ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাগ-চাপ কমানো সম্ভব

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

রাগ-চাপ কমানো সম্ভব

মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত, অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের ভেতর রয়েছে বিচিত্র অনুভূতি। পরমানন্দে সে যেমন আপ্লুত হয়, তেমনি গভীর বিষাদে মানুষ আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। মানুষ নিজের অবস্থান বা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করতে পারে। পারে সে নিজেকে বদলে নিতে। নেতিবাচক পথ পরিহার করে ফিরে আসতে পারে ইতিবাচক পথে। মানুষ এই গ্রহের সবচাইতে বুদ্ধিমান প্রাণী বলেই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে নিজের গ্রহ ছাড়িয়ে ভিন গ্রহের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া। এভাবে মানুষ জয় করেছে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহ। এমনকি মানুষ এখন মঙ্গল গ্রহে অভিবাসনের ভাবনা-চিন্তাও শুরু করে দিয়েছে। এমন একটি চমৎকার সৃষ্টি যখন উল্লেখযোগ্যহারে আগের তুলনায় দুঃখী থাকে এবং রাগ পুষে রাখে, তখন সেটি মানবসভ্যতার জন্যই হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি একটি বৈশ্বিক গবেষণার ফলাফলে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে মানুষ নিজের এই পরিবর্তন নিয়েই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠবেÑ তাতে আর সন্দেহ কী! নতুন একটি বৈশ্বিক সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে আগের চেয়ে মানুষের রাগ, দুঃখ ও দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সমীক্ষাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ। বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রায় দেড় লাখ লোকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সমীক্ষাটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্যালাপ। এতে দেখা যায়, গত দুই বছরের চেয়ে দুঃখী ও রাগী লোকের সংখ্যা বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। মানুষের দুঃখ বাড়ছে - এ কথার সরল অর্থ হচ্ছে তার সুখ কমছে। সুখ কেন কমে এমন প্রশ্নের উত্তরে মনোবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যার সঙ্গে সমাজ বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ শতভাগ নাও মিলতে পারে। ব্যক্তির সুখ কমতে পারে তার সুখের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও। সে এত বেশি সুখ চায় যে, তা আহরণ করা তার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। ফলে স্বভাবতই বেড়ে যায় দুঃখ। অন্যভাবে বলা যেতে পারে জীবনযাপনে ও পারিপার্শ্বিকতায় দুঃখের কারণ বেড়ে গেলে মানুষ দুঃখিত তো হবেই। দুঃখ ও হতাশা থেকেই তার ক্রোধের উন্মেষ ঘটে। সুখী মানুষ কি সহজে রেগে যায়? বরং দুঃখী মানুষই রেগে যেতে পারে। লক্ষণীয় হলো গ্যালাপের ওই সমীক্ষায় সবচেয়ে নেতিবাচক অনুভূতির দেশ হিসেবে শীর্ষে এসেছে আফ্রিকার চাদের নাম। চাদে প্রতি ১০ জনের ৭ জনই বলেছেন, গত বছর খাবার জোগাড় করতে লড়াই করতে হয়েছে তাদের। আর ৬১ শতাংশ বলেছেন, তারা শারীরিক কষ্টে কাটিয়েছেন বছরটা। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করতে যদি গলদঘর্ম হতে হয় তবে সে চাপে তো থাকবেই। মানসিক চাপ থেকেই তার দুঃখ ও রাগের অনুভূতি হতে পারে। মানুষের ভেতর জাতিগত ও সম্প্রদায়গত হানাহানি যে বাড়ছে তা বিশ্ব সংবাদ পর্যবেক্ষণ করলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই হানাহানির খবর আলোর মতোই মহাগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা পৃথিবীতে। ফলে তার একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সব স্থানের মানুষের ভেতর কাজ করে চলেছে। যদি তার উল্টো পরিস্থিতি বিরাজ করত পৃথিবীজুড়ে, এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিত, উভয় উভয়ের পাশে দাঁড়াত, পরস্পরকে আগলে রাখত তাহলে তাদের ভেতর সত্যিকারার্থেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের নজির সৃষ্টি হতো, যা প্রভাবিত করত সব দেশের মানুষকেই। শান্তির বারি যদি সারা পৃথিবীর সব মানুষের মনের ওপর বর্ষিত হতো তাহলে কি আর এত দুঃখ ও রাগ থাকত সবার? থাকত না। তাই এই জরিপ আমাদের সামনে এমন বাস্তবতাও তুলে ধরেছে, যা থেকে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হতাশাগ্রস্ত না হয়ে আলোক শিখার সন্ধানই পাবে। যার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব জীবনের অন্ধকার। রাগের পরিবর্তে চাই অনুরাগ, আর মানসিক চাপের জায়গায় চাই আনন্দের ছাপ। মানবতার পতাকা উর্ধে তুলে ধরা গেলেই সেটি সম্ভব।
×