ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করতে চান মুশফিকুর রহীম

‘আমরা সেমিতে খেলার সামর্থ্য রাখি’

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

‘আমরা সেমিতে খেলার সামর্থ্য রাখি’

মিথুন আশরাফ ॥ ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হবে ৩০ মে। ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে হবে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশসহ বিশ্বকাপে খেলবে ১০ দল। প্রতিটি দল ৯টি করে ম্যাচ খেলবে। একে অপরের বিপক্ষে লড়াই করবে। যে চারটি দল পয়েন্ট তালিকায় সেরা চারে থাকবে তারাই সেমিফাইনাল খেলবে। বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে খেলার সামর্থ্য রাখে। এমনটিই মনে করছেন বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনের পর সাংবাদিকদের এমনটিই জানান মুশফিক। তিনি বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দলের নকআউট পর্বে যাওয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে। আর নকআউট পর্বে গেলে যে কোন কিছুই ঘটতে পারে, এটা সবাই জানে। একটাই কথা- আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা জেতার জন্য যাচ্ছি; শুধু অংশগ্রহণের জন্য নয়। এটা আমরা যেভাবে বিশ্বাস করি, আশাকরি আপনারাও তা করবেন।’ নকআউট পর্বে যেতে কম করে হলেও পাঁচটি থেকে ছয়টি ম্যাচ জেতা লাগবে। সবার আগে সেই জয়গুলো তুলে নিতে হবে। এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল জিতলেইতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও সুযোগ থাকছে। মুশফিক যে কথা বলেছেন, তা সত্যি। নকআউট পর্বে গেলে জিতলেই ফাইনালে ওঠা হবে। আর ফাইনালে উঠলে, জিতলেই শিরোপা ঘরে তোলা হবে। সেই স্বপ্ন এখনই দেখা হচ্ছে না। তবে সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখছে। সেমিফাইনালে খেলতে হলে বাংলাদেশকে কঠিন পথই পাড়ি দিতে হবে। এবার নয়টি ম্যাচ খেলতে হবে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২ জুন। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর এক এক করে ৫ জুন নিউজিল্যান্ড, ৮ জুন ইংল্যান্ড, ১১ জুন শ্রীলঙ্কা, ১৭ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০ জুন অস্ট্রেলিয়া, ২৪ জুন আফগানিস্তান, ২ জুলাই ভারত আর ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে টাইগাররা। সেরাটা খেলতে হবে। মুশফিক মনে করছেন, সামর্থ্য কাজে লাগাতে পারলে সেমিফাইনাল খেলা সম্ভব। মুশফিক প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছেন ২০০৭ সালে। মুশফিকের এবার চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলা হবে। মুশফিকের মতো মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালেরও চারটি বিশ্বকাপ খেলা হবে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ দল দেশের মাটিতে অনুশীলন করছে। আজ অনুশীলনের শেষদিন। ১ মে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যাবে দল। সেখান থেকে বিশ্বকাপ খেলতে ইংল্যান্ডে যাবে দল। মুশফিক বলেন, ‘আমরা তিন-চারজন আছি যারা এবার চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলব। অবশ্যই আমাদের ইচ্ছা আছে যেন স্মরণীয় করে রাখতে পারি। অবশ্যই এটা অনেক কঠিন কাজ। যে কোন কাজই এত সহজে পাওয়া গেলে মজাটা আর ওরকম থাকে না। শুধু বিশ্বকাপ না, বাংলাদেশের হয়ে আপনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবেন, একটা টুর্নামেন্ট খেলবেন। এটা গর্ব ও সম্মানের বিষয় যে কোন ক্রিকেটারের জন্য। আর বিশ্বকাপ তো অবশ্যই অনেক বড় মঞ্চ।’ বিশ্বকাপে ভাল করতে হলে আয়ারল্যান্ড সিরিজেও ভাল করতে হবে। তাতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তাই আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন মুশফিক, ‘সামনে আয়ারল্যান্ড সিরিজ, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিউজিল্যান্ড সফরের পর আমরা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিনি। সেই আমেজটা পাওয়া এবং দল হিসেবে একতাবদ্ধ হওয়া, আমার মনে হয় আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে এটা শুরু হবে।’ এবারই হয়তো পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের (মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ) এক সঙ্গে শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে। চার বছর পর যে বিশ্বকাপ আসবে, তাতে খেলা মাশরাফির জন্য কঠিনই। এ বিষয়টি সামনে চলে আসতেই একটু আবেগপ্রবণও হয়ে পড়লেন মুশফিক। তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিটি খেলাই কিন্তু প্রত্যাশা থাকে, চাপও থাকে। কারণ আপনি একটা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনি চাইলেই বলতে পারবেন না একদিন খেলব, আরেকদিন খেলব না। এটা অনেক প্রাইড ও অনারের ব্যাপার। এটা আমি সবসময় ফিল করি। বিশ্বকাপ সব চাইতে বড় মঞ্চ। এখানে সবাই পারফর্ম করতে চাইবে। মনে হয় এটাই এক সঙ্গে (পঞ্চপা ব) হয়তোবা আমাদের শেষ বিশ্বকাপও। মাশরাফি ভাই যদি এরপর আর বিশ্বকাপ খেলতে না পারে এটাই আমাদের এক সঙ্গে শেষ বিশ্বকাপ। আমরা সবাই চাইব মাশরাফি ভাইয়ের জন্য হলেও যেন বিশেষ কিছু করতে পারি। যেটা কিনা স্মরণীয় হতে পারে। আমার মনে হয় এটা অবশ্যই অনেক বড় সুযোগ। একই সঙ্গে আমাদের সুযোগও অনেক বেশি আছে এই বিশ্বকাপে ভাল করার।’ বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের সেরা নৈপুণ্য দেখানোর চেষ্টা করবেন মুশফিক, এমনটিই জানান, ‘অবশ্যই। এমন একটি বড় ইভেন্টে সবাই চায় ইম্প্যাক্টফুল ইভেন্ট খেলতে। তো আমার মনে হয়, আমিও ব্যতিক্রম নই। তবে কন্ডিশন একটা চ্যালেঞ্জ থাকবে, প্রতিপক্ষ একটা চ্যালেঞ্জ থাকবে। হিউজ ক্রাউড থাকবে। সবকিছু মিলিয়ে এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ চতুর্থবারের মতো আমি খেলতে যাচ্ছি। শেষ তিনটি বিশ্বকাপে আমি রান করেছি, আমার নিজেরও একটা ব্যক্তিগত গোল আছে। এই বিশ্বকাপে যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারি। আমি মনে করি সুযোগ আছে, সামর্থ্যও আছে। আমি সেভাবেই চেষ্টা করব। একজন টপঅর্ডার হিসেবে মনে হয়, আমাদের যারাই টপঅর্ডার আছে তাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ যারা টপঅর্ডার আছে স্পেশালি ওয়ানডে ফরমেটে টপঅর্ডার রান করলে অনেক বড় একটা রান স্কোর বোর্ডে তুলতে পারেন, প্রায় ৩শ বা সাড়ে ৩শ। আমার মনে হয় এই জিনিসগুলো আমার মাথায় আছে এবং এ্যাজ এ্যা টিম আমরা এগুলো আলোচনা করেছি। যদি সুযোগ থাকে তাহলে চেষ্টা করব বাংলাদেশকে দু’হাত ভরে দিতে।’ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করা নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘মাইলস্টোন সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের টপঅর্ডারে যারা আছে, সবাই চেষ্টা করে বড় ইনিংস খেলার। আমিও করি। আর আমি সবসময় বিশ্বাস করি ম্যাচ জেতানোর ক্ষেত্রে যে রানটা দরকার, আমি সেটাই করতে চাই। বড় ইনিংস খেলার সুযোগ এলে আমি তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। বড় কিছু করার জন্য, স্মরণীয় কিছু করার জন্য চেষ্টার কোন কমতি থাকবে না।’ সেমিফাইনালে উঠতে বাংলাদেশের বাধা হতে পারে কোন দল? এমন প্রশ্নে মুশফিক যে কোন দলকেই সামনে তুলে ধরেন, ‘যে কোন দল। আফগানিস্তানও কঠিন দল। ভারত-পাকিস্তান বা অন্য যে কোন দলই কঠিন। আবার আমরা ভাল খেললে যে কোন দলকেই হারানো যাবে। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্দিষ্ট দিনে সব বিভাগে আমরা কিভাবে করছি। আমাদের ধারাবাহিকতাটা ভাল রাখতে হবে। তার আগে আয়ারল্যান্ডে আমাদের ভাল সুযোগ আছে। সেখানে আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভাল দল। তাদের বিপক্ষে আমাদের ভাল খেলতে হবে। এরপর অনুশীলন ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষেও আমরা সুযোগ পাব। সবমিলিয়ে আমরা কোন দলকেই ছোট করে দেখার সুযোগ দেখছি না।’ টুর্নামেন্টের ফরমেট নিয়ে মুশফিক স্বাগতমই জানিয়েছেন, ‘আগে দেখা গেছে আমরা বিশ্বকাপে স্ট্রং গ্রুপে পড়েছি, তখন মনে হয়েছে এই গ্রুপে না পড়ে অন্য গ্রুপে পড়লে ভাল হতো। ২০০৭ সালে আমরা ভারতকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফাই করেছিলাম। অনেক সময় গ্রুপে পড়েও কোয়ালিফাই করতে পারিনি। এটা কঠিন ফরমেট। কিন্তু ফেয়ার সুবিধা পাবে। সেদিক থেকে বলব, এই ফরমেট যে কোন দিক থেকেই সুবিধাজনক। আর বাংলাদেশ আগের মতো নাই। আমার মনে হয় বাংলাদেশ বড় দল। এই ফরমেটকে আমরা ওয়েলকাম করছি। আমার মনে হয় আমরা এই ফরমেটে ভাল খেলেই পরের ধাপে কোয়ালিফাই করব।’
×