ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্লকচেইন ব্যবহারে কম্পিউটারে তথ্য নিরাপদ রাখবে

প্রকাশিত: ০৯:১১, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

  ব্লকচেইন ব্যবহারে কম্পিউটারে তথ্য নিরাপদ রাখবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে ব্যাংকিংয়ে ব্লকচেইন ব্যবহারে সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্লকচেইন খুবই সম্ভাবনাময়। বিশ্বের কয়েকটি দেশে এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা পেলেও বাংলাদেশে যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র। মূলত ব্যাংকিংয়ে ব্লকচেইন হলো আর্থিক ও তথ্য লেনদেনের এক ধরনের ব্যবস্থা। এ ব্লকচেইন হলো এক ধরনের ডাটা স্ট্রাকচার যা তথ্যেও বিকেন্দ্রীভূত ডিজিটাল লেজার তৈরি করতে কাজ করে। একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের আওতাধীন সকল কম্পিউটার মিলে এই বিকেন্দ্রীভূত লেজার তৈরি করে, যা অত্যন্ত নিরাপদ। রবিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘রেলিভেন্স অব ব্লকচেইন ফর ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদা। তিনি নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকিংয়ে ব্লকচেইন ব্যবহারের ওপর জোরারোপ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশাসন ও হিসাব এবং গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি তার বক্তব্যে ব্যাংকিংয়ে ব্লকচেইন ব্যবহার বিষয়টি বিশ্লেষণ করেন। গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান আলম। চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণা দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক কানিজ রাব্বী; ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইউএনসিডিএফ) কান্ট্রি প্রোজেক্ট কো-অডিনেটর মোঃ আশরাফুল আলম; নাজটেক ইনকর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আহমেদ নাজ। গবেষণায় প্রাইমারী এবং সেকেন্ডোরি দুই ধরনের তথ্যের ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় দেশের ৩৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। এর বাইরে ১০০ জনের বেশি বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়। গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসএম মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী; বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি; ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের চিফ ডিজিটাল অফিসার শ্যামল বরন দাশ। বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, একটি নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্থা হিসেবে ই- ব্যাংকিং পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও ই-পেমেন্ট, ই-ব্যাংকিং, অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস সিস্টেম এবং মোবাইল ব্যাংকিং চালু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইউটিলিটি বিল, অনলাইন অর্থ স্থানান্তরসহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছে। বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, প্রথমে ব্লকচেইন কি এবং কিভাবে কাজ করে তা ব্যাংকারদের জানতে হবে। অন্য দেশ কিভাবে সুবিধা পাচ্ছে তা জানতে হবে। এর পাশাপাশি কিভাবে ব্লকচেইন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা ব্যাংকারদের জানা খুব জরুরী। এটি না করলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত পিছিয়ে পড়বে। পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ব্যাংকিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশই বাড়ছে। বিশ্বায়নের যুগে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক থেকে পিছনে পড়ে থাকতে পারি না। তাই প্রয়োজন সক্ষমতা অর্জন এবং সুষ্ঠু নিরাপত্তার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মোঃ ইয়াছিন আলি বলেন, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এখনই শুরু করতে হবে। এ বিষয়ে প্রথম উদ্যোগটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিতে হবে। ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইউএনসিডিএফ) কান্ট্রি প্রোজেক্ট কো-অডিনেটর মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে সব সময় এক ধরনের ভীতি কাজ করে। অনেকে এটিকে কঠিন মনে করে সংযুক্ত হতে চায় না। কম্পিউটার ব্যবহারের প্রথম দিকে এ ধরনের ধারণা ছিল। তবে ক্রমেই এ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে মানুষ। একইভাবে ব্যাংকারদেরও ব্লকচেইন সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে ভীতি কেটে যাবে। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের চিফ ডিজিটাল অফিসার শ্যামল বরণ দাশ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার অপেক্ষা না করে ব্যাংকের নিজেদের উদ্যোগে সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করে অভ্যন্তরীণভাবে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
×