ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বসিলায় জঙ্গী আস্তানা

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ৩ মে ২০১৯

 বসিলায় জঙ্গী আস্তানা

জঙ্গীবাদ বিশ্বজুড়ে নৃশংস আত্মঘাতী অভিযানে উন্মত্ত এক সন্ত্রাসী ধ্বংসযজ্ঞ, যেখানে মানুষের মূল্যবান জীবন অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুগহ্বরে পতিত হয়। ধর্মীয় মৌলবাদকে কেন্দ্র করে জঙ্গী গোষ্ঠী সাংগঠনিকভাবে নিজেদের মধ্যে সংহতি তৈরি করে। যে বোধে এই ধর্মীয় উন্মাদনা সেখানে যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ থাকে না। ধর্মের নামে হিংসায় উন্মত্ত হয়ে এমন এক পৈশাচিক মরণখেলায় মেতে ওঠে যেখানে তাদের প্রাণও নিরাপদ থাকে না। শান্তির বার্তা নিয়ে আসা বিভিন্ন ধর্মের মূল বাণীকেই বার বার ক্ষতবিক্ষত করে নির্বোধের মতো জিঘাংসা চরিতার্থ করতে তারা এতটুকু ভাবে না। ধর্মের খোলসে উদ্দেশ্যহীন এমন ভুল পথ আর মূল্যবান জীবন যেভাবে একসুতায় গেঁথে যায় তা সভ্যতার চরম বিপর্যয়। মৌলবাদীদের তা সে যে ধর্মেরই হোক না কেন তাদের সুতীব্র আঁচড় সমাজ ও ব্যক্তি জীবনকে যেভাবে তছনছ করে দেয়, তা সুস্থ ও স্বাভাবিক পথ পরিক্রমার এক অনধিগম্য প্রতিবন্ধকতা। এক প্রচন্ড ঘোরের মধ্যে পবিত্র ধর্মকে বিভিন্ন অপকৌশল প্রয়োগে ধুলায় লুটিয়ে দেয় যাবতীয় মূল্যবোধ। ধর্ম মানুষের আত্মিক সম্পদ। চৈতন্যের এক অপূর্ব সমন্বয়, যেখানে সর্বমানুষের জয়গান ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয়। ধর্ম নিয়ে হানাহানির বিপন্নতায় আধুনিক বিশ্ব আজ এক চরম নৃশংসতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো। জঙ্গীবাদের বিষ কামড়ে সাধারণ মানুষের জীবন আজ কঠিন সংহারের আবর্তে। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া কিংবা কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ড এবং সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর ন্যক্কারজনক হামলার কারণে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই এই প্রাণঘাতী সহিংসতার বলি হয়েছে। ধর্মের কোন পরিচয় কিংবা চিহ্ন সেখানে থাকে না। দৃশ্যমান হয় এক জঘন্য নিষ্ঠুর আক্রমণের উন্মত্ত জিঘাংসার বিস্ফোরণ। বাংলাদেশেও জঙ্গী উত্থান আর বিকাশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই সময়ের এক বিক্ষুব্ধ দুঃসহ প্রতিক্রিয়া। যা মুক্ত চিন্তা, বিজ্ঞান চেতনা এবং সুস্থ সংস্কৃতি চর্চাকে নানা মাত্রিকে ভীতিকর পর্যায়ে নিয়ে যেতে এক অগ্নিস্নাত পথ পরিক্রমাকে আঁকড়ে ধরেছে। বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা জঙ্গীদের এমন আস্তানা আইনশ্্ৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা চিহ্নিত হয়ে শেষ অবধি বিলুপ্ত হতেও সময় নেয়নি। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় মেট্রো হাউজিংয়ের একটি টিনশেডের বাড়িতে জঙ্গীদের আস্তানা খুঁজে পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযান চালাতে গেলে ভেতরে থাকা জঙ্গীরা গুলি চালায়। পরমুহূর্তেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুই জঙ্গী আত্মঘাতী বোমায় নিজেদের শেষ করে দেয়। জঙ্গী দমনে বর্তমান সরকার ‘জিরো টলারেন্স’সহ বিভিন্ন সময়ে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেসব অভিযান সফলও হয়েছে। তারপরেও জঙ্গীবাদকে সমূলে উৎখাত করা পুরোপুরিভাবে সম্ভব হয়নি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা এসব মৌলবাদী সংগঠনের সদস্যরা এখনও বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে সম্প্রসারিত এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কোনভাবেই কল্যাণকর বোধ আর বিবেচনায় শান্তির বার্তা বয়ে আনতে পারে না। এমন সংঘবদ্ধ চক্রের ওপর সর্বক্ষণিক নজরদারি বাড়াতে হবে। তবে এ দায়িত্ব শুধু সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নয়। প্রত্যেক মানুষকে নিজস্ব দায়বদ্ধতায় এমন হিংস্র, ধ্বংসকারী গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে হবে। ব্যক্তি মানুষের সচেতনতা, ধর্মীয় যথার্থ বোধ, সঙ্গে মানবিক চৈতন্যের সুষ্ঠু আর সুস্থ অভিব্যক্তি এমন নৃশংস বেড়াজাল থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করে আনবে। নিরাপদ আর জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করুক, এটাই প্রত্যাশা।
×