ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেড়লাখ লোকের বাস ॥ তারের জঞ্জাল সরু রাস্তা, চলাচলও কষ্টকর

অগ্নিঝুঁকিতে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি

প্রকাশিত: ১২:০৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

অগ্নিঝুঁকিতে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি

মীর আব্দুল আলীম, রূপগঞ্জ ॥ রূপগঞ্জের চনপাড়া। সবাই চেনে বস্তি হিসেবে। ১২ হাত বাই ১৫ হাতের ঝুপড়ি ঘর। মাঝে মধ্যে উঁকি দিচ্ছে দালানকোঠাও। এলাকাজুড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল। সরু রাস্তা। প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস। চনপাড়াকে আশপাশের লোকজন অপরাধের আখড়া হিসেবেই বেশি চেনে। এ চনপাড়াই এখন ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এখানে নেই কোন অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা। ৪৫ বছরে কমপক্ষে ২০ টি স্থানে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে চনপাড়ায়। ফলে অনেকের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বড় ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে জানমাল ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি স্বপ্ন ভস্মীভূত হবে প্রায় ২০ হাজার ঝুপড়িঘর। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটারের মধ্যে রূপগঞ্জের এ চনপাড়া বস্তির অবস্থান। রূপগঞ্জ উপজেলার বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের তীর ও রাজধানীর ডেমরার শেষ মাথায় চনপাড়া। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার নদী ভাঙ্গা ভূমিহীনদের চনপাড়ায় ৮২৬ একর ওয়াসার জমির উপর পুনর্বাসন করেন। প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস এ চনপাড়ায়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চনপাড়া জুড়ে রয়েছে হাজারো ঝুপড়িঘর। ১২ হাত বাই ১৫ হাতের এসব ঘর সাধারণত টিন-কাঠের তৈরি। মাঝে মধ্যে ঘুপচি ঘরগুলোর ভেতর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে দালান-কোঠাও। চনপাড়া জুড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল। এসব বৈদ্যুতিক তার থেকে শর্টসার্কিটের কারণে বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া চনপাড়ার ঘরে ঘরে, দোকানে, দোকানে রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার বোমা। এসব থেকেও বড় ধরনের আগুনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলেন, চনপাড়ায় যেমন রয়েছে ঝুপড়িঘর তেমনি রাস্তাগুলো খুব সরু। এসব রাস্তা দিয়ে রিক্সা তো দূরের কথা কয়েকজন একসঙ্গে হাঁটাও দায়। এলাকার ভেতরে আগুনের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস আসা কষ্টসাধ্য হবে। তারা া বলেন, চনপাড়ার সবচেয়ে বড় ভয়, এখনকার বাড়িঘরগুলো সবই টিন-কাঠের তৈরি। আবার অনেক বাড়ি বাঁশের তৈরি মাচা দিয়ে। আগুন লাগলে নেভানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কোন বাড়ি কিংবা দোকানে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চনপাড়ায় বাড়িঘরের পাশাপাশি রয়েছে প্রশিকা, ব্র্যাক, পিএমটিসি, ইউএসটিসিসহ এনজিও সংস্থা। রয়েছে সরকারী, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আগুনের ঘটনা ঘটলে বাড়িঘর, বিপণিবিতানের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। চনপাড়া এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের পর চনপাড়ার ২০ টি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু আগুন নেভাতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যদি বড় ধরনের আগুন লাগে তাহলে গোটা চনপাড়া পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। চনপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলু বলেন, চনপাড়া আগুনের ঝুঁকিতে আছে এটা সত্য। তিনটি রাস্তা ছাড়া বাকি সব রাস্তা চিকনগলির মতো। তিনি বলেন, চনপাড়ায় প্রায় ৬ হাজার ঘর রয়েছে। আগুনের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার। কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মান্নান বলেন, চনপাড়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে আগুন লাগলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ঘটতে পারে অনেক হতাহতের ঘটনা। তাদের বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে, যেন অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা রাখে।
×