ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে অর্থমন্ত্রী

খেলাপী সব ব্যবসায়ীকে জেলে দিলে অর্থনীতি চালানো যাবে না

প্রকাশিত: ১০:০৩, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

  খেলাপী সব ব্যবসায়ীকে  জেলে দিলে অর্থনীতি  চালানো যাবে না

সংসদ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঋণখেলাপী প্রসঙ্গে বলেছেন, সকল ব্যবসায়ীকে জেলে দিলে দেশের অর্থনীতি চালানো যাবে না। তবে সবাইকে মাফও করা যাবে না। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপী হয়ে যান তাদের বিরুদ্ধে আমাদের এ্যাকশন অবশ্যই নিতে হবে, কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি যে, ব্যাংকিং খাত যদি স্বাভাবিকভাবে চলতে না পারে, আর যদি ব্যাংকগুলো ঋণভারে জর্জরিত হয়ে যায়, মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়- তাহলে আমরা অর্থনৈতিক গতিশীলতা থেকে বিচ্যুত হব। তাই আমরা সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই ব্যাংকের সুদের হার কমাব। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের সুদের হার কমানো না গেলে পারফর্মিং লোন কমবে না। মন্দ ঋণ তখনই হয়ে যায় যখন লোন নিয়ে তারা পরিশোধ করতে না পারেন। মন্দ ঋণের কারণই হচ্ছে সুদের হার অনেক বেশি। যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা অথবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তখন সেখানে সঙ্গত কারণেই খেলাপী হয়ে যায়। আর ঋণখেলাপী রেখে ব্যাংকগুলোর অবস্থা এতোটাই দুরবস্থার মধ্যে আছে, এগুলোকে যদি পরিষ্কার না করি তাহলে এগুলো আরও খারাপ হয়ে যাবে। সে জন্যই সুদের হার মোটামুটি সহনশীল অবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ব্যাংকের সুদের হার কমিয়ে নিয়ে আসতে পারলেই আমরা সফল হব, আমাদের কর্মসংস্থান বাড়বে। শিল্প-কারখানাগুলো রক্ষা পাবে। সকলের স্বার্থেই আমরা এই কাজ করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে অনেক বিতর্ক হচ্ছে, অনেকে অনেক রকম কথা বলছে। কিন্তু সারাবিশ্বেই কিন্তু মাফ করে দেয়। আমাদের দেশে মাফ করার কোন ব্যবস্থা ছিল না। কারণ লোনের জন্য ব্যাংক আর্বিট্রেশন যেটা আছে, সেটা কার্যকর ছিল না। সে জন্য একবার ব্যাংকে ঢুকলে সেখান থেকে বের হবার পথ ছিল না। আমরা আইনগুলো কার্যকর করে সেই আইনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একটা সহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করে সবাইকে এখান থেকে মাফ করার ব্যবস্থা করব। কারণ সকল ব্যবসায়ীকে জেলে দিলে তো দেশের অর্থনীতি চালানো যাবে না। দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে নেই ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য আহসানুল হক টিটুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন, দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত চাঙ্গা ও শক্তিশালী, তবে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার জন্য যা যা করার তাই করা হবে। তিনি বলেন, একটা দেশের অর্থনীতি যতই শক্তিশালী হয়, তার প্রতিফলনটা আমরা দেখতে পাই পুঁজিবাজারে। পৃথিবীর সারাদেশেই এভাবে পুঁজিবাজার আর অর্থনীতি সম্পৃক্ত থাকে। আমাদের দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত চাঙ্গা ও শক্তিশালী। কয়েকদিন আগে আইএমএফ-এর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। সেখানেও তারা আমাদের গতিশীলতা দেখে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। সে সময় যেসব মিটিং হয়েছে, সেখানে সবাই বলেছেন বাংলাদেশকে অনুসরণ করার জন্য। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের এগিয়ে যাওয়া থমকে যাবে যদি আমাদের পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি। পুঁজিবাজারটি এখন নিয়ন্ত্রণে নাই আমি বলব। তবে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নাই এটা বলব না। পুঁজিবাজারে যে সকল সমস্যা আছে, এরই মধ্যে আমরা চিহ্নিত করেছি। সবগুলোই এক এক করে সমাধান করব। এ সময় প্রশ্নকারী সংসদ সদস্যকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, সরকার অর্থনৈতিক এলাকা নিয়ে যেমনিভাবে চিন্তা করে, তেমনি পুঁজিবাজার নিয়েও ততটা যতœশীল। আমি নিজেও পুঁজিবাজারের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সবাইকে নিয়ে এক দুই দফা মিটিং করেছি, আরও মিটিং করব। মিটিং করে পুঁজিবাজার আর ১০টি দেশে যেভাবে চলে সেইভাবেই চালাবার জন্য চেষ্টা করব। আমাদের বিচ্যুতিগুলো অবশ্যই দূর করব। আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কোন প্রণোদনা থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজাটে পুঁজিবাজারের জন্য প্রণোদনা অবশ্যই থাকবে। তবে কতটা থাকবে সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না। তবে পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন তার সব ব্যবস্থা করব। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, অনেকের ধারণা আমাদের ব্যাংকিং নাজুক অবস্থায় আছে। কিন্তু আমাদের ব্যাংকিং খাত এতো খারাপ বলব না। যদি এতই খারাপ হতো তাহলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অর্জন এটা হতো না। ব্যাংকিং খাত বাদ দিয়ে অর্থনৈতিক অর্জন হয় না। আমাদের দেশের ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৪-১৫ ভাগ। এটা বিশ্বের কোন দেশে নেই। প্রধানমন্ত্রী এই সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার কথা বলেছেন। তিনি বুঝে শুনে চিন্তা করেই এ কথা বলেছেন। আমরা চিন্তা করছি, চিন্তা-ভাবনা করেই একটা রেট নির্ধারণ করব। আমরা কাজ শুরু করেছি, সুদের হার কমাব, সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসব।
×