ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মে দিবসেই ফুটেছে মে ফ্লাওয়ার

শ্রমজীবী মানুষকে ফুলের শুভেচ্ছা, সংগ্রামী অভিনন্দন

প্রকাশিত: ১১:২০, ১ মে ২০১৯

শ্রমজীবী মানুষকে ফুলের  শুভেচ্ছা, সংগ্রামী  অভিনন্দন

মোরসালিন মিজান ॥ মে মাসের সবে শুরু হলো। আজ প্রথম দিন। এরই মাঝে দৃশ্যমান মে ফ্লওয়ার। লাল গোলাকার বলের মতো ফুল। নিজেকে একটু একটু করে প্রকাশ করছে। দেখে বরাবরের মতোই অভিভূত হতে হয়। আশপাশের ছাদে, বারান্দায় চোখ রাখুন। টবে ফুটতে থাকা ফুলটি চোখে পড়বে। আর না হয় রাস্তাসংলগ্ন নার্সারিগুলোতে ঢুঁ মারুন। নিশ্চিত দেখতে পাবেন মে ফ্লাওয়ার। বলার অপেক্ষা রাখে না, মে মাসে ফুটে বলেই ফুলটির এমন নামকরণ। কেন মে মাসেই ফুটে? কী কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? উদ্ভিদবিদ বা তরুলতা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা সেটি ভাল বলতে পারবেন। তবে সাধারণ চোখে ফুলটির দিকে তাকালে শ্রমজীবী মানুষের কথাই বেশি মনে পড়ে। খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষের সংগ্রামকে এই ফুল যেন সমর্থন দিয়ে যায়। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আছে যারা, তাদের অভিনন্দিত করে। মে দিবসে আজ ফুলটির দিকে তাকিয়ে পুরনো সেই ইতিহাসের কথা কারও না কারও মনে পড়ে যাবে। ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ গড়ে উঠেছিল। শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শোষক মালিক শ্রেণীর গুলিতে এ সময় প্রাণ হারায় ১১ শ্রমিক। ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় আরও ৬ জনকে। লাল মে ফ্লাওয়ার যেন রক্তাক্ত দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। হয়ত তাই কবি লিখেছেন: গোলাপ তোমার প্রিয়/আরো প্রিয় মৌ মৌ/গন্ধ-বকুল/জানি, তবু আজ তোমার জন্য/মে ফ্লাওয়ার ...। হ্যাঁ, অন্য ফুল যতই ফুটে থাক, আজ মে ফ্লাওয়ারের কথা হবে। এ ফুলের স্বতন্ত্র সৌন্দর্য। ফুলের দিকে তাকিয়েই বোঝা হয়ে যায়Ñ মে মাস এখন। কিছুদিন আগেও গাছের কোন অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। টবের মাটির নিচে ডুব দিয়ে ছিল প্রাণ। এপ্রিলে পেঁয়াজের মতো অংশটি উঁকি দিয়ে অস্তিত্বের জানান দেয়। তারপর একটু একটু করে গাছের চেহারা। ক্রমে মাটি ফুঁড়ে বের হয়ে আসে সবুজ নরম কা-। এপ্রিলের শেষভাগে এসে ‘কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না।’ মে মাসের প্রথম দিন থেকে কা-ের উপরিভাগে ফুল ফুটতে দেখা যায়। সদ্য ফোটা ফুল প্রকৃত আকার ও আকৃতি পায়নি। ক্রমে বড় হবে। গোল হবে। মে ফ্লাওয়ারের গড়ন কদম ফুলের সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। মেলানো যায়। তবে কদমের চেয়ে আকারে বড়। হালকা লাল রংয়ের ফুল। প্রথম দেখায় মনে হয় পুরোটা কাঁটায় ঘেরা। আদতে তা নয়। আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলে নরম কোমল একটা অনুভূতি হয়। আঙুলের ডগায় ওঠে আসে ছিটে ফোঁটা হলুদ রং। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা থেকে জানা যায়, মে ফ্লাওয়ারের অস্তিত্ব প্রথম চোখে পড়ে আফ্রিকা মহাদেশে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই হয়। বাংলাদেশেও অনেকদিন ধরে আছে। গোলাকার দেখতে ফুলকে বল লিলিও বলা হয়। একই কারণে বলা হয় গ্লোব লিলি। পাউডার পাফ লিলি, আফ্রিকান ব্লাড লিলি নামেও পরিচিত। মে ফ্লাওয়ার গাছ লম্বায় ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুল প্রায় ৩ সেমি চওড়া হয়। পাপড়ি ও পুংকেশর অসমান। মনে করিয়ে দেয়া যেতে পারে, মে ফ্লাওয়ার মে মাসেই শেষ হয়ে যায়। একটি গাছে একাধিক ফুল হয়। একটি ঝরে। অন্যটি নতুন করে সৌন্দর্য মেলে ধরে। এভাবে মে মাসের পুরোটা সময় একরকম মুগ্ধ করে রাখে। ফুল ঝরে পরার পর লম্বা সবুজ পাতার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। কয়েক মাস এই পাতারা সতেজ থাকে। তারপর পাতা কা- কিছুই থাকে না। কবিগুরুর ভাষায় বললে, ‘দেখা দেবে বলে তুমি হও যে অদর্শন ...।’
×