ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৌসুমীদের জয় ৩-০ গোলে

মঙ্গোলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে বাঘিনীরা

প্রকাশিত: ১২:২৫, ১ মে ২০১৯

মঙ্গোলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে বাঘিনীরা

রুমেল খান ॥ তার প্রিয় কার্টুন ‘মোটু-পাতলু’। নামটি তার যেমন মিষ্টি, চেহারাটাও দারুণ মিষ্টি। মনিকা চাকমা। খেলেন এ্যাটাকিং মিডফিল্ড পজিশনে। বাংলাদেশ দলের আশা-ভরসার অন্যতম প্রতীক মনিকা। বল নিয়ে দ্রুতগতিতে চমৎকার ড্রিবলিং করে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। খেলতে পারেন দুই পায়েই। শূটিং, পাসিং, হেডিং, বল কেড়ে নেয়া... সবক্ষেত্রেই কোচের ফুল মার্কস পাবেন তিনি। সে কারণেই কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের প্রথম একাদশে বরাবরই থাকেন ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এই ধরণীতে আসা মনিকার নামটি। এই যেমন মঙ্গলবার শুধু কোচ নয়, ম্যাচ এ্যাডজুকেটর কমিটির চোখেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেলেন খাগড়াছড়ির সুমন্তপাড়ার কৃষক বিন্দু কুমার এবং গৃহিণী রবি মালার পাঁচ সন্তানের সবার ছোট ও আদরের নয়নমণি সুদর্শনা মনিকা। তার নয়নাভিরাম নৈপুণেই বাংলাদেশ দল মঙ্গলবার অমঙ্গল ঘটিয়ে মঙ্গোলিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পৌঁছে গেছে ‘বঙ্গমাতা অনুর্ধ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ’ ফুটবলের প্রথম আসরের স্বপ্নের ফাইনালে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সেমিফাইনাল ম্যাচে মনিকা করেন ম্যাচের প্রথম গোলটি। দ্বিতীয় গোলটি করে এ্যাসিস্ট। তৃতীয় গোলেও ছিল তার পরোক্ষ অবদান। পুরো খেলায় নিজে খেলেছেন, দলকে খেলিয়েছেন, মাঝমাঠের দায়িত্ব একাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কাজেই এমন খেলোয়াড়ই যে ম্যাচসেরার ৫০০ ডলার পুরস্কার পাবেন এ আর আশ্চর্য কী! এ জয়ে ফাইনালে নাম লেখালো বাংলার বাঘিনীরা। এখন তারা আগামী ৩ মে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে মুখোমুখি হবে আরেক ফেবারিট লাওসের। পুরো ম্যাচে বলতে গেলে একতরফা-দাপটের সঙ্গেই খেলেছে লাল-সবুজরা। ম্যাচের ৮০ শতাংশ বলই দখলে রেখেছে তারা। কর্নার, আক্রমণ, গোলমুখে শট ... সবকিছুতেই প্রতিপক্ষের চেয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তারা। অথচ তারপরও গোলের দেখা পেতে মৌসুমীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। কিন্তু মঙ্গোলিয়া দলের প্রায় সবাই নিচে নেমে অতি রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলায় তাদের রক্ষণদুর্গ ভাঙ্গতে হিমশিম খাচ্ছিল কোচ ছোটনের শিষ্যারা। এই ম্যাচে চোটের কারণে দুই নিয়মিত ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না এবং কৃষ্ণা রানী সরকার না খেলায় তাদের পরিবর্তে খেলানো হয় মারজিয়া আক্তার এবং সাজেদা খাতুনকে। কিন্তু এই দু’জন স্বপ্না-কৃষ্ণার অভাবটা সেভাবে পূরণ করতে পারছিলেন না। