ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত রিপোর্ট আজ সিন্ডিকেটে উঠছে

জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননার প্রমাণ ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননার প্রমাণ ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ একটি মহল তৎপর হলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না জাতির জনক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অবমাননাকারী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। রবিবার কমিটি তাদের প্রতিবেদন উপাচার্যের কাছে জমা দিয়েছে। আজ সিন্ডিকেটে উঠছে তদন্ত রিপোর্ট। কমিটির সদস্যরা বলছেন, অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেবে সিন্ডিকেট। এদিকে ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে ঢাবিতে। আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুতি করে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাশ বলেছেন, জাতির জনক, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অবমাননাকারী এই কুলাঙ্গার শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হোক। কোন ধানাইপানাই বা ছলচাতুরি চলবে না। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জনকণ্ঠে ‘ইতিহাস বিকৃতিকারী ঢাবি শিক্ষককে রক্ষায় তৎপর একটি মহল’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে তদন্ত কমিটি বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছিল। সোমবার তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি ও আইন উপদেষ্টার মতামতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের কর্মকা-কে সংবিধান ও আদালতের বিরুদ্ধে করা অপরাধ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। এই রিপোর্টে তারা মার্কেটিং বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জনকণ্ঠের কাছে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। গত বছর ইতিহাস বিকৃতির অপরাধে ঢাবির রেজিস্ট্রার চাকরিচ্যুত হয়েছে। তার চেয়ে অনেক বেশি অপরাধ করেও কি বিএনপি-জামায়াতপন্থী এ শিক্ষক রক্ষা পেয়ে যাবেন? তাহলে কি করছে প্রশাসন? এমন প্রশ্নে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. সামাদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা সিন্ডিকেটের। ৩০ তারিখ (আজ) সিন্ডিকেট। আমরা রিপোর্ট জমা দিয়েছি। যেটা হয়েছে তা আমরা বলেছি। যা সত্য সেটা তুলে ধরেছি। আইন উপদেষ্টার মতও দেয়া হয়েছে। কমিটির দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ সুস্পষ্টবভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ওই শিক্ষককেও কমিটি ডেকেছিল। তখন তিনি তার লেখা বলেই তা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। তখন কমিটির এক সদস্য প্রশ্ন করেন, যদি আজ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অন্যরকম হতো তাহলে কি আপত্তি এর জন্য ক্ষমা চাইতেন? এমন প্রশ্নে তিনি চুপ থাকেন’। জানা গেছে, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা তার লিখিত মতামতে বলেছেন, মোর্শেদ হাসান খানের বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা বাংলাদেশের সংবিধানের এবং আদালতের প্রচলিত আইনের স্পষ্টত লঙ্ঘন। এ ধরনের অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে সাবেক রেজিস্ট্রার জিয়াউর রহমানকে শুধু দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করায় চাকরিচ্যুত হন। এদিকে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে ছাত্রলীগ অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুতি করে আইনী ব্যবস্থ্ ানেয়ার দাবি জানিয়েছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র লীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাশ বলেছেন, এই কুলাঙ্গার শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হোক। ঢাবিতে এ শিক্ষককে অবাঞ্ছিত করার ঘোষণা বলবৎ থাকল। জাতির পিতার অবমাননাকারীর যায়গা ঢাবির মাটিতে হবে না। তাকে চাকরিচ্যুত করা হোক। কোন ধানাইপানাই বা ছলচাতুরি চলবে না। অন্যথায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে ছাত্রলীগ। তিনি আরও বলেন, মোর্শেদ হাসান খানের কর্মকা- ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত এবং আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তবেই এই ধরনের কর্মকা- বন্ধ হবে। তাকে রক্ষায় কোন গোষ্ঠীর ছলচাতুরি সহ্য করা হবে না বলেও তারা হুঁশিয়ারি করেন ছাত্রলীগ সভাপতি। জানা গেছে, জামায়াত সমর্থিক গণমাধ্যম দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে এক নিবন্ধে সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাক হানার বাহিনীর এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে। তখন তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধের লেশমাত্রও পাওয়া যায়নি। আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই তাদের পরিবার পরিজনসহ ভারতে চলে গেলেন, এ দেশবাসীকে মৃত্যু ফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও। জাতির এ সঙ্কটকালীন মুহূর্তে ত্রাতারূপে আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। দেশপ্রেমের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। ‘স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর, তার আগে নয়। আমার জানা মতে তিনি কোন স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি’। তিনি আরও লিখেছেন,‘সংসদে দাঁড়িয়ে আজ মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা ও তার চেলাচামু-ারা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করছে, তার স্বচ্ছ ইমেজকে কালিমা লিপ্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। তবে আওয়ামী শিষ্টারচার বলে গ্রহণযোগ্য। দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় স্মৃতিময় জিয়া শিরোনামে এক লেখাতে লিখেন, শেখ মুজিবুর রহমানও এ দেশবাসীকে মৃত্যুর ফাঁদে ফেলে দিয়ে পাক-হানাদার বাহিনীর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। ধংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে ২৬ মার্চ রাতে ২টা ১৫ মিনিটে মেজার জিয়াউর রহমান নিরস্ত্র জাতিকে দিলেন অভয়, শোনালেন আশার বাণী- ‘প্রিয় দেশবাসী, আমি মেজর জিয়া বলছি। আমি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের সুপ্রীম কমান্ডার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’।
×