ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একযোগে কাজ করতে হবে-

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

একযোগে কাজ করতে হবে-

ব্রুনাইয়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার গণভবনে যথারীতি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচারের অঙ্গ হিসেবে প্রতিবারই বিদেশ সফর শেষে তিনি এটি করে থাকেন। এমনকি বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতও করেছেন বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা ও অর্জন সম্পর্কে অবহিত করার জন্য। এতে করে সরকারপ্রধানের সঙ্গে একদিকে যেমন গণমাধ্যমের সুসম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়, তেমনি দেশের জনগণও বিস্তারিত জানতে পারেন সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে। এ প্রসঙ্গে একটি কথা না বললেই নয়। আর সেটি হলো, সাংবাদিক সম্মেলনের এক পর্যায়ে প্রশ্নোত্তরপর্বে প্রধানমন্ত্রী সকৌতুকে বলেছেন যে, ‘কাজ করতে গিয়ে কোনদিন মিডিয়ার আনুকূল্য পাইনি। সব সময় বৈরিতা পেয়েছি।’ কথাটি বোধ হয় সর্বাংশে সঠিক নয়। জনকণ্ঠ সর্বদাই সরকারের সব ভাল কাজের প্রশংসা করেছে মুক্তকণ্ঠে এবং কোথাও যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে সেটি উল্লেখ করেছে বিন¤্রচিত্তে। আরও একটি কথা না বললেই নয় যে, কাজ করতে গেলে কমবেশি সমালোচনা হবেই। দেশে-বিদেশে নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে সুবিশাল কর্মযজ্ঞ পদ্মা সেতু নিয়েও কম কথা হয়নি। যা হোক, প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাই সফরের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ, শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে বহু হতাহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ থেকে শুরু করে বিএনপি এমপিদের শপথ, খালেদা জিয়ার প্যারোল প্রসঙ্গ, প্রতিবাদী নুসরাতের অপমৃত্যু, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গ ইত্যাদি বিষয়ে অকপটে কথা বলেছেন এবং সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের বিষয়টিও বাদ যায়নি। সব মিলিয়ে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গভীর আত্মবিশ্বাস ও দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের দায়বদ্ধতা এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতি সরকারের আন্তরিকতা, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ। ধর্মীয় মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূলত ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর হাত ধরেই দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব এবং উত্থান, যার সূত্রপাত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ওপর গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক হামলা চালানো হয়েছে, যার চূড়ান্ত বহির্প্রকাশ ঘটে গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গী হামলার মাধ্যমে। সরকার কঠোর হাতে তা দমনের জন্য সব ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হামলার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। যে কারণে জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকার ইয়াবাসহ মাদকের বিরুদ্ধেও একই নীতি গ্রহণ করেছে। র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর বিরুদ্ধে সর্বদাই সজাগ ও তৎপর। এরপরও সাবধানের মার নেই। সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে সব সময়। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জাতিকে মোকাবেলা করতে হবে জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ইতোমধ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের মসজিদ ও উপাসনালয়ে ধর্মীয় জঙ্গীবাদ এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে শুরু করেছেন ধর্মবেত্তারা। বর্তমান জনবান্ধব সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন, দেশের অব্যাহত উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি। পরিকল্পনামন্ত্রী সেদিন এক সম্মেলনে বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের ন্যূনতম পর্যায়ে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। দারিদ্র্যের হার প্রায় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে। মানুষের মাথাপিছু আয় হবে চার হাজার ডলারের বেশি। জনসম্পদ, ভৌতসম্পদ, সমুদ্রসহ প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ও জাতি। প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ ও কথোপকথনে সেই চিন্তা- চেতনাই প্রতিফলিত হয়েছে।
×