ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিমানের গণশুনানি, নানান অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

 বিমানের গণশুনানি, নানান অনিয়মের অভিযোগ

আজাদ সুলায়মান ॥ দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইটে এ মাসের ৩ তারিখে বাহরাইন থেকে দেশে ফেরেন মেহেদী। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে দেখেন তার লাগেজ আসেনি। স্বল্পশিক্ষিত এই যুবক জানতেনও না লাগেজ না এলে কি করতে হয়, কোথায় থেকে নিতে হয়। তদুপরি অপর এক সহযাত্রীর পরামর্শেই তিনি অভিযোগ করেন বিমানবন্দরের লস্ট এ্যান্ড ফাউন্ড শাখায়। ওই লাগেজে থাকা অনেক শখের জিনিসপত্র সঙ্গে না নিয়ে হতাশ হয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরে যান তিনি। তারপর বরিশাল থেকে ঢাকায় আসা যাওয়া করছেন তিনি। কেউ তার লাগেজের সন্ধান দিতে পারেনি। দায়িত্বও নেয়নি। বিমানের লস্ট এ্যান্ড ফাউন্ড শাখা থেকে বারবারই বলা হয় এটা তাদের দায়িত্ব নয়- গালফ এয়ারের ফ্লাইটের। তিনি ছুটে যান বিমানবন্দরের চার তলায় গালফ এয়ারের অফিসে। গিয়ে দেখেন ওই অফিসে কেউ নেই। তালা ঝুলছে। কোথাও কোন সমাধান না পেয়ে জানলেন- তার মতো ভুক্তভোগীদের সব অভিযোগ শোনা হবে রবিবার। শাহজালালের দোতলায় কনকর্স হলে গতকাল রবিবার সিভিল এভিয়েশন আয়োজিত গণশুনানিতে তিনিই সবার আগে দাঁড়ালেন। তাকে মাইক্রোফোন দেয়ার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান। এরপর ইচ্ছামতো প্রাণ খুলে জানালেন ভোগান্তি ও দুর্দশার কাহিনী। সঙ্গে সঙ্গেই চেয়ারম্যান এ অভিযোগ খ-ানোর জন্য নির্দেশ দেন উপস্থিত বিমানের গ্রাহক সেবার মহাব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম হাওলাদারকে। তিনি ব্যাখ্যা দেন- লস্ট এ্যান্ড ফাউন্ড হারিয়ে যাওয়া বা লেফট বিহাইন্ড লাগেজ ফিরে পাওয়ার একটা সুনির্দিষ্ট রুলস রয়েছে। যেই এয়ারলাইন্সের লাগেজ এক্ষেত্রে সেই এয়ারলাইন্সকেই তার ক্ষতিপূরণ অথবা মাল ফিরিয়ে দিতে হবে। বিমানের করার কিছু নেই এখানে। তার ব্যাখ্যা শুনে চেয়ারম্যান এম নাইম হাসান পরামর্শ দেন- বিমানের দায় থাকলেও অন্তত লাগেজ বের করার জন্য অভিযুক্ত এয়ারলইন্সকে জবাবদিহিতার আওতায় চাপে রাখার। তাহলে এ জাতীয় সমস্যার আরও সহজ সমাধান মিলবে। মেহেদীর মতো এমন বেশ কজন ভুক্তভোগী যাত্রী রবিবার গণশুনানিতে অংশ নিয়ে তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। এতে চেয়ারম্যান ছাড়াও অংশ নেন এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান, বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক, প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী, সিকিউরিটি চিফ শাহ এমদাদুল হক, মেম্মার এডমিন হাফিজুর রহমান ও এভসেক ডিরেক্টর উইং কমান্ডার ওবায়দুর রহমান। তারা প্রত্যেকেই সবার অভিযোগ বেশ ধৈর্য ধরে শুনেন এবং তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট দফতরকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। আইকাও মান অনুযায়ী বিমানবন্দরের সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে যাত্রীসাধারণ ও অন্যান্য সংস্থার লোকজনের অভিযোগ আমলে নেয়ার জন্যই এ ধরনের শুনানির আয়োজন করা হয়েছে স্বাগতিক বক্তব্যে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল নাইম হাসান। সিলেটের যাত্রী মাহবুবের অভিযোগ ছিল- তিনি বছর তিনেক আগে ছাত্রাবস্থায় সাইবেরিয়ায় যাওয়ার সময় শাহজালালের ইমিগ্রেশন কর্তাদের অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছিলেন। সেদিন তিনি ছিলেন শিক্ষার্থী। এখন তিনি বিদেশে আসা যাওয়া করেন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য। তিনি প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে মাইক হাতে বলেন, সেদিন ইমিগ্রেশনে এক অফিসার আমাকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেন। কেন এমন আচরণ করা হবে। তার অভিযোগ খ-ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয় সামনের সারিতে বসে থাকা ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা আশরাফকে। তিনি বললেন, এটা বছর কয়েক আগের ঘটনা। আমি এসেছি মাত্র এক বছর আগে। তারপরও বলতে চাই- এ ধরনের পুনারাবৃত্তি আর ঘটবে না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজারের অভিযোগ বিমানবন্দরের টয়লেট নোংরা এবং তিনতলায় প্রায়ই পানি থাকে না। এ অভিযোগ খন্ডানোর নির্দেশ দেয়া হলে মঞ্চে বসা প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দুু বিকাশ গোস্বামী জবাব দেন- বিমানবন্দরের পানি সঙ্কট সমাধানের কাজ চলছে। একটি বন্ধ রেখে অপরটির কাজ করতে হয় বিধায় সময় লাগছে। খুব শীঘ্র এ সঙ্কট কেটে যাবে। জসীম উদ্দিন নামের বরিশালের বাসিন্দার অভিযোগ আরও মারাত্মক। তিনি জেদ্দা থেকে তার লাগেজ বুকিং দেন ঢাকায়। কিন্তু সেটা চলে গেছে চট্টগ্রামে। এখন ঢাকায় এসে খুঁজে চলছেন কেউ তাকে কিছু বলতে পারছে না। কেন এমনটি ঘটেছে জবাব চাওয়া হয় বিমানের গ্রাহক সেবার কাছে। উপস্থিত বিমান ম্যানেজার জানালেন- এটা তাদের জানা নেই। জেনে এ্যাকশন নেয়া হবে। তবে ঘটনা শুনে হচ্ছে জেদ্দা থেকে প্রবাসীরা মাল বেশি হয়ে অন্যের লাগেজের সঙ্গে গেটিস দিয়ে আনে। এরকম হয়ে থাকলে ওই যাত্রী যদি চট্টগ্রামের হয় তবে ঠিকই আছে। তারপরও জেদ্দা বিমানবন্দরের চেকইনের কাজ করে সৌদি আরবের নাগরিক। তারা ভুল করেছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। অপর এক যাত্রী রববার সিলেট থেকে বিমানের ফ্লাইটে ঢাকায় আসার সময় দেখতে এক বৃদ্ধ মহিলা সিটে বসার পর একজন কেবিনক্রুর কাছে একটু পানি খেতে চান। সামনে থাকা ওই কেবিনক্রু বেশ তীর্যক ভাষায় ধমক দিয়ে বলেন এখনই পানি খাওয়ার সময়। সবে উঠেছেন। ফ্লাইট ছাড়ুক, তারপর খাওয়া খাওয়ি। এ অভিযোগ খ-াতে বলা হলে বিমানের মহাব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন- এটা খতিয়ে দেখা হবে। কোন ফ্লাইটে ঘটেছে সেটা দেখতে হবে। ঠিক মতো লাগেজ না পেলে কি ধরনের প্রতিকার রয়েছে জানতে চান এক যাত্রী। উপস্থিত বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামিল খান বলেন, প্রথমত লাগেজ হারানো বা বিলম্ব ঘটলে তাৎক্ষণিক বিমানের লস্ট এ্যান্ড ফাউন্ডে গিয়ে অভিযোগ দিয়ে একটা স্লিপ হাতে ফিরে যাবেন। পরে যাত্রীর নাম ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেখে হয় ডেকে এনে লাগেজ দেয়া হবে। না হয় ওই এয়ারলাইন্স নিজ দায়িত্বে হোম ডেলিভারি দেবে। আর যদি লাগেজ না পাওয়া যায় তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ক্ষতিপূরণ দেবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স। এ ছাড়া কোন যাত্রী চাইলে সার্বক্ষণিক বিমানবন্দরের আদালতে ফোন করেও সব অভিযোগ জানাতে পারেন।
×