ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোগ নিরাময়ে ফুল

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৩ মে ২০১৯

রোগ নিরাময়ে ফুল

জবা মালভেসি গোত্রের অন্তর্গত একটি চিরসবুজ পুষ্পধারী গুল্ম হলো জবা বা জবা ফুল। যার উৎপত্তি পূর্ব এশিয়াতে। এটি চীনা গোলাপ নামেও পরিচিত যদিও গোলাপের সঙ্গে এর কোন সম্পর্কই নেই। উচ্চতায় এই বৃক্ষ সাধারণত ৮-১৬ ফিট এবং প্রস্থে ৫-১০ ফিটের মতো হয়ে থাকে। এর পাতাগুলো চকচকে সবুজ এবং পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলগুলো লাল বর্ণের হয়ে থাকে। তবে জবা গাছের বিভিন্ন ধরনের সংকর প্রজাতিও রয়েছে, যার ফলে ফুলের রং হলুদ, কমলা, গোলাপি, সাদা প্রভৃতি হতে পারে। জবা ফুল সাধারণত গ্রীষ্ম ও শরতকালে ফোটে এবং প্রতিটা ফুলের ব্যস ৪ ইঞ্চির মতো হয়। সৌন্দর্যের বাইরেও জবা ফুলের বিশেষ কিছু ঔষধি গুণাবলী রয়েছে। সর্দি ও কাশিতে জবা ফুলের রস পানিতে মিশিয়ে খেলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি চোখ ওঠা রোগ দূর করতেও জবা পাতার প্রলেপ খুবই কার্যকরী। জবা পাতার রস তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগালেও চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। টগর ঝোপঝাড় বিশিষ্ট চিরহরিৎ বৃক্ষ টগর। বাংলাদেশ ও ভারতে দুই ধরনের টগর পাওয়া যায়। প্রথমটি হচ্ছে থোকা টগর এবং অপরটি একক টগর। থোকা টগরের গুচ্ছ পাপড়ি এবং একক টগরের এককধর্মী পাপড়ি হয়। টগর সমতল ভূমির বৃক্ষ হলেও পর্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এটি দেখতে পাওয়া যায়। টগরের কাণ্ডের ছাল ধূসর বর্ণের এবং গাছের পাতা বা ডাল ছিড়লে সাদা দুধের মতো কষ বের হয়, যার জন্য একে ক্ষীরী বৃক্ষও বলা হয়ে থাকে। তবে দুধ সাদা রঙের ফুল হওয়ায় বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে একে দুধফুল হিসেবেই ডাকা হয়। টগরের শেকড় তেতো ও কটু স্বাদের। তবে এর মূল এবং শেকড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে কৃমি ও চুলকানি দূর হয়। টগরের কাঁচা ডাল চিবিয়ে দাঁতের অসুখও সারায় অনেকে। এছাড়াও ঘামাচিতে চন্দনের মতো টগরের কাঠ ঘষলে কার্যকরী উপকার পাওয়া যায়। নয়নতারা নয়নতারার আদি উৎপত্তি স্থল হচ্ছে মাদাগাস্কারে। তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফ্রিকা মহাদেশসহ আরও কিছু দেশে এর দেখা পাওয়া যায়। নয়নতারা মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রজাতি। এটি একটি বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত ৬০-৮০ সেমি পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এদের পাতা আয়তাকার ও গোড়ার দিকে অনেকটা ডিম্বাকৃতি ধরনের, যা লম্বায় ৪-৭ সেমি এবং মসৃণ ধর্মী। গন্ধবিহীন পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলটি সাদা বা গোলাপি রঙের হয়। পুরো ফুলটি একরঙা হলেও মধ্যবিন্দুটি ভিন্ন রঙের হয় যেমন, গোলাপির মাঝে হলুদ কিংবা সাদার মাঝে লাল। নয়নতারা ফুল চওড়ায় ৩-৩.৫ সেমি ও লম্বায় ২.