ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৩৩-এ চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

১৩৩-এ চট্টগ্রাম বন্দর

বৃহস্পতিবার ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের জন্মদিন। দেশের অন্যতম গৌরবের এই নৌবন্দরটি ১৩২ বছর পার করে পা দিল ১৩৩-এ। স্বভাবতই এই উপলক্ষে বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আমদানি-রফতানির ৯০ শতাংশ এখনও সম্পন্ন হয়ে থাকে এই বন্দরের মাধ্যমে। এও সত্য যে, বর্তমান বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক আয়তন, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সমুজ্জ্বল ভবিষ্যত বিবেচনায় শুধু চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আর চলছে না। জাহাজজট এবং যথাসময়ে কন্টেনার খালাস এই বন্দরের অন্যতম সমস্যা। সময় সময় সংস্কারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপিত হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপর্যাপ্ত। তদুপরি ক্রমাগত পলি জমে জমে কর্ণফুলীর মোহনায় অবস্থিত বন্দরটির নাব্য সঙ্কটের বিষয়টিও সুবিদিত। চট্টগ্রাম দেশের প্রধান বন্দর ও বাণিজ্যনগরী হিসেবে বিবেচিত হলেও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে রয়েছে সমূহ ঝুঁকিতে। অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্রায়ই ঝুঁকির মুখে নিপতিত হয় চট্টগ্রাম শহর ও বন্দর। এসব বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান দূরদর্শী সরকার বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় নৌবন্দর হিসেবে মংলাকে আধুনিক উন্নত ও সমৃদ্ধ এবং তৃতীয় নৌবন্দর হিসেবে পায়রাকে গড়ে তুলছে। পায়রা বন্দর ও বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ ইতোমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। অতঃপর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে ক্রমশ। দেশ-বিদেশের পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ছে, ছেড়ে যাচ্ছে, রাজস্ব আদায় হচ্ছে নিয়মিত। এমনকি যেসব জাহাজ এখান দিয়ে যাওয়ার সময় অতিক্রম করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা তারাও টোল দিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান হয়েছে বহু লোকের। আগামীতে বন্দরটি আরও সচল ও বহু ব্যবহার্য হলে আরও বাড়বে কর্মচাঞ্চল্য। চাপ কমবে চালনা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের। মাত্র কয়েক বছর আগে ২০১৩ সালের নবেম্বরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালীতে এর সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সর্বাধিক মনোযোগ দেয় বিদ্যুত উৎপাদন, বন্দর স্থাপন ও যোগাযোগের উন্নয়নে, যা যে কোন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য এবং অত্যাবশ্যক। দেশ বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। চট্টগ্রাম ও চালনার পর পায়রায় হয়েছে তৃতীয় সমুদ্রবন্দর। সর্বোপরি মাতারবাড়িতে হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের অঙ্গনেও। এই বন্দরে জাহাজ ভিড়তে এবং পণ্য খালাস করতে অত্যধিক সময় লাগে। কাস্টমসের ঝামেলাও অনেক এবং শ্লথগতিসম্পন্ন। ঘুষ-দুর্নীতিও কিছু কম নেই। বিশ্বের যে কোন বন্দরের চেয়ে এখানে পণ্য আমদানি-রফতানিতে ব্যয় অনেক বেশি হয়। ফলে জাহাজ ভাড়াও বেড়ে যায় অনিবার্য। পণ্যের দামও বেড়ে যায় বহুগুণ। সর্বোপরি নাব্য সঙ্কটে বর্তমানে আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে বন্দরের প্রবেশ মুখ। প্রবল জোয়ার ব্যতিরেকে বন্দরের সব জেটিতে জাহাজ ভিড়তেও পারে না। অতঃপর লাইটারেজ জাহাজযোগে পণ্য খালাস করতে হয় আমদানিকারকদের। ফলে জরুরীভিত্তিতে চালনা ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোসহ আরও একাধিক বিকল্প বন্দর তথা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মিত হলে এর সক্ষমতা বাড়বে বহুগুণ। দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে মাতারবাড়িতে। কক্সবাজার সংলগ্ন মহেশখালী দ্বীপের সন্নিকটে সমুদ্রের গভীরতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুকূল হওয়ায় সর্বাধিক পছন্দনীয় হয়েছে মাতারবাড়ি। প্রাথমিক পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়ায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই চলবে চূড়ান্ত সমীক্ষার কাজ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন বা জাইকার বিনিয়োগে এ বন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হলেও এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সে অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ও আনুষঙ্গিক দক্ষতা অবশ্যই আরও বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে দক্ষ জনশক্তি। ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে এই গভীর সমুদ্রবন্দরটির অপারেশনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
×