ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাপসভিত্তিক কোম্পানিতে চালকের ভুয়া নিবন্ধনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

 এ্যাপসভিত্তিক কোম্পানিতে  চালকের ভুয়া নিবন্ধনের  বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোতে চালকরা ভুয়া ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করছেন। এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে ওই কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। রবিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এদিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহতের ঘটনায় তাকে বহনকারী উবার বাইক চালক সুমন হোসেন ও কাভার্ড ভ্যানচালক আনিছুর রহমানকে রিমান্ড নিয়েছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২৫ এপ্রিল সকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য (২১) নিহত হওয়ার পর তাকে বহনকারী উবার বাইকার সুমন হোসেনকে (২৭) ২৬ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থেকে এবং ২৭ এপ্রিল কাভার্ডভ্যানসহ চালক আনিছুর রহমানকে (২৩) আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। চালকদের গ্রেফতারের পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জানান, বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কলেজ গেটে অবস্থানকালে তার থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে অবস্থানকারী একজন উবার কলারের (ফাহমিদা হক লাবণ্য) কল পেয়ে সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে সুমন তাকে ফোন দেন। লাবণ্য খিলগাঁও ছায়াবীথি মসজিদের সামনে যেতে চান জানিয়ে সুমনকে শ্যামলী ৩নং রোডের ৩১নং বাসার সামনে আসতে বলেন। সেখান থেকে লাবণ্যকে নিয়ে কলেজ গেট দিয়ে গন্তব্যে রওনা হন উবার চালক। বিপ্লব কুমার জানান, লাবণ্যকে বাইকে উঠিয়ে চালক বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছিলেন। বাইকটি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কাছাকাছি আসলে পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান বাইকটিকে ধাক্কা দেয়। এসময় বাইক থেকে পড়ে যান লাবণ্য। কাভার্ডভ্যানটি তার ওপর দিয়ে চালিয়ে পালিয়ে যায়। পথচারী ও বাইকার লাবণ্যকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, হাসপাতালে উবারের বাইকচালক সুমন যে ঠিকানা দিয়েছিলেন সেই ঠিকানা ভুয়া। এমনকি তার নম্বরটি দিয়ে যে বিকাশ এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে সেটাও ভুয়া। এসব ঠিকানায় তাকে পাওয়া যায়নি। উবারে রেজিস্ট্রেশনের জন্য সুমন যে ঠিকানা দিয়েছেন তাও ভুয়া। তাই তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। উবারে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে রাইডার নিবন্ধন করে সড়কে বাইক চালানোর অনুমতি পায়। এটা দেখার কেউ নেই। ডিসি বিপ্লব কুমার জানান, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো কোন যাচাই বাছাই ছাড়াই চালকদের অনুমতি দিচ্ছে। এসব চালক অনেকে দক্ষ নয়। আবার অনেকে মাদকসেবী। নারীদের বাইকে তুলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হঠাৎ হঠাৎ বাইকে ব্রেক ধরে। এগুলো মনিটরিং করে না রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। তাদের আরোহীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট দেয়া হয়। এসব দ্রুত ঠিক করতে হবে। তিনি জানান, দুর্ঘটনার জন্য তাদের মনে হয়েছে মূল দোষ কাভার্ডভ্যান চালকের। পাশাপাশি উবারের রাইডারেরও দোষ ছিল। উবারের রেজিস্ট্রেশন করা যিনি চালক, উনি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পেছনে যে ছিল (কভার্ড ভ্যানের চালক) তিনিও বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন। যেহেতু মোটরসাইকেলের চেয়ে কভার্ডভ্যানের গতি বেশি, তাই দ্রুতগতিতে ক্রস করার সময় মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিয়ে পার হয়ে যায়। কভার্ডভ্যানের ধাক্কার কারণে লাবণ্য মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন। তিনি জানান, ঘাতক উবার চালক সুমন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করায় তাকে খুঁজে পেতে পুলিশের সময় লেগেছে। উবার কর্তৃপক্ষও প্রথমে সহযোগিতা করেনি। পরে থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম উবার চালক সুমনকে ২৬ এপ্রিল রাতে মোহাম্মদপুরের নবীনগর এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। ঘটনার পর কাভার্ডভ্যানসহ চালক আবদুর রহমান পালিয়ে যান। ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জানান, সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলেও সেগুলো স্পষ্ট ছিল না। তাই কাভার্ডভ্যানটি শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে একটি সিসি ক্যামেরায় কাভার্ডভ্যানটির নম্বর পাওয়া না গেলেও ‘ইনফো ফোর্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির তেজগাঁও কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় থেকে ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালক আনিছুরকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার হয়। রিমান্ডে দুই চালক ॥ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য (২১) নিহতের ঘটনায় তাকে বহনকারী উবার বাইকের চালক সুমন হোসেন (২৭) ও কাভার্ড ভ্যানচালক আনিছুর রহমানকে (২৩) ভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রবিবার দুপুরের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশের (উপ-পরিদর্শক) নুরুল ইসলাম সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আসামিদের আদালতে হাজির করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ শুনানি শেষে উবার রাইড চালক সুমন হোসেনকে দুই দিন ও কাভার্ড ভ্যান চালক আনিছুর রহমানকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) ইউসুফ আলী খান এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, উবার চালক সুমন হোসেন নিজেও অনেক ইনজুরি হয়েছেন। তার নিজের হেলমেটটি ভেঙ্গে গেছে।
×