ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে গেছে হাওয়া

ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরাও বিএনপির পথে

প্রকাশিত: ১১:২৩, ১ মে ২০১৯

ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরাও বিএনপির পথে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ হঠাৎ করেই রাজনীতির বরফ গলতে শুরু করেছে। বিরোধী জোটের আকস্মিক ইতিবাচক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অনেকেই হতবাক। আবার এ নিয়ে গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তোলপাড়। চুলচেড়া বিশ্লেষণ চলছে। আছে চায়ের টেবিলে ঝড়। চলছে ভাল মন্দের হিসাব-নিকাশও। রাজনীতির জয় পরাজয়ের আলোচনাও আছে সমানতালে। অর্থাৎ দলীয় সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে সাংসদদের শপথ ইস্যুটি রাজনৈতিক অঙ্গনে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। কথা হলো সাংসদদের শপথ ইস্যুতে বিএনপি হার্ডলাইন থেকে সরে আসার পর এখন অনেকটাই নমনীয় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম। তারাও নিজ দলের দুই সাংসদকে মান অভিমান ভুলে কাছে টানার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা গেছে, সাংসদদের শপথ ইস্যুতে বিএনপি ও গণফোরাম ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রধান দুই দলের ওপর চরম ক্ষুব্ধ শরিক নেতারা। আসম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল -জেএসডি, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মাহামুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে কিছুটা মান অভিমান পর্ব চলছে গণফোরামের। গণফোরাম ও বিএনপির সাংসদরা শপথ নেয়ার পক্ষে ছিলেন না শরিকদের কেউই। শপথ ইস্যুতে সবচেয়ে কঠোর অবস্থানে ছিলেন শরিক নেতারা। এ নিয়ে বারবার কথা বলেছেন রবসহ অনেকে। হঠাৎ করে বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এর হাওয়া লেগেছে গণফোরামেও। তাই এই ইস্যুতে কামাল হোসেনের সঙ্গে শরিক নেতাদের কিছুটা কথা কাটাকাটিও হয়েছে। হতাশও হয়েছেন শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তবে শেষ পর্যন্ত গণফোরামের পক্ষ থেকে তাদের বুঝিয়ে জোটে রাখার চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার মির্জা ফখরুলের সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতা মাহামুদুর রহমান মান্নাকে। জানা গেছে, বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ফ্রন্টের শরিক নেতারা কিছুটা নমনীয় হচ্ছেন। তারাও কামাল হোসেনের দিকে তাকিয়ে এই প্ল্যাটফরমের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকছেন। তবে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপিসহ গণফোরামের ওপর শরিক নেতাদের চাপ বাড়ছে। তারা মনে করেন, সরকারবিরোধী কর্মসূচী দিলেই সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেবে। এরমধ্য দিয়ে চাপের মুখে সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে ফের নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে নিয়ে গঠন করা হয় নতুন রাজনৈতিক মোর্চা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলে প্রার্থীদের ভরাডুবির ঘটনা ঘটে। মাত্র আটটি আসন পায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এরমধ্যে ছয়টি বিএনপি আর দুটি গণফোরামের। গণফোরাম গঠনের পর এবারই প্রথম দলটি সংসদে আসন পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ফের নির্বাচনের দাবি জানানো হয় ফ্রন্টের পক্ষ থেকে। ঐক্যফ্রন্টের এমন সিদ্ধান্তে রাজনীতির মাঠে বেশ অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ ইস্যুতে চলে নানা নাটকীয়তা। এক পর্যায়ে গণফোরামের নির্বাচিত প্রার্থী সুলতান মুহাম্মদ মনসুর প্রথমে শপথ নেন। এরপর নেন মোকাব্বির খান। সর্বশেষ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান জাহিদকে বহিষ্কার করে বিএনপি। ২৭ এপ্রিল রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এমন সিদ্ধান্তের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভোল পাল্টে বিএনপি। দলের নির্দেশ অমান্য করে ফখরুল ছাড়া বাদবাকি সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় দলীয় সিদ্ধান্তেই এ শপথ। এদিকে বিএনপি মহাসচিবও যে কোন সময় শপথ নিতে পারেন এমন আলোচনাও আছে বিভিন্ন মহলে। তবে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে শুরু থেকে সাংসদদের শপথ না নেয়ার কথা বলা হলেও নির্ধারিত নব্বই দিনের মধ্যে শপথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন মৌলভীবাজার-২ থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা সুলতান মনসুর গণফোরামের প্রার্থী হলেও নির্বাচিত হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে। অপরদিকে সিলেট-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার প্রার্থিতা হাইকোর্ট বাতিল করলে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে সমর্থন দেয় বিএনপি। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা বারবার বলেছি ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোন নির্বাচনই হয়নি। এই নির্বাচনের ফল আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। সুতরাং শপথ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। অপরদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমদ একই দিন জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির উদ্দেশে বলেন, শপথ নিয়ে আপনারা বেইমানি করবেন না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নেয়া সিদ্ধান্তে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে। রাজনীতির দৃশ্যপট এখন অন্যরকম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত একের পর এক বদল হতে থাকে। সর্বশেষ বিএনপির সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্তে পুরোচিত্র পাল্টে গেল। এ অবস্থায় গণফোরাম থেকে বহিষ্কার হওয়া শপথ নেয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও শোকজ দেয়া মোকাব্বির খানের বিষয়েও দল ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। দলীয় বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমাদের দল থেকে নির্বাচিত দুই সদস্যের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা হবে কিনা তা আমি এককভাবে বলতে পারব না। তবে শীঘ্রই দলীয় ফোরামে নতুন কোন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দল প্রধান। তিনি যা সিদ্ধান্ত দেবেন দলের নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবেন বলে আশা করি।
×