ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে জাতীয় প্রতিযোগিতা সমাপ্ত

সৈকতে সার্ফিং মন কেড়েছে সবার

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

সৈকতে সার্ফিং মন কেড়েছে সবার

এইচএম এরশাদ ॥ সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর সার্ফিং পর্যটক ও স্থানীয়দের মন কেড়েছে। সার্ফিং সারাবিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। গত ৫ বছর ধরে এই সার্ফিং অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই খেলার কারণে মেধাবী ক্ষুদে সার্ফাররা নিজেদের সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে। তিন দিনব্যাপী কক্সবাজারে পঞ্চম জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা সমাপ্ত হয়েছে রবিবার। বাংলাদেশ সার্ফিং এ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে (বিএসএ) পর্যটন নগরী কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে এ সার্ফিং প্রতিযোগিতা শেষদিনে রবিবার বিজয়ী সার্ফারদের মধ্যে পদক ছাড়াও লক্ষাধিক টাকা অর্থ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় মোট ১৫০ জন সার্ফার অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্য থেকে ৬৫ জন সার্ফার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। পুরুষ, মহিলা ও জুনিয়র (বালক) তিন বিভাগে মোট নয়টি পদকের জন্য লড়াই করে সার্ফাররা। তাদের নিয়ে শনিবার কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সার্ফার মান্নান, ইউনুস, সেলিম, শুক্কুর, সাগর, জিয়া, হান্নান ও জাহেদ, নারী সার্ফারদের মধ্যে রিফা, সুমি, শবে মাহরাজ এবং আয়েশা তিনদিন ধরে সৈকতে সার্ফিংয়ে মাতিয়ে তুলেছে পর্যটক ও দেশী বিদেশী দর্শকদের। বাংলাদেশ সার্ফিং এ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ওয়ালটন ৫ম জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতায় পুরুষ সিনিয়র বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ইউনুস হোসেন। জুনিয়র বিভাগে সাগর হোসেন ও মহিলা বিভাগে শবে মেহরাজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সিনিয়র বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন সেলিম হোসেন, তৃতীয় হয়েছেন মান্নান হোসেন। জুনিয়র বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন মোঃ হান্নান, তৃতীয় জাহিদ হোসেন। মহিলা বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন আয়েশা আক্তার ও তৃতীয় হয়েছেন রিফা আক্তার। বিজয়ীদের লক্ষাধিক টাকা আর্থিক পুরস্কার, ট্রফি এবং এসটিএন এর সৌজন্যে সার্ফিং বোর্ড প্রদান করা হয়। তিন দিনব্যাপী জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতার তৃতীয় ও শেষদিনে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ফাইনাল খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ী সার্ফারদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) ও বাংলাদেশ সার্ফিং এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ ইউসুফ হারুন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জনাব এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার ডন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সারওয়ার কামাল, জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন, সার্ফিং দ্য নেশন (এসটিএন) এর প্রতিষ্ঠাতা মি. টম বাওয়ার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম, টুর্নামেন্ট কমিটির আহ্বায়ক ও বিএসএ’র যুগ্ম সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম লিটন, নির্বাহী সদস্য মোঃ শাহেদ, স্বপন বসু ও বদরুল আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএ’র সহসভাপতি মো: জেহাদউদ্দিন। এ ছাড়া কক্সবাজারের সেবাদানকারী হসপিটালিটি পার্টনার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন ওয়ালটন গ্রুপ, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড (বিটিবি), টুরিজম পার্টনার-বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, হসপিটালিটি পার্টনার- কক্স টুডে, নিসর্গ এন্টারপ্রাইজ, সীগ্যাল, সায়মন, ডিনার পার্টনার-রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড। টেকনিক্যাল পার্টনার সার্ফিং দ্য নেশন (এসটিএন)। সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সার্ফিং এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ফিরোজ রশিদ সার্ফিংয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং রবিবার ফাইনাল খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) ও বিএসএ সাধারণ সম্পাদক শেখ ইউসুফ হারুন। সৈকতে সার্ফিং ছাড়াও সমুদ্র সংলগ্ন উপকূল অধ্যুষিত জেলায় সোনালি সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে সমুদ্র অর্থনীতি তথা ব্লু মেরিন ইকোনমি। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়নাধীন সরকারী বিভিন্ন মেগা প্রকল্প এ সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। কক্সবাজার জেলা ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন মিয়ানমার এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নির্ধারিত হওয়ার পর পর্যটন জেলা কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিধি বেড়ে গেছে। সৈকতে সাফিং টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পরবর্তী বছর থেকে বিদেশীদেরও আকর্ষণ বেড়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মিষ্টিপান, লবণ-মৎস্য-শুঁটকি উৎপাদন, কয়লা বিদ্যুত ও প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অন্যান্য প্রকল্প কক্সবাজারকে অপার সম্ভাবনার সোনালি দিগন্তের পানে হাতছানি দিচ্ছে। সমুদ্রে (বাংলাদেশ অংশে) কী পরিমাণ মৎস্য সম্পদ, খনিজ সম্পদ, নৌ চলাচলসহ অন্যান্য কী ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। এ অবস্থায় নতুন বেশ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এই সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারলে গোটা বাংলাদেশই বদলে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার, মহেশখালী সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা সোনাদিয়া, মেরিন ড্রাইভ রোড, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও তৎসংলগ্ন ছেড়া দিয়াকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে এ অঞ্চলে বিদেশী পর্যটকের ঢল নামবে। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে এই বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করেন এশিয়ার দেশগুলোতে। এদের বাংলাদেশমুখী করতে পারলে পর্যটন অর্থনীতিতে বিপ্লব সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়াও বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তথ্যমতে, ২০২০ সালের মধ্যে এ শিল্প হতে ২৯ কোটি ৭০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ১০.৫ ভাগ। দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ দিয়ে সারা দেশের লবণের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর শিল্প এলাকায় স্থাপিত ৪৩টি লবণ কারখানায় জেলায় উৎপাদিত লবণ পরিশোধন ও প্রক্রিয়াজাত করে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।
×