ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালের নিরাপত্তায় ডগ স্কোয়াড

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

শাহজালালের নিরাপত্তায় ডগ স্কোয়াড

আজাদ সুলায়মান ॥ শাহজালালের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে তেরি হচ্ছে বিশ্বমানের ডগ স্কোয়াড। বিমানবন্দরে বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য শনাক্ত করবে এ ইউনিট। গত একমাস ধরে চলছে প্রশিক্ষণ। বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা আটটি কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এন্টি টেররিজম এসিস্ট্যান্স (এটিএ)। এর আগে বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশের অন্যতম ইউনিট ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) এর ২৪ সদস্যকে জর্দান থেকে বোম্ব ডিস্পোজাল প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। এ দুটি ইউনিটের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এপিবিএন-এর এডিশনাল পুলিশ সুপার আলমগীর হোসাইন শিমুল। তিনি বলেছেন, দুনিয়াজুড়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বলতে মূলত বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য মোকাবেলাকেই বুঝায়। শাহজালালেও এ দুটি হুমকি মোকাবেলা করা সম্ভব হলে বলা যাবে এটাই প্রধান নিরাপত্তা। জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেছেন, নিরাপত্তা নিয়ে বিন্দুুমাত্র ঘাটতি থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় বিশ্বমানের নিরাপত্তা বলতে যা বুঝায়- সেটাই নিশ্চিত করা হচ্ছে শাহজালালে। জানা গেছে, এপিবিএন-এর তত্ত্বাবধানে আটটি কুকুরের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডগ স্কোয়াড বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ও মাদক শনাক্তের দায়িত্ব পালন করছে। এখন এদের আরও কার্যকর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে কার্গো ভিলেজে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের নিজস্ব এন্টি টেররিজম এসিস্ট্যান্সের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যাত্রীর সঙ্গে থাকা বিস্ফোরক ও মাদক শনাক্তে বিশেষ কৌশল শেখানো হচ্ছে এসব কুকুরকে। আলমগীর হোসেন শিমুল জানিয়েছেন, যেখানেই বিস্ফোরক ও মাদক থাকবে সেখানেই ঘ্রাণ শক্তির মাধ্যমেই শনাক্ত করতে পারবে ডগ স্কোয়াড। এমনকি মানুষের পেটের ভেতর ইয়াবা থাকলেও সেটা শনাক্ত করতে পারবে এসব কুকুর। এদের সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আপাতত আট কুকুরকেই এ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও আট কুকুর উন্নতমানের স্রাইপার ডগ আনা হচ্ছে। যাদের রয়েছে প্রখর ঘ্রাণ শক্তি। এ সম্পর্কে সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব বলতে বুঝায় কার্গো হাউসের মাধ্যমে কোন বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য পাচার হচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া। এ জন্য ডগ স্কোয়াডকে সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে কার্গো ভিলেজেই। যুক্তরাজ্যের ডিএফটি-এর বিবেচনায় শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বলতে বুঝায়- কার্গো ভিলেজের মাধ্যমে পণ্য পাচারের সঙ্গে বিস্ফোরক ও মাদক পাচার ঠেকানো। নিরাপত্তার এ দিকটায় ঘাটতি ছিল বলেই তারা বছর তিনেক আগে ঢাকা থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে তোলপাড় হওয়ায় বাংলাদেশ খুব দ্রততম সময়ে সেভাবেই নিরাপত্তা ঘাটতি দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাজ্য। এরপর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। জোরদার করা হয় নিরাপত্তা তল্লাশি। ডিএফটির এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে রেডলাইন নামক একটি নিরাপত্তা কোম্পানি ঢাকায় দু’বছর অবস্থান করে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। তারপর এপিবিএন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডগ স্কোয়াড ইউনিট সংযোজন করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে সম্প্রতি এপিবিএনকে নির্দেশ প্রদান করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী। তখন তাকে নিশ্চিত করা হয় খুব শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও আট ¯œাইপার ডগ আনা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এটিএ-বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ, লজিস্টিক সাপোর্ট ও অন্যান্য সহযোগিতা দিচ্ছে। এটিএ ইতোমধ্যে আর্মড পুলিশের চৌকস অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম খানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান দিয়েছে। সেখানকার এফবিআই সদর দফতর পরিদর্শনের পাশাপাশি তিনটি বিমানবন্দরেরর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়া হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নিয়োজিত ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)এর ২৪ সদস্যকে জর্দান থেকে বোম্ব ডিসপোজালের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। এভাবেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় এপিবিএনকে প্রস্তুত করছে এটিএ।
×