ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাইড শেয়ারিংয়ে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১ মে ২০১৯

রাইড শেয়ারিংয়ে অনিয়ম

মোটরসাইকেলের পেছনে যাত্রী উঠিয়ে কর্মসংস্থান করা সম্ভব- এই ধারণা বাস্তবায়ন হতে শুরু করেছে বেশ ক’বছর হলো। এতে বহু বেকারের একটা গতি হয়েছে এটা ঠিক। অপরপক্ষে এই ব্যস্ত যানজটের শহরে কম খরচে এবং অপেক্ষাকৃত কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য হাজার হাজার যাত্রী বেছে নিচ্ছেন এই এ্যাপভিত্তিক পরিবহনকে। ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে এই সুযোগ এত তাড়াতাড়ি মিলত না এমনটাই অনুমেয়। এখন স্মার্ট ফোনে এ্যাপের মাধ্যমে বাসায় বসেই বাইক ভাড়া করা যাচ্ছে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। এজন্য দরদামের বালাই নেই। ভাড়া নির্ধারণ করাই আছে। উবার, পাঠাও, ওভাইয়ের মতো বেশ ক’টি কোম্পানি রাইড শেয়ারিং ব্যবসায় নিয়োজিত আছে। যে কোন ব্যবসারই নীতি-নৈতিকতা থাকে। স্বচ্ছতা থাকে। সেসব দেখেই গ্রাহকরা আকৃষ্ট হন। তাদের ভেতর আস্থা গড়ে ওঠে। সম্প্রতি ঢাকায় একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানির মোটরসাইকেলের এক যাত্রী বেপরোয়া বাইক চালনার কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। যাত্রীটি পড়তেন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। লাবণ্য নামের এই শিক্ষার্থী বাইক থেকে পড়ে যান একটি কাভার্ডভ্যান মোটরবাইকটিতে ধাক্কা দিলে। কাভার্ডভ্যানটি সড়কে পড়ে যাওয়া লাবণ্যকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। স্বাভাবিক নিয়মেই এটি পুলিশ কেস হয়। পুলিশ রেজিস্ট্রেশনকৃত বাইক চালকের ঠিকানায় গিয়ে দেখে যে, সেখানে চালক নেই। অর্থাৎ ঠিকানাটি ভুয়া। ভুয়া ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার বিষয়টিই বলে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। তার মানেই হলো রাইড শেয়ারিংয়ে এমন গুরুতর অনিয়ম চলছে। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো যাচাই-বাছাই ছাড়াই চালকদের নিবন্ধিত করছেÑ এমন অভিযোগ নিশ্চয়ই ব্যবসাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি এখন প্রতিদিনের দুঃসংবাদ। দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৫ হাজার ১৬২ জনের মৃত্যু ঘটছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যাচ্ছেন ৩ হাজার ১৬৭ জন। এটা সত্য যে, কোন গাড়ি মৃত্যুদূত হিসেবে সক্রিয়তার নজির রাখলে দোষী করা হয় সংশ্লিষ্ট গাড়িচালককে। এখানে যুক্তি হলো গাড়িচালকের অবহেলা বা অদক্ষতার কারণে তার গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। অনেক সময় মাদক সেবনের পর গাড়ি চালনারও অভিযোগ ওঠে চালকের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের কিছুটা সত্যতা তো অবশ্যই রয়েছে। যেহেতু একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের প্রাণহরণ করতে পারে, সেহেতু গাড়ি এবং গাড়িচালকের সুস্থতার গ্যারান্টি খুব জরুরী। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হলে প্রশাসনের ওপর অনেক সময় অন্যায্য চাপ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আদালত অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করলে ধর্মঘট আহ্বানের মাধ্যমে অরাজকতাও সৃষ্টি করা হয়। রাইড শেয়ারিং কোম্পানি যাত্রী পরিবহন ব্যবসায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেÑ এটাই ছিল প্রত্যাশিত। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তাদের জোরালো ভূমিকা থাকতে হবে। দক্ষ চালকদের নামই তারা যথাযথভাবে নিবন্ধন করবে- এমনটাই চাওয়া। কিন্তু লাবণ্যের মৃত্যু এক্ষেত্রে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে রাইড শেয়ারিং কোম্পানির ওপর মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মোটরসাইকেল চালকদের পরোয়াহীন বাইক চালনা এবং তাদের আচার-আচরণ নিয়ে নানা সময় নানা কথা উঠলেও অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি। আমরা আগেও বলেছি, সড়ক দুর্ঘটনা আসলে নিছকই দুর্ঘটনা নয়। এগুলো ইচ্ছাকৃত হত্যা বা হত্যাচেষ্টা। এরকম অনেক দুর্ঘটনাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। শুধু দরকার সদিচ্ছা। রাইড শেয়ারিংসহ সামগ্রিক পরিবহন সেক্টরকে একটা শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্যে আনা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারকে হতে হবে কঠোর। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি চায় তাহলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।
×