ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে অভিনেতা হয়ে উঠলেন আনিস

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

যেভাবে অভিনেতা হয়ে উঠলেন আনিস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৌতুকের মধ্য দিয়ে মানুষকে বিনোদন দেয়াই ছিল তার কাজ। রেডিও, টেলিভিশন,রূপালি পর্দা- সবটাতেই তিনি মানুষ হাসিয়েছেন সুস্থ থাকা অবস্থায়। আপাদমস্তক এই কৌতুক অভিনেতা আনিসের চির প্রস্থানে শোকাহত দেশের মানুষ। আনিস তার স্ত্রী কুলসুম আরা বেগমকে হারিয়েছেন ২০১৩ সালে। দুই মেয়ের এক মেয়ে থাকেন দেশের বাইরে। রাজধানীর টিকাটুলীর অভয় দাস লেনের গোছানো পরিপাটি এক বাসাতেই একাই জীবন-যাপন করছিলেন বরেণ্য এই অভিনেতা। তবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপনই করছিলেন তিনি। আনিসের বাবা আমিনুর রহমানের চা বাগানের ব্যবসা ছিল জলপাইগুড়িতে। বাবার ব্যবসার কারণে ফেনীর আমিনুর রহমানকে ওখানেই থাকতে হতো। তাই আনিসের জন্মও হয় সেখানেই। একটু বেশি দেরিতে দাঁত উঠেছিল বিধায় পরিবারের অনেকেই আনিসকে বুড়া বলে ডাকতেন। এক সময় জলপাইগুড়ি ছেড়ে আনিসদের পরিবারকে গ্রামে চলে আসতে হলো। সেখানেই আনিসের পড়াশোনা শুরু। স্কুল জীবনে ‘ড্রেস এজ ইউ লাইক’ অনুষ্ঠানে আনিস নিজে মনের মতো সাজতেন। পুরস্কার হিসেবে পেতেন ৫০-৬০ টাকা। সেই টাকা স্কুলে পিয়নদের দিয়ে দিতেন। এক সময় ঢাকায় আসেন আনিস। বড় ভাই লুৎফর রহমান এফডিসিতে চাকরি করতেন। এখনও পুরনো চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হলে তার বড় ভাইয়ের নাম ‘অপটিক চিত্র-লুৎফর হাসান’ দেখা মেলে। বড় ভাই তাকে সেই সময়ের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার সাঈদুর রহমানের স্টুডিওতে কাজ দিয়ে দিলেন। আনিস শুরু করেন ফটোগ্রাফির কাজ। পরিচয় হয় এফডিসির সাউন্ড রেকর্ডিস্ট। বড় ভাইয়ের অনুমতি নিয়েই তিনি আনিসকে সম্পাদনার চাকরি দেন। সেখানে পরিচয় হয় বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান সাধন রায়ের সঙ্গে। তিনিই তাকে প্রথম উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। শুরু হলো শূটিং। আনিস বলেছেন ‘আহ একটা কথা বুঝনা কেন নানী, ঐ মাইয়া আমাগো ঘরে আইলে কপাল খুইলা যাইবো।’ কিন্তু ক্যামেরাম্যান পরিচালককে বললেন, ‘এই মাল কোত্থেকে আনছেন আপনি, না আছে গলা, না আছে চেহারা’। এই কথা শুনে আনিস পালিয়ে আসেন। পরবর্তীতে জিল্লর রহিমের ‘এইতো জীবন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে শুরু হয় আনিসের অভিনয় জীবন। এটি ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায়। সেই সময় তিনি চলচ্চিত্রের সম্পাদনার কাজ করতেন এহতেশাম ও মুস্তাফিজের সঙ্গে। কিন্তু অভিনয়ে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় সম্পাদনার কাজ তাকে এক সময় ছেড়ে দিতে হলো। আনিস একাধারে একজন চলচ্চিত্রাভিনেতা, রেডিও আর্টিস্ট এবং নাট্যঅভিনেতা। টিভিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন কলিম শরাফী নিজেই। আবার রেডিওতে অভিনয় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন খান আতাউর রহমান। তবে তিনি নিজে কোথাও কখনই যাননি। সবাই তার প্রতিভারই মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন। আনিসের মাঝে যে প্রতিভা ছিল তা সবাই বুঝতেন বলেই তাকে নিয়ে সাহস করতেন কলিম শরাফী, খান আতাউর রহমানের মতো চৌকস, মেধাবী ব্যক্তিত্বরা। আনিস দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক, ফারুক ও শাকিব খানের সঙ্গে। নায়িকাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন শবনম, সুজাতা, শাবানা ও শাবনূরের সঙ্গে। জীবিতকালে আনিস বলেছিলেন, আমার আজকের এই পযার্য়ে আসার পেছনে যাদের ভূমিকা ছিল ভীষণ তারা হলেন এহতেশাম, মোস্তাফিজ, কাজী জহির, কামাল আহমেদ, আজিজুর রহমান, ই আর খান মামা, উত্তম আকাশ’সহ আরও কয়েকজন পরিচালকের প্রতি আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ।
×