ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কমিউনিটি অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটির সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি

রোগীদের প্রতি আরও বেশি আন্তরিক ও ব্রতী হোন

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

রোগীদের প্রতি আরও বেশি আন্তরিক ও ব্রতী হোন

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ কম খরচে হয়রানিমুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি সোমবার নগরীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ কমিউনিটি অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটির ৭ম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভাষণকালে একথা বলেন। তিনি বলেন, অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে হয়রানির শিকার হয়ে রোগীরা যাতে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খবর বাসসর। রাষ্ট্রপতি চিকিৎসা পেশাকে অত্যন্ত সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ রাখব রোগীদের প্রতি আরও বেশি আন্তরিক ও ব্রতী হোন। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যে পরিমাণ ফি আদায় করেন তা সাধারণ মানুষের ক্ষমতার বাইরে। তাই আপনাদের চিকিৎসা ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীরা যাতে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন মানুষ বিভিন্ন রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য সৃষ্টিকর্তার পরই ডাক্তারদের ওপর ভরসা করে থাকেন। তাই তাদের আস্থার জায়গাটি অক্ষুণ্ণ রাখা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। তাছাড়া আপনারা আজকে যে অবস্থানে আছেন, সেখানে পৌঁছাতে সাধারণ মানুষের অবদানও কিন্তু কম নয়। কারণ তাদের ট্যাক্সের টাকায়ই মেডিক্যাল কলেজের খরচ জোগানো হয়। তাই তাদের চিকিৎসাসেবা দেয়া আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে আমি মনে করি। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম প্রধান একটি চাহিদা। জনগণের এ চাহিদা পূরণে বর্তমান সরকারের সর্বাত্মক প্রয়াসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, ডাক্তার-নার্স নিয়োগ, উন্নত যন্ত্রপাতি সংগ্রহসহ তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সার্বিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জেলা সদরের বাইরে, এমনকি ঢাকা বা বিভাগীয় শহরের বাইরে পদায়ন হলেই ডাক্তার-নার্সরা বদলির তদবির শুরু করেন। আর বদলি হতে না পারলে কোন রকমে সময় পার করার চেষ্টা করেন। এতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগণ কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা নিয়েই আমাদের দেশ। আপনাদের অনেকেই গ্রাম থেকে এসেছেন। তাই গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। যাকে যে জায়গায় পদায়ন করা হবে সে জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং তা আন্তরিকতার সঙ্গে করতে হবে। হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে যতটুকু সেবা দেয়া সম্ভব তা সবটুকু দিতে হবে। চিকিৎসা নিতে আসা জনগণ যাতে অহেতুক কোন হয়রানির শিকার না হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন এলক্ষ্যে কার্যকর অবদান রাখতে পারে বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর চক্ষু চিকিৎসা প্রদানের জন্য চক্ষু ক্যাম্প পরিচালনা একটি উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় মাধ্যম। কিন্তু এ ধরনের ক্যাম্পে চোখ অপারেশনের পর বেশ কিছু রোগী অন্ধত্বের শিকার হয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। এ ধরনের ক্যাম্প পরিচালনায় আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে মনিটর করার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, অন্ধত্ব মানব জীবনের একটি চরম অভিশাপ। অন্ধত্ব এখন শুধু সামাজিক সমস্যা নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সমাজের এই হতভাগ্য দৃষ্টিহীন মানুষদের অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞগণের মহামিলন ঘটেছে। আমি মনে করি এই সম্মেলন তাঁদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এর ফলে নিজেদের মধ্যে পেশাগত বন্ধন ও সামাজিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে।
×