ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহান মে দিবস

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১ মে ২০১৯

মহান মে দিবস

আজ মহান মে দিবস। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের সংহতির দিন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোসহ বড় বড় শহরে শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ ও শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মালিকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মিছিল-সমাবেশ করে। এর আগে শ্রমিকরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করত। দৈনিক ১৪-১৮ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রম করার পরও তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হতো। তাদের শোষণেরও শিকার হতে হতো। শ্রমিকের শ্রমের ওপর ভিত্তি করে সভ্যতা গড়ে উঠলেও তারা বরাবরই ছিল উপেক্ষিত। এমনকি তাদের নির্দিষ্ট কোন ছুটির দিনও ছিল না। এ শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। শোষণ-বঞ্চনার প্রতিবাদে সংঘবদ্ধ শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে যে আন্দোলনের সূচনা করে তা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায় ৩ ও ৪ মে। শাসকগোষ্ঠী আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে। তারা শ্রমিকের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়। শিকাগো শহরের ওই শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক নিহত এবং বহু আহত হয়। অনেক শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতারসহ দিনের পর দিন আটকে রাখা হয় কারাগারে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। শ্রমিক আন্দোলনের ওই অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্যারিস কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উদ্যাপিত হয় মে দিবস। শ্রমিক বঞ্চনার ইতিহাস নতুন নয়। সব যুগে, সব সমাজে এটি ছিল। শ্রমিকের ঘামে মালিকের প্রাসাদোপম অট্টালিকা তৈরি হলেও বহু শ্রমিককে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তারা দিন-রাত অক্লান্ত শ্রম দিয়েও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে না। অনেক সময় তারা প্রাপ্য অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে বাধ্য হয়। সম্প্রতি শ্রমিক কল্যাণে আমাদের দেশে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তাদের সার্বিক চাহিদা ও কল্যাণ পুরোপুরি সুনিশ্চিত হয়েছে তা বলা যাবে না। বর্তমান সরকার পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ধার্য করেছে; এটা শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাও ছিল। আসলে শ্রমিকদের বঞ্চনা দীর্ঘস্থায়ী। এখনও কোন কোন ক্ষেত্রে দৈনিক ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে অনেক শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না। তার ওপর বেতন বকেয়া, শ্রমিক ছাঁটাই, লকআউট ইত্যাদি কারণেও তাদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত থাকে না। আবার কোন কোন ফ্যাক্টরির কাজের পরিবেশও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিককে দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়েছে। চা, চামড়া, পাটসহ অন্যান্য শিল্পের চিত্রও প্রায় একই। একটা কথা সকলকে মনে রাখতে হবে, শ্রমিক স্বার্থসংরক্ষণ ব্যতীত যেমন শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়, তেমনি অহেতুক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা শিল্পের ক্ষতিসাধন শ্রমিকের ভাগ্য বিড়ম্বনা বাড়ায়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মে দিবসের প্রাসঙ্গিকতাকে ভাবতে হবে নতুন করে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতি, বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রায় সব শিল্পকারখানা প্রবেশ করেছে অটোমেশনের যুগে। শ্রমিকদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে রোবট, কম্পিউটার, মাল্টিটাস্কিং ইত্যাদি। বিজিএমএ-এর সভাপতির মতে, দেশের ত্রিশ লক্ষাধিক পোশাক শিল্প শ্রমিক প্রায় নিরক্ষর। তারা প্রাথমিক লেখাপড়া ও গণিত জানে না। কোডিং তো বহুদূর। অটোমেশন হলে এত বিপুলসংখ্যক শ্রমিক যাবে কোথায়? এর জরুরী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে শিল্প-কারখানার মালিক, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের। মে দিবসে বিষয়টা অন্তত আলোচনায় উঠে আসুক সর্বস্তরে।
×