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সাজেদার পরিবর্তে নামানো হয় আরেক ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুনকে। এরপরই আক্রমণের ধার আরও বেড়ে যায় স্বাগতিক দলের। একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে আরও দুই গোল আদায় করে নিশ্চিত করে জয়। তবে বাংলাদেশ দলের এই ম্যাচে ১৯টি আক্রমণ করে মাত্র তিন গোলে জেতাটাও আগের দুই ম্যাচের জয়ের মতোই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বৈকি! প্রথম মিনিটেই বল নিয়ে মঙ্গোলিয়ার বক্সে ঢুকে পড়েন সাজেদা। কিন্তু বক্সে জটলার মধ্যে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। পরের মিনিটেও একইভাবে সাজেদার আক্রমণ রুখে দেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক। ১৬ মিনিটে মারিয়ার কর্নারে আঁখির হেড অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। পরের মিনিটেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ডজ দিয়ে চমৎকারভাবে বল কাটিয়ে নিয়ে কোনাকুনি শট নেন সানজিদা। কিন্তু সাইডপোস্টে বল লেগে তা ফিরে আসে। ২১ মিনিটে বক্সের ভেতর আঁখির শট প্রতিপক্ষ এক ডিফেন্ডারের বুকে লেগে গতিপথ বদলে যায়। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে (৪৫+১ মিনিটে) ম্যাচে গোল করে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। সতীর্থের বাড়িয়ে দেয়া বল হেড দিয়ে কিছুটা সামনে পাঠিয়ে নিজেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের মাথা থেকে নয়নাভিরাম বাঁ পায়ের উড়ন্ত ভলিতে সেটা জালে পাঠিয়ে দলকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন মনিকা চাকমা (১-০)। এরপর স্বস্তি নিয়ে বিশ্রামে যায় টিম বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধেও মঙ্গোলিয়ার ফুটবলাররা ব্যস্ত ছিল বাংলাদেশের আক্রমণ ঠেকাতেই। ৬৯ মিনিটে মনিকা চাকমার থ্রু পাস থেকে বক্সের ভেতর ঢুকে বাঁ পায়ের চমৎকার গড়ানো প্লেসিং শটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মিডফিল্ডার মারজিয়া আক্তার (২-০)। ৮৫ মিনিটে মনিকা চাকমার পাসে বল পান শামসুন্নাহার সিনিয়র। তিনি নিজে শট না নিয়ে বলটা বাড়িয়ে দেন সতীর্থের উদ্দেশে। বক্সলাইন থেকে ডান পায়ের কৌণিক শটে লক্ষ্যভেদ করেন বদলি ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন (৩-০)। নিজেদের গ্রুপ ম্যাচে বাংলাদেশ ২-০ গোলে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ২-১ গোলে কিরগিজস্তানকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হবার পাশাপাশি সেমিতে নাম লেখায়। পক্ষান্তরে নিজেদের গ্রুপ ম্যাচে পূর্ব এশিয়ার দেশ মঙ্গোলিয়া তাজিকিস্তানকে ৩-০ গোলে হারায়। তবে পরের ম্যাচে লাওসের কাছে হেরে যায় ০-৫ গোলে। তারপরও গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ চারে চলে যায় তারা। বাংলাদেশ-লাওস ফাইনাল ৩ মে আবারও তারিখ পরিবর্তন হলো প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘বঙ্গমাতা অনুর্ধ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালের তারিখ। একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করে তার ফাইনালের তারিখ দু’দু’বার বদলে ফেলে অনন্য এক রেকর্ডই গড়ে ফেললো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। প্রথমবারই আসরটি আয়োজন করতে গিয়ে ‘ভজকট’ পাকিয়ে ফেলেছে তারা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তারা জানিয়েছিল, ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ৩ মে। কিন্তু গত ২৪ এপ্রিল বাফুফে গণমাধ্যমকে জানায়, ফাইনাল একদিন পিছিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ৪ মে। কিন্তু তাদের ভাষ্যমতেÑ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে সেই আগের তারিখ ৩ মেতেই।
×