ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিৎজার পুরস্কার-২০১৯

বহুমুখী কাব্যের জনপ্রিয় কবি

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৩ মে ২০১৯

বহুমুখী কাব্যের জনপ্রিয় কবি

মীম মিজান ॥ সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং সঙ্গীতের সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে বহুল সমাদৃত পুলিৎজার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ১৯১৭ সালের ৪ জুন চালু হওয়া পুলিৎজার পুরস্কারের ঘোষণা প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে দেয়া হয়। প্রতিবছর ২১টি ক্ষেত্রে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। লেটারস ড্রামা ও মিউজিক শিরোনামে সাতটি ক্যাটাগরিতে প্রদত্ত সাহিত্যের এই সাতটি ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে ফিকশন ও পোয়েট্রি। ‘ফিকশন’ বিভাগে এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন রিচার্ড পাওয়ার্স তার ‘দি ওভারস্টোরি’ নামক উপন্যাসের জন্য। চলতি বছরের এ পুরস্কারের কবিতার পুরস্কার পেয়েছে ফরেস্ট গেন্ডারের ‘বি উইথ’। ফরেস্ট গেন্ডার একজন বহুমাত্রিক কবি ও শিল্পমানস। এই সম্মান অর্জন করায় বিশ্বব্যাপী সাহিত্যপ্রেমীদের মাঝে তিনি আলোড়িত হচ্ছেন। বিশেষ করে কবিতা প্রেমিদের মাঝে। ফরেস্ট গেন্ডার একাধারে একজন কবি, গদ্যকার, ঔপন্যাসিক, সমালোচক এবং অনুবাদক। কবিতা লিখে মানুষের মনকে উদ্বেলিত করেছেন যিনি তিনিই ফরেস্ট গেন্ডার। গেন্ডার আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার মোজাভে মরুভূমিতে ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভার্জিনিয়াতে বেড়ে ওঠেন। কলেজ অব উইলিয়াম এ্যান্ড ম্যারিতে তিনি পড়াশুনা করেন। এক স্কুল শিক্ষিকা মায়ের ঘরে দু’জন বোনসহ কায়ক্লেশে পড়াশুনা চালিয়েছিলেন তিনি। তবে নানাবিধ জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সখ ছিল তার। আর সেখান থেকেই বিভিন্ন জাতি, এলাকা, মানুষের সাথে মিশে নিজেকে করেছেন বৈচিত্র্যময়। কলেজে তার অধীতব্য বিষয় ছিল ভূতত্ত্ব। সানফ্রানসিসকো স্টেট ইউনিভারসিটি থেকে সাহিত্যের উপর এম. এ ডিগ্রী লাভের পর তিনি মেক্সিকো চলে যান। মেক্সিকো থেকে তিনি চলে যান আরকানসাসে। সেখানে তিনি গভীরভাবে কবিতায় ঝুঁকে গেলেন। এ সময় তিনি তার ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান কাব্যজমিনে প্রথিত করতে থাকেন। ফলে পাঠককূলসহ প্রায় সর্বত্রই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। কবিতা, উপন্যাস, সম্পাদনা, অনুবাদ, সংকলন ইত্যাদি মিলে তার ষাটোর্ধ গ্রন্থ রয়েছে। তার বিখ্যাত কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে, ‘এইকো এ্যান্ড কোমা (২০১৩), ‘কোর স্যাম্পলস ফ্রোম দ্য ওয়ার্ল্ড (২০১১)’, ‘আই এগেইনস্ট আই(২০০৫)’, ‘দ্য ব্লু রক কালেকশন (২০০৪)’, ‘টর্ন এওয়াক (২০০১)’ ইত্যাদি তার প্রোজ্জ্বল কাব্যগ্রন্থ। বৃহদায়তনের কবিতায় পারঙ্গম গেন্ডার তার কাব্যে বৈচিত্র্যময় বিষয়াদির সংমিশ্রণ করেছেন। স্বতন্ত্রধারার এক কাব্যকলাও তিনি প্রয়োগ করেছেন তার কাব্যের পরতে পরতে। ‘বোস্টন রিভিউ’তে সমালোচক বারবারা ফিসচার গেন্ডারের কবিতা সম্পর্কে লিখেছেন, ‘এক বলিষ্ঠ অগ্রপথিক এবং তেজঃপূর্ণ ভাষার ব্যবহারকারী। যা পরিচিত, সংবেদনশীল এবং প্রেমঘটিত অভিজ্ঞতার বাহক।’ বি উইথ বা তার সঙ্গে নামক কাব্যগ্রন্থটি তিনি তার প্রিয় স্ত্রী সি ডি রাইট এর বিচ্ছেদে শোকগাথামূলক কবিতায় ভরিয়েছেন। কবিতাগুচ্ছ পড়লে পাঠকের চোখ অশ্রুস্নাত হয়। মনে উদ্রেক হয় ব্যথার কারবালা। এই কাব্যগ্রন্থটিই এবার (২০১৯) তার ঝুলিতে এনে দেয় সাহিত্যের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার পুলিৎজার। ওয়াশিংটন পোস্ট বুক ওয়ার্ল্ড এ বি উইথ সম্পর্কে শংসা করা হয়েছে, ‘এক জটিল পাঠ্য অভিজ্ঞতা কাক্সিক্ষত সৌন্দর্যের সাথে প্রথিত হয়েছে এই কাব্যে।’ গেন্ডারের পুরস্কার বিজয়ী কবিতাগুচ্ছ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। ‘’জীবন, মৃত্যু এবং প্রত্যেক ক্ষুদ্র দিক গেন্ডারের এই মর্মস্পর্শী কাব্যগ্রন্থে উজ্জীবিত।’ (পাবলিশার্স উইকলি) তার করা অনুবাদের অনন্য কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মেক্সিকোর কবি পুরা লোপেজ কোলোমে এবং কোরাল ব্রাকো এর দু’টো কাব্যগ্রন্থ। বলিভিয়ান প্রখ্যাত কবি জাইমে সায়েঞ্জ এর ‘ইমানেন্ট ভিজিটর : সিলেক্টেড পোয়েম অব জাইমে সায়েঞ্জ’ এবং ‘দ্য নাইট’ (২০০৭) এর অনুবাদ করেন। এই অনুবাদে তাকে সহযোগিতা করে কেন্ট জনসন। ‘দ্য নাইট’ এর জন্য গেন্ডার ‘পেন ট্রান্সলেশন এওয়ার্ড’ পান। তিনি গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠকবি খ্যাত পাবলো নেরুদার কবিতার অনুবাদও করেছিলেন। ‘দেন কাম ব্যাকঃ দ্য লস্ট নেরুদা পোয়েমস’ (২০১৬) নামে তিনি নেরুদাকে অনুবাদ করেন যাতে ‘দ্য এসেনশিয়াল নেরুদা: সিলেক্টেড পোয়েমস’ (২০০৪) অন্তর্ভুক্ত। সম্পাদনার হাতও নিপুণ ছিল গেন্ডারের। তিনি দোভাষী কাব্যসংকলন ‘মাউথ টু মাউথঃ পোয়েমস বাই টুয়েলভ কনটেম্পোরারি মেক্সিকান উইমেন, (১৯৯৪) সংকলন করেন। ২০০৮ সালে তার ‘এজ আ ফ্রেন্ড’ বা বন্ধু হিসেবে নামক একটি উপন্যাস প্রকাশ হয়। উপন্যাসটি নবকাঠামোর জন্য পাঠক ও সমালোচক মহলে নন্দিত হয়েছিল। এছাড়াও ২০১৪ সালে তার ‘দ্য ট্রেস’ নামক আরেকটি উপন্যাসও প্রকাশ হয়েছে। গেন্ডার ‘হোয়াইটিং রাইটার্স এওয়ার্ড’, ‘হোয়ার্ড ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড’, ‘দ্য জেসিকা নোবেল ম্যাক্সওয়েল মেমোরিয়াল প্রাইজ’ এবং ‘গারট্রুড স্টেইন এওয়ার্ডস ফর ইনোভেটিভ নর্থ আমেরিকান রাইটিং’ সম্মাননা, পদক এবং পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি মেধাবী হওয়ায় অনেকগুলো বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেলোশিপ লাভ করেন। তিনি হার্ভার্ড ইউনিভারসিটি ও ব্রাউন ইউনিভারসিটিতে অধ্যাপনা করেছেন। সাংসারিক জীবনে গেন্ডার সমকালীন এক কবি সি ডি রাইটকে তার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাদের সংসারে আর্টিস্ট-চারুশিল্পী ব্রেচট রাইট গেন্ডার নামে একপুত্র সন্তান আছে। গেন্ডারের ছায়ার মতো মায়া-ভালোবাসার মানুষটি ২০১৬ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। রোদে দ্বীপে তিনি বসবাস করেন। ‘লস্ট রোডস পাবলিশারস’ নামক একটি ছোট্ট প্রকাশনা সংস্থার তিনি সহসম্পাদক। সেখানে প্রায় তিরিশ বছর ধরে তার কবি সহধর্মিণীসহ কাজ করতেন। উপর্যুক্ত তথ্যাদির উৎসস্থল হচ্ছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘আমাজন’, ‘পোয়েট্রি ফাউন্ডেশন’, ‘নিউইয়র্ক টাইমস’। একজন কবি যদি বহুমুখী কাব্যের অধিকারী হন, তবে তার কাব্য পাঠের জন্য মনের মধ্যে এক ধরনের বাসনা কাজ করে। আর যদি তিনি কবিতায় পুলিৎজার পুরস্কার পান তবে সেই বাসনাটা প্রায় অদম্য হয়ে ওঠে। সেই অদম্য বাসনা পূরণ করার জন্য পোয়েম হান্টার থেকে ফরেস্ট গেন্ডারের তিনটি কবিতার বাঙলায়ন করেছি। দ্রষ্টা আর দৃষ্টিটি যা ধরে রেখেছে এটার ক্ষুরের মাথায় একটি বিহগের পালকগুলি নীল হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক ঘুমহীনতা গঠিত, অন্তরালে, এই কীটগুলির ঘ্যাঙানিতে। তাই একটি কবাট উত্তোলিত হলো দেখার আহ্বান জানাচ্ছে খুবই দ্ব্যর্থক অন্তর যা উন্মুক্ত থাকে যাতে পাখিরা নিজেই ঢুকতে পারে। যখন সেখানে সমীরণ থাকে তখন সঙ্গীতকে সংক্ষিপ্ত করে। দৃশ্যমান হয় আর এটার অবশিষ্টাংশ একটি দাগ, কী? নিচুতে চাপাহাসি হাসছে আর নিচুতে ঔজ্জ্বল্য। সেই অনুষঙ্গটি হতে পারে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল। (দ্রষ্টা কবিতাটি ডরঃহবংং কবিতার বাঙলায়ন) আচ্ছাদন আমি, যখনি তোমার কথা ভাবি বিড়ালের এঁদো পথ দেখি তোমার রসাইঘরে, প্রভু রোদন করে তোমার উন্মেষে, ব্যক্তিগত কল্পনার কাজ, কালিগেনের* লোকেরা কখনওই পারবে না ভ্রমের ভেষজ মেশাতে তোমার জলে আমাকে বলতে দাও যে, আমি তোমাকে কল্পনা করেছি দর্পণের সামনে অনাবৃত অতিথি হিসেবে তাদের ফড়িং অবয়বগুলিকে মানুষের খোলক ছেড়ে পালাতে দাও! (‘আচ্ছাদন’ কবিতাটি ঞযব ঞধঢ়বংঃৎু নামক কবিতার বাঙলায়ন) কালিগেনের টীকা কালিগেন পানি আমেরিকান এক ধরনের বোতলজাত পানির নাম। এই প্রতিষ্ঠানটি পানি পরিশোধন, বিপনন ইত্যাদিতে খ্যাত। আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং কারখানা অঞ্চলে এই প্রতিষ্ঠান পানি সরবরাহ করে। জলের মনঃসমীক্ষণ এখানে ঘড়িটি নিস্তব্ধ। বৃষ্টির সাধুবাদীতার ভিতর দিয়ে, একজন ললনা অবসন্নতাকে তুলে ধরেছে। একটি গ্লাসে বড়ি স্তরে স্তরে দ্রবীভূত। গন্ধবহ উত্তোলিত করেছে শাখাগুলিকে, আধারে অসামঞ্জস্য জীবন্ত করেছে। সে তার আলখিল্লা খুলে ফেললো, খাটের পায়ার উপরে রাখল। সম্মোহনী চিকুরের পদ। প্রায়ই উষসী সে ওটার মতোই কফি বানায়। নিচু বজ্রধ্বনি, বিজলীর ঝলকানি, সারমেয়গুলি উদ্বিগ্ন। ছাদে বরিষণ, বন্ধুরা আমার সমাধি দিয়ে হাঁটছে, তার মা তাকে বলেছে, এগুলোই, যা আমি শুনতাম। আর কেন নয় ভেজা রাস্তায় গাড়ির হিসহিস ও জাগরিত হওয়া স্বচ্ছতায় ফেটে পড়ে পথআলোর শিবিরের নিচে, সন্ধ্যারাগ হয়ে পিটপিট করে। তীর্যক চোখে তাকিয়ে দেখে তার মতো সকাল সকাল আলো জালানো বাড়ির বাতায়নে অপরিচিত অবয়ব। এভাবেই সে সম্মোহনীভাবে চালনা বন্ধ করে। গোসলের জলাধারটি উপচে পড়ছে। (‘জলের মনঃসমীক্ষণ’ কবিতাটি Psychoanalysis Of Water নামক কবিতার বাঙলায়ন)
×