ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম তিন দফা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির আভাস

প্রকাশিত: ১০:০৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

 প্রথম তিন দফা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির আভাস

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতের চলমান ১৭তম লোকসভার তৃতীয় দফার ভোট শেষ হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে সোমবার। প্রথম তিন দফায় দেশটির অর্ধেকের বেশি আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম তিন দফার ৩০৩ আসনের ভোট শেষে বিশ্লেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। আসন নিয়ে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। দেশটির জরিপকারী একটি সংস্থা আভাস দিয়েছে- প্রথম তিন দফার ভোটে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বেশকিছু আসন হারাতে পারে। খবর ওয়ান ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার ও এনডিটিভি অনলাইনের। ভোটদানের হার কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তারা বলেছে, প্রথম তিন দফার ভোটে বিজেপি অন্তত ৬০ আসন হারাতে পারে। এ ধারা বজায় থাকলে বিজেপির আসন ২০০’র নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম তিন দফার ভোট দেখে দেশটির এক সাংবাদিক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাজ্যের হিসাব দিয়েছেন। তাতে তিনি দেখিয়েছেন, কোন্ রাজ্য থেকে কত আসন হারাতে চলেছে বিজেপি। তার মতে, তৃতীয় দফায় উত্তরপ্রদেশে ১০টির মধ্যে ১ থেকে ৪টি আসন পেতে পারে বিজেপি। কর্ণাটক-মহারাষ্ট্র ॥ কর্ণাটকে বিজেপি ভাল ফল করতে পারে। কংগ্রেস-জেডিএস এখানে সেভাবে লড়াই করতে পারছে না। তৃতীয় দফায় ১০টির মধ্যে বিজেপি সাতটি পেতে পারে। মহারাষ্ট্রেও বিজেপি দুটি আসন হারাতে পারে তৃতীয় দফায়। ১৪টির মধ্যে বিজেপি জোট পেতে পারে ৬টি, কংগ্রেস জোট পেতে পারে ৮টি। ছত্তিশগড়ে বিজেপি ধাক্কা খেতে পারে। তৃতীয় দফায় সাতটি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি পেয়েছিল বিজেপি। এবার তারা মাত্র দুটি পেতে পারে। অর্থাৎ চারটি হারাতে পারে বিজেপি। কংগ্রেস পেতে পারে সাতটির মধ্যে পাঁচটি আসন। ওড়িশাতেও বিজেপির বড় লাভ হবে না। ৬টির মধ্যে বিজেডি একটি আসন কম পেতে পারে। সেই আসনটি পেতে পারে বিজেপি। গুজরাট-অসম ॥ তৃতীয় দফায় গুজরাটের ২৬ আসনে ভোট হয়েছে। গুজরাটের গ্রামীণ এলাকায় বিজেপির খারাপ ফল হতে পারে। ২৬ আসনই বিজেপির দখলে ছিল গতবার। এবার ১৯টি আসন বিজেপি পেতে পারে, বাকি ৭টি আসন কংগ্রেসের দখলে যেতে পারে। অসমে তৃতীয় দফায় ৪টির মধ্যে ১টি আসন বিজেপি দখলে রাখতে লড়াই করেছে। নিরাপত্তায় ৫৬১ সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স মোতায়েন (সিআরপিএফ) ॥ চতুর্থ দফার আটটি কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা (সিইও) এবং অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে এ নিয়ে ভিডিও বৈঠক করেছেন উপনির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। চতুর্থ দফার ভোটে নিরাপত্তা আরও বাড়াচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের মোট ৮টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট রয়েছে। ওই ৮টি কেন্দ্রের ৯ হাজার ৮০৪ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের (পোলিং প্রিমিসেস) মধ্যে ৯ হাজার ৬৮৫ কেন্দ্রেই (৯৮.৮ শতাংশ) সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি সম্পূর্ণ সিআরপিএফের নিয়ন্ত্রণে মোট ৮৮ ‘কুইক রেসপন্স টিম’ থাকছে। এই দফার ভোটে মোট ৫৬১ সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর প্রদেশ মিলে দিল্লীতে সরকার গড়বে-মমতা ॥ ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাটকে সন্ত্রাসের আখড়া বলে সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। শনিবার হাওড়ায় এক বিশাল জনসভায় মমতা বলেন, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তালিকায় দেখুন গুজরাট ১১ নম্বরে আর পশ্চিমবঙ্গ ১৯ নম্বরে। দিল্লীর আগামী সরকার প্রসঙ্গে মমতা বলেন, উত্তর প্রদেশ আর বাংলা মিলে এবার দিল্লীর সরকার গড়বে এটাই আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, সব বিরোধী দলকে একজোট করলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যা থাকবে। মোদির মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে মমতার প্রশ্ন, এত বড় মিথ্যা কথা! পশ্চিমবঙ্গে নাকি ছেলেমেয়েরা রাস্তায় বেরোতে পারে না! গুজরাট দাঙ্গার কথা, গোধরার কথা কি মানুষ ভুলে গেছে। পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে এ রাজ্যে বেশ কয়েক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে নির্বাচনে প্রার্থী হয়নি-প্রিয়াঙ্কা ॥ ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশের বারানসি আসনে তার নির্বাচনী লড়াইয়ের কথাও শোনা যাচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এ নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন প্রিয়াঙ্কা। রবিবার নিউজ-১৮ নামক সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে প্রিয়াঙ্কা বলেন, একার সিদ্ধান্তে নয়, কংগ্রেসের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হননি। কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কার সোজাসাপ্টা উত্তর- আমি আমার মনোযোগ শুধু একটি আসনে আটকে রাখতে চাইনি। কারণ, আমি বারানসিতে নির্বাচনের লড়াইয়ে আমাকে ওখানে বেশি সময় দিতে হতো। আর এবার যারা কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন তাদের আব্দার-আমি যেন তার নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রচারে অংশ নেই। এছাড়া আমার ওপর উত্তর প্রদেশের একটি বিশাল অংশের দায়িত্ব রয়েছে। অবশ্য এর আগে প্রিয়াঙ্কার প্রার্থী না হওয়া প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র নেতা শ্যাম পিত্রোদা বলেছিলেন, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নিজ থেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাননি। উল্লেখ্য, প্রথম তিন দফায় ভোট হয়েছে ৩০৩ কেন্দ্র্রে। বাকি চার পর্বে ২৩৯ আসন। চতুর্থ দফায় কয়েকটা কেন্দ্রে বিজেপি-কংগ্রেসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। গতবার এই ২৩৯টির ভেতর ১৬১টি আসন দখল করেছিল বিজেপি। ভোটের হারও বেড়েছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ৯টি। ভোটও কমেছিল। অথচ ২০০৯ সালেও ৮৮টি কেন্দ্র দখল করেছিল তারা।
×