ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৩ মে ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

গরমে টেকা যাচ্ছে না। তার ওপর যানজট। শহর ঢাকার রাস্তায় শুধু গাড়ি আর গাড়ি। গতি নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকতে হচ্ছে। দূরে কোথাও যাওয়া আসার প্রশ্নে কেঁপে উঠছে বুক। এ যেন যুদ্ধ। গন্তব্যে পৌঁছার লড়াই। শেষ হতে চায় না। গণপরিবহনে যাত্রীরা ঘুমিয়ে গল্প করে এমনকি এটা ওটা নিয়ে ঝগড়া করে সময় পার করছেন। ব্যক্তিগত গাড়িতে এসি ছেড়ে শীতল হওয়া যাচ্ছে বটে, যে কাজে বের হওয়া সেটি আর হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে মনে হয়েছে, একটা দম বন্ধ অবস্থা। অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে যানজট। এ অবস্থায় সচল আছে শুধু মোটরসাইকেলের চাকা। দু’চাকার বাহন জরুরী সেবা দিয়ে চলেছে বলা যায়। এটিকে শেষ আশ্রয় হিসেবে নিয়েছে রাজধানীবাসী। রাইড শেয়ারিং এ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া বাইক সাপের মতো আঁকা বাঁকা হয়ে ছুটছে। কখনও ট্রাফিক আইন মানছে। কখনও ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাকি সব গাড়ির কচ্ছপ গতি। এদিকে, মাত্র কয়েকদিন পর রোজা শুরু হবে। রোজার পর ঈদ। খুব অনুমান করা যায় ছবিটা। এ ছবি আঁতকে ওঠার মতো। একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যানজট অন্তত সহনীয় করা চাই। না করলেই নয়। উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। রাজধানীবাসী এ ব্যাপারে সচেতন। এর পরও দুর্ভোগ কমানোর জন্য কিছু কাজ করা যেতে পারে। কাজগুলো করার পরামর্শ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। গত বুধবার ছিল মে দিবস। বিশেষ এই দিবসে ঢাকায় কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বুধবার বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ গড়ে উদীচী। এখান থেকে আলোচনায় গানে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়। কখনও শিল্পীদের কণ্ঠে ছিল দুনিয়ার মজদুর ভাইসব আয় এক মিছিলে দাঁড়া...। কখনও তারা গেয়েছেন ‘হাতুড়িতে পিটাও লোহা মাকুতে দাও টান।’ এভাবে পুরনো গানগুলো নতুন করে জাগিয়ে দিয়ে যায়। আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগোর হে মার্কেটে যে অধিকার আদায়ের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শ্রমিকরা করেছিলেন তা সে সময় সফল হলেও কালের বিবর্তনে তার অনেক কিছুই আবারও আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। এখনও শ্রমিকরা ধারাবাহিক শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। মালিকরা এখনও শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার দেয়ার বিষয়ে সচেতন হননি। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার থেকে নানাভাবে বঞ্চিত করে যাচ্ছেন। এ ধরনের শোষণ বঞ্চনা থেকে শ্রমিকদের মুক্ত করা এবং তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে হলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। একই দিন তেজগাঁও, কাফরুল, বাড্ডা, কল্যাণপুর, উত্তরা, গেন্ডারিয়ায় সমমনা সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান আয়োজন করে উদীচী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছিল নাট্যায়োজন। এখানে পরপর চারটি পথনাটক পরিবেশিত হয়। সব নাটকেই খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষের অধিকারের কথা। তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান। পথনাটক পরিষদের আয়োজন সন্ধ্যায় শুরু হয়ে চলে রাত নয়টা পর্যন্ত। তারও একদিন আগে মঙ্গলবার স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। এভাবে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শ্রমিকের পক্ষে মেহনতী মানুষের পক্ষে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে। শেষ করা যাক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি প্রসঙ্গ টেনে। এ নিয়ে কী কা-ই না করল বিসিবি! মাশরাফিরা বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন যে জার্সি পরে সেটিতে পাকিস্তানের ভূত। মিরপুরের ফটোসেশন দেখে তাই ক্ষোভে ফেটে পড়ল ক্রিকেটপ্রেমীরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলল। সবুজ জার্সিতে লালের ছোঁয়া নেই। জাতীয় পতাকার ফিল পাওয়া যায় না। উল্টো মিলে যায় পাকি জার্সির সঙ্গে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে? এবং অতঃপর নাকে খত দিতে হলো ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তান প্রেমীদের। জার্সিতে পরিবর্তন তাই এখন সময়ের ব্যাপার। লাল-সবুজ জার্সিই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এটুকু আনন্দের। ভাললাগার। তবে যারা পাকিস্তানের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত অনুরাগীরা। একইসঙ্গে বিসিবি সভাপতি প্রতিবাদকারীদের পাকিস্তানে চলে যাওয়ার কথা বলে নিজের ভেতরের দৈন্যকে প্রকাশ করেছেন বলে মনে করছেন তারা। বোর্ড সভাপতিকে এ জন্য ক্ষমা চাওয়ারও দাবি উঠেছে।
×