পরিবহন আইনে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দেয়া সুপারিশসমূহ স্থান না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এই সেক্টরের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আইনে মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা না হলে পরিবহন খাতে পুঁজি প্রত্যাহার করে নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। পাশাপাশি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পথচারীদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে পরিবহন শ্রমিকদের শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, পরিবহন সেক্টরের জন্য এখন ১০ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত চলছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশীর মিলনায়তনে এক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন খাতে নানা সমস্যা নিয়ে মালিক শ্রমিকদের যৌথ সভায় ছয়টির বেশি সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। তারা প্রত্যেকেই এই সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যার কথা আলোচনা করেন। পাশাপাশি সঙ্কট সমাধানে সরকারের সহযোগিতাও চান। অনুষ্ঠানে বক্তারা সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, আইনটি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে পরিবহন নেতাদের মতামত কোনভাবেই প্রাধান্য দেয়া হয়নি। ফলে অনেকটা একতরফাভাবে আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তি ও জরিমানার বিষয়গুলো যুক্ত হয়েছে। এতে পরিবহন খাত হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। বক্তারা বলেন, এমনিতেই পরিবহন খাতে নানা সঙ্কট চলছে। নানা কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হলে এ খাত আরও পথে বসবে। পরিবহন খাতকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিপক্ষ না বানাতে পুলিশ প্রশাসনসহ সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা কারো প্রতিপক্ষ নই। জনস্বার্থে পরিবহন খাত মানুষকে সেবা দিয়ে আসছে। তাই এমন কিছু করা যাবে না যাতে পুরো শিল্প ক্ষতির মুখে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে ৭ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ঠিক তেমনি পরিবহন সেক্টরের জন্য কিন্তু ১০ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি সংসদ সদস্য শাজাহান খান। তিনি বলেন, যখন ঘূর্ণিঝড় আসে, তার হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয় বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়। ঠিক তেমনি আজ পরিবহন সেক্টরে চলা এই খারাপ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আপনাদের রক্ষা করবে। শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আরও বলেন, সড়ক আইন করে দুর্ঘটনা ঘটলেই পরিবহন মালিক-শ্রমিককে মামলা আর জরিমানা করা হচ্ছে। ফলে পরিবহন চালাতে পারছি না। আমাদের এ ব্যবসা থেকে সরে আসতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে কোটি কোটি টাকা জরিমানা করা হচ্ছে এসবের কারণে আমরা পরিবহন মালিকরা বিচলিত। দুর্ঘটনা মামলায় যদি এত টাকা জরিমানা করা হয় তাহলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান। যারা দোষ করবে তাদের বিচার আমরাও চাই। যাত্রীর কারণে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটল তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে মালিক-শ্রমিক সবাইকে সচেতন হয়ে গাড়ি চালাতে হবে। একই সঙ্গে যে আইন করা হয়েছে, সেই আইনেরও সংশোধন এনে পরিবহন ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শাজাহান খান বলেন, বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে মালিক ও শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা জরিমানার পাশাপাশি ও যাবজ্জীবনের সাজা দেয়া হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে এ খাতের সংশ্লিষ্টদের ভিটামাটি বিক্রি করতে হবে। এ খাত বাতিল করতে হবে। তিনি বলেন, ১০ নম্বর সতর্কসঙ্কেত মোকাবিলায় মালিক ও শ্রমিকদেরও নিজেদের কিছু দুর্বলতা, যেমন : ভুয়া লাইসেন্স ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। তেমনি আইনও সংশোধন করতে হবে। যৌথ সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, পরিবহন সেক্টর স্মরণকালের সর্বোচ্চ নির্যাতনের মধ্যে পড়েছে। একজন ড্রাইভার ১০ হাজার টাকা বেতন পান। দুর্ঘটনার ফলে তাকে এক থেকে দুই কোটি টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। তিনি এত টাকা কিভাবে দেবেন? তিনি তো নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, এখন গাড়ি চালালেও, না চালালেও জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু অন্যান্য খাত নিয়ে সরকারের এমন মাথাব্যথা নেই। সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সড়ক পরিবহন আইন করা হয়েছে, আমরা যে সুপারিশমালা দিয়েছিলাম তার কোন কিছুই পর্যালোচনা করা হয়নি। এমন অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটলে সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পরিবহন সেক্টরে কেউ আর বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না। যদি এ সমস্যার সমাধান না হয়, আমরা পুঁজি প্রত্যাহার করে ব্যবসা গুটিয়ে নেব। সভায় পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ওসমান আলী, সাদিকুর রহমান হিরু, আবদুর রহিম দুদু, হোসেন মজুমদার, আবুল কালাম, রমেশ চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।
×