ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বলেছেন অধিনায়ক মাশরাফি, চাপ কাটিয়ে বিশ্বকাপে বড় ম্যাচগুলো জিততে চান

সেমিতে খেলা কঠিন, তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে

প্রকাশিত: ১২:১৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

সেমিতে খেলা কঠিন, তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পুরনো ফরমেট ফিরে এসেছে। ১৯৯২ সালে যেভাবে হয়েছে ঠিক সেভাবেই এবার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। অংশগ্রহণকারী সব দলকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলতে হবে, তাই প্রতি দলের ম্যাচ সংখ্যা ৯! এজন্য সাফল্যের ধারাবাহিকতা রাখা কঠিন এবং সেমিফাইনালে উঠতে খুব প্রয়োজন ধারাবাহিকতার। বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা মনে করেন সেমিতে ওঠা কঠিন হলেও বাংলাদেশ দলের সামর্থ্য আছে সেমিতে ওঠার। সেটি হয়ে গেলে অতীতে নকআউট ম্যাচগুলোয় যেভাবে চাপ নিতে না পেরে হেরে গেছে দল, এবার সেটা কাটিয়ে দলকে সেরা সাফল্য এনে দিতে চান তিনি। বিশ্বকাপে থাকবে ব্যাটিংবান্ধব ফ্ল্যাট উইকেট। খুব বেশি রান উঠবে প্রতি ম্যাচে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মাশরাফি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দল খুব বেশি তিন শতাধিক রান না করতে পারলেও তা করার সামর্থ্য বিভিন্ন সময়ে করেও দেখিয়েছে। আর সেটা সম্ভব হতে পারে ব্যাটসম্যানদের মানসিক দৃঢ়তা এবং ঝুঁকি নেয়ার ওপর। বাংলাদেশ দলের ১৫ সদস্য নিশ্চিত হয়ে গেছে যারা বিশ্বকাপ খেলবেন। এর মধ্যে আবারও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ওপরই সবার আস্থা থাকছে। তবে অধিনায়ক মাশরাফি সবার ওপরই আস্থা রাখছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, যেই দলটা দিয়েছে, যেই দল দেবে সেটাকেই সেরা দল বলতে হবে অধিনায়ক হিসেবে। ১৫ জনের যখন স্কোয়াড হয় তখন দুর্ভাগ্যজনক কিছু থাকেই। হয় তো যাকে কেউ আশা করছে না সেটা দলের জন্য সৌভাগ্যের হয়ে যায়। এটা এখানে এসে বলা কঠিন। বিশ্বাস রাখি যে ওরা ভাল খেলবে ও ভাল ফলও করবে। এক দুই ম্যাচে রান করলে তো ফর্মে আসে না। ধারাবাহিকতা থাকার পর বলা যায় ফর্ম আছে। যেটা তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদদের আছে।’ বিশ্বকাপ স্কোয়াডের বাইরে আরও ৪ ক্রিকেটারকে দলে নেয়া হয়েছে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার জন্য। তাদেরও শেষ মুহূর্তে সুযোগ মিলতে পারে বিশ্বকাপ খেলার। এটিকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকাদের জন্য চাপ কিনা, সে বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘কেউ কেউ ওইভাবে চাপ নেয়। আবার কেউ নেয় না। যার যার ওপর নির্ভর করে। তবে যারা আসছে তাদের আমি অবশ্যই বলব যে মন খুলে খেলতে। এটা নিয়ে আমার আলাদা করে কিছু বলারও নেই। যারাই খেলবে তাদের সব দিয়ে খেললে সমস্যা হওয়ার কথা না। আর আয়ারল্যান্ডে আগে থেকেই বলা হচ্ছিল যে দুই জন অতিরিক্ত যাবে। এখানে বাড়তি দুইজন আসছে। আমার মনে হয় দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নাই। চারপাশে অনেকে অনেক কিছুই চিন্তা করে। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া তো আর কিছু করার থাকে না। প্রতিটি খেলোয়াড়কে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ অভিজ্ঞ একটি দল পেয়েছেন মাশরাফি। বিশ্বকাপের অনেক দলের চেয়ে এই দলটি অভিজ্ঞতায় ভরপুর। সেদিক থেকে দলকে নিয়ে অধিনায়ক বলেন, ‘অভিজ্ঞ ক্রিকেটার অনেক আছে বলে গত কয়েক বারের থেকে এবারের দলটাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলা যায়। অভিজ্ঞতা থাকলে ভাল টুর্নামেন্ট খেলা যাবে। অবশ্যই একতাবদ্ধ থাকতে হবে। একটা টুর্নামেন্টে নয়টা ম্যাচ খেলতে হবে। তার আগে আয়ারল্যান্ড সিরিজ আছে। নয়টা ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতি আসবে। উত্থান-পতন থাকবে কিন্তু সামনের ম্যাচে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে সেটা খুব জরুরী।’ বিশেষ করে এবার আলোচনা হচ্ছে ইংল্যান্ডের মাটিতে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক রান করেন ব্যাটসম্যানরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৩০০-৩৫০ রান ওঠে স্কোরবোর্ডে। আবার রান তাড়া করতে নেমেও এই সংগ্রহ টপকানোর ঘটনা ঘটছে। বিশ্বকাপে তাই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। মাশরাফি বলেন, ‘বিশ্বকাপে আইসিসির চাওয়া থাকে ফ্ল্যাট উইকেট এবং প্রচুর রানের। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই এখানে বড় রানের খেলা হবে। সব দলের বোলারদের জন্যই চ্যালেঞ্জ। রান করার সামর্থ্য যে আমাদের নেই তা বলব না। অভ্যাসের একটা ব্যাপার আছে। আমাদের ব্যাটিং অর্ডার অনেক অভিজ্ঞ। আপনি যদি ১ রানে হারেন বা দেড় শ’ বা ৭০/৮০ রানে হারেন, হার তো হারই। আমাদের সর্বস্ব দিয়েই খেলতে হবে। কেউ ৩২০ করলে আমাদের ৩২১ -এর লক্ষ্য নিয়েই খেলতে হবে। এর জন্য যত ঝুঁকি নেয়া সম্ভব, সবই নিতে হবে। ঝুঁকি না নিলে হবে না। মানসিকভাবে যদি একটু শক্ত থাকি, তাহলে তা করে দেখানো সম্ভব।’ গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল খেলেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল এবং তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে জিততে পারেনি বাংলাদেশ দল। এবারও সবাই আশা করছেন বাংলাদেশ দল সেমিতে উঠবে। এবার তেমনটি হলে জেতার প্রত্যয় জানালেন মাশরাফি, ‘সামর্থ্য নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন নাই। আমার কাছে দুইটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ; একটা হলোÑ শুরুর দিকে উইকেট না দেয়া যদি আমরা আগে ব্যাটিং করি। দুই নম্বর বিষয় হলোÑ আগে বোলিং করলে দ্রুত উইকেট নেয়া। আমার মনে হয় ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে এই দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হবে। আর একটা বিষয় হলো ৪৩ ওভারের পর বোলিং ও ব্যাটিং, দুইটা জায়গা ঠিক রাখতে হবে। মাঝের সময়ে আমরা ভাল করছি। আমরা যদি এই দুইটা বিষয় ঠিক রাখতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা অনেক ম্যাচ জিততে পারব।’ আর ম্যাচ জিতলেই ধরা দেবে সেমিতে খেলার স্বপ্নটা। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘অসম্ভব কিছু না। তবে কঠিন, অনেক কঠিন। এখানে নয়টা ম্যাচ। যারা প্রত্যাশা করছে সেমিফাইনাল খেলবে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক সুযোগ থাকবে। আমাদের ওই জায়গাটা খেয়াল রাখতে হবে। শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছিলাম। খুব আগের বিষয় না। এই দলই ছিল। নতুন করে বাড়তি এমন কিছু তাদের ভেতর আসেনি যে তারা এই মুহূর্তেই সেরা দল। সেরা দল সবসময় ভাল করে না। যারা মাঠে ভাল করে তারাই ভাল করে। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমাদের সেমিফাইনাল যাওয়া খুব বড় চ্যালেঞ্জ। যদি যেতে পারি, অনেক বড় অর্জন হবে। কারণ এবারের ফরমেট সেই ৯২’র মতো, যা খুবই কঠিন। আমরা অনেকবার সেমিফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে হেরেছি। আগে সেমিফাইনালটা যদি যাই, তাহলে বড় অর্জন হবে। তারপর ওই নির্দিষ্ট দিনে ভাল খেলা গুরুত্বপূর্ণ। হয়তবা শেষ এশিয়া কাপ জিতলে এই ধরনের টুর্নামেন্ট কীভাবে জিততে হয় এটার অভ্যাস হতো, এটার অভ্যাস থাকা খুব জরুরী। ফাইনালও এশিয়া কাপে উঠে জিততে পারিনি তিনবার। যে মানসিক চাপ থাকে তখন হয়ত একট দুইটা উইকেট ধসে পড়েছে ওই চাপটা ধরতে পারব। বড় টুর্নামেন্ট জিতলে পরে এই চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
×