ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কৌতুক অভিনেতা আনিসও চলে গেলেন

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

কৌতুক অভিনেতা আনিসও চলে গেলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রেডিও, টেলিভিশন এবং রুপালি পর্দায় ছিল তার সরব উপস্থিতি। দর্শককে হাসিয়েছেন, দিয়েছেন নির্মল আনন্দ। তার কৌতুকমিশ্রিত অনন্য অভিনয়শৈলী দাগ কেটেছে সিনেমাপ্রেমীদের হৃদয়ে। মানুষকে হাসানো সেই প্রখ্যাত অভিনেতা কাঁদালেন সবাইকে। না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কৌতুক অভিনেতা আনিসুর রহমান আনিস। রবিবার রাত এগারোটার দিকে রাজধানীর টিকাটুলীর নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার জামাই মোহাম্মদ আলাউদ্দিন শিমুল। তিনি বলেন, রাতে নামাজ পড়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন বাবা (শ্বশুর)। ওখানেই তার স্ট্রোক হয়। চার বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। আনিসের দুই মেয়ে। একজন যুক্তরাষ্ট্রে আর অন্যজন ঢাকায় থাকেন। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সোমবার সকাল ৯টায় টিকাটুলী জামে মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে আনিসের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় এফডিসিতে। চোখের জলে কৌতুক অভিনেতা আনিসকে বিদায় দিল এফডিসি। সেখানে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর, মিশা সওদাগর, ওমর সানী, ড্যানি সিডাক, খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ। তার মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে জন্মস্থান ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার বল্লবপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বাংলা চলচ্চিত্রের এক দুর্দান্ত অভিনেতার নাম আনিস। এই অভিনেতা চার শতাধিক চলচ্চিত্র এবং অসংখ্য রেডিও ও টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। আনিস চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন অভিনেতা নয়, চিত্রসম্পাদক হিসেবে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ভ্রাতৃদ্বয় এহতেশাম ও মুস্তাফিজের লিও দোসানী ফিল্মসে সহকারী সম্পাদক ও পরিচালক ছিলেন তিনি। এ দুই নির্মাতার মাধ্যমেই একসময় অভিনয়ে নিয়মিত হন আনিস। তিনি প্রথম উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। সে ছবিতে পরে আর অভিনয় করা হয়ে ওঠে নাই। পরবর্তীতে জিল্লুর রহিমের ‘এইতো জীবন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে শুরু হয় আনিসের অভিনয় জীবন। ছবিটি ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায়। তারপর থেকে তিনি অভিনয় করেই গেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি অভিনয় করেছেন। আনিসকে টিভিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী কলিম শরাফী। আবার রেডিওতে অভিনয় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন খান আতাউর রহমান। নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাটকে গোলাম হোসেন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি মঞ্চে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন আনিস, নায়করাজ রাজ্জাক, ফারুক ও শাকিব খানের সঙ্গে। নায়িকাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন শবনম, সুজাতা, শাবানা ও শাবনূরের সঙ্গে। আনিসের বাবা মরহুম আমিনুর রহমান চাবাগানের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ বল্লবপুরে। ১৯৬৫ সালে খালাত বোন কুলসুম আরা বেগমকে ভালবেসে বিয়ে করেন আনিস। উনপঞ্চাশ বছর একসঙ্গে সংসার করেছেন তারা। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে এতটুকু ছেদ পড়েনি তাদের ভালবাসায়। আনিসের বড় মেয়ে ফারহা দীবা থাকেন আমেরিকাতে। তার স্বামী তারেক হোসেন সেদেশে ব্যবসা করেন। ছোট মেয়ে ফাতেমা রহমান রিমি কুমিল্লায় আছেন। তার স্বামী আলাউদ্দীন সেখানে ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত। রিমি ইংরেজীতে মাস্টার্স করেছেন। আগে ফরিদপুরের একটি কলেজে অধ্যাপনা করতেন। কিন্তু সন্তান জন্মের পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। আনিস সর্বশেষ অভিনয় করেছেন উত্তম আকাশ পরিচালিত ‘যেমন জামাই তেমন বউ’ চলচ্চিত্রে। কার অভিনীত অন্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘এই তো জীবন’, ‘পয়সে’, ‘মালা’, ‘জরিনা সুন্দরী’, ‘জংলী মেয়ে’, ‘মধুমালা’, ‘ভানুমতি’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘সূর্য ওঠার আগে’, ‘অধিকার’ ‘অঙ্গার’, ‘বারুদ’, ‘ঘর সংসার’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘পুরস্কার’, ‘লাল কাজল’, ‘নির্দোষ’, ‘সানাই’, ‘উজান ভাটি’, ‘তালাক’ ইত্যাদি। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির অনেক পর্বে অভিনয় করেছেন।
×