৫ সেমি হয়ে থাকে এবং এর দলনল বেশ সরু। নয়নতারা বৃক্ষের পাতা, ফুল ও ডালে বহু মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায়। ৭০টিরও বেশি উপক্ষার পাওয়া যায় এ বৃক্ষ থেকে। ভিনক্রিস্টিন ও ভিনব্লাস্টিন নামক উপক্ষার দুটি লিউকেমিয়া রোগে এর বিশেষ ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও কৃমি রোগে, মধুমেহ, রক্ত প্রদরে, সন্ধিরাত, মেধাবৃদ্ধিতে, রক্তচাপ বৃদ্ধিতে, বহুমূত্রসহ বিভিন্ন রোহে এর ব্যবহার রয়েছে। বোলতা বা এ জাতীয় প্রাণীর হুলের যন্ত্রণায় বা কীট দংশনে দ্রুত উপশম পেতেও নয়নতারা ফুল বা পাতার রস ব্যবহার করতে দেখা যায়। বকুল বকুল ফুল দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এটি জন্মে। এটি একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ। দেখতে তারার মত হলুদাভ বা ক্রীম রঙের সুবাসিত বকুল ফুল আকারে ১ সেমি এর মতো হয়ে থাকে। বকুল ফুলের রস হৃদযন্ত্রের অসুখ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও শুকনো ফুলের গুঁড়া দিয়ে আহওয়া নামক এক ধরনের কঠিন জ্বর, মাথা ব্যথা, ঘাড়-কাঁধসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে সৃষ্ট ব্যথা নিরাময়ে, মাথা ঠান্ডা রাখতে ও মেধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বকুলের কাণ্ড থেকে পাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরিকৃত এক ধরনের ওষুধ দাঁত ও গলার অসুখ নিরাময়ে, দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে এবং জ্বর ও ডায়রিয়া থেকে আরোগ্য লাভ করতে ব্যবহার করে ফিলিপিন্সের মানুষ। বকুলের পাতা সিদ্ধ করে মাথায় দিলে মাথা ব্যথা যেমন কমে যায়, তেমনি পাতার রসও চোখের জন্য বেশ উপকারী। অন্যদিকে প্রতিদিন ৩-৪টি কাঁচা বকুল ফল চিবিয়ে খেলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়। এছাড়াও বকুল গাছের ছাল দিয়ে শরীরে কাটা ছেড়ার ক্ষত পরিষ্কার করা যায় এবং বকুল ও তেঁতুল গাছের ছাল একসঙ্গে সিদ্ধ করে পাচনের মাধ্যমে তৈরিকৃত ত্বকের নানারকম তরল ওষুধও ব্যবহার করা হয়। পদ্ম ভারতের জাতীয় ফুল পদ্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera. পদ্মফুল পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটা শুরু হয়। তবে শরতে অধিক পরিমাণে ফুল ফোটে এবং এর ব্যপ্তি থাকে হেমন্তকাল অবধি। ফুল আকারে বড় এবং অসংখ্য নরম কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্টি পদ্ম ফুলের। পদ্ম ফুল ভেষজগুণ সমৃদ্ধ ফুল গাছ। এর ডাটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। মানব দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে অতুলনীয়। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে বেশ উপকারী। এর পাতার পরিধি পুরো গোল, শালুকের মতো একদিকে খাঁজকাটা ধরনের নয়। শ্বেতী রোগ ভাল এবং হৃদশূলের যন্ত্রণা কমানোর ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা অতুলনীয়। এছাড়াও পদ্ম মধু থেকে চোখের ওষুধ তৈরি করা হয়। ধুতুরা ধুতুরা হচ্ছে- Solanaceae পরিবারের Datura গণের এক প্রকার বিষাক্ত উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম Dutura metel। এই বৃক্ষের সমস্ত অংশই বিষাক্ত। এতে বিদ্যমান Tropane Alkaloids নামক বিষ দ্বারা মানুষ বা পশুপাখির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এরপরও ভেষজ চিকিৎসায় এর বিস্তৃত ব্যবহার রয়েছে। চৈনিক ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে বর্ণিত ৫০টি প্রধান উদ্ভিদের একটি হলো ধুতুরা। ধুতুরার বীজ থেকে চেতনানাশক পদার্থ তৈরি করা হয়। শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য ধুতুরার পাতা, ফুল, ফল খুবই উপকারী। পাশাপাশি বাতের ব্যথা কমাতে এর পাতার রস সরিষার তেলের সঙ্গে ব্যবহার করলেও আরোগ্য লাভ হয়। এছাড়াও টাক সমস্যা দূর, যোনিপথ শক্ত এবং যৌনশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এই উদ্ভিদের কার্যকারিতা রয়েছে।
×