ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজি ॥ সোর্স আটক, এসআই ক্লোজড তদন্ত কমিটি

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

 টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজি ॥ সোর্স আটক, এসআই ক্লোজড তদন্ত কমিটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৮ এপ্রিল ॥ টাঙ্গাইলে পুলিশের এসআই ও সোর্সের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে সদর থানা ঘেরাও করে গ্রামের সাধারণ জনতা। শনিবার রাতে রক্ষিত বেলতা গ্রামের লোকজন প্রথমে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার প্রধান ফটকের সামনে এসআই জেসমিন আক্তার ও সোর্স বক্কর হোসেনের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভের পর থানায় প্রবেশ করে অভিযোগ দেয়। পরে রবিবার সকালে ওই এসআই জেসমিন আক্তারকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান। তিনি বলেন, সোর্স বক্কর হোসেনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রক্ষিত বেলতা এলাকায় ছেলের সামনে রেজিয়া বেগম নামের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা করে ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে যায়। ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি থাকায় পুলিশ বিভিন্ন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসআই জেসমিন আক্তার ও তার সোর্স বক্কর হোসেন কয়েকজনকে আটক করে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার পুলিশের সোর্স বক্কর হোসেন রক্ষিত বেলতা এলাকায় হাজী আয়নাল হকের বাসায় গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে লোকজন বক্কর হোসেনকে আটক করে। খবর পেয়ে টাঙ্গাইল থানার এসআই জেসমিন আক্তার গিয়ে বক্কর হোসেনকে উদ্ধার করে ও সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসে। এরপরই ওই গ্রামের নারী-পুরুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শনিবার রাতে সদর থানা ঘেরাও করে। রক্ষিত বেলতা গ্রামের বাসিন্দা হারেজ আলী বলেন, আমি সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহে আমাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। একই গ্রামের সুফিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামীকে এসআই জেসমিন আক্তার আটক করে। পরে আমরা ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছি। পুলিশ মূল আসামিকে আটক করে শাস্তি প্রদান করুক। তারা কেন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে। আমি এসআই জেসমিন আক্তারের বদলি দাবি করছি। হাজী আয়নাল হক বলেন, শনিবার আছরের নামাজ পড়ে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এসআই জেসমিনের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি গাড়ি থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার নাম কি হাজী আয়নাল? আমি হ্যাঁ বলায় আমার নাম ঠিকানা তিনি খাতায় লিখে চলে যান। অপরদিকে আমার বাড়িতে পুলিশের সোর্স বক্কর হোসেন গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করলে বক্করকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি। পরে জেসমিন আমাকেসহ এলাকাবাসীকে হুমকি ধমকি দেন। জেসমিন বলেন, বক্করের কিছু হলে এলাকার কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আয়নাল হকের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, আমাদের এলাকায় কে বা কারা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সেটি আমার জানা নেই। তবে পুলিশ অপরাধীদের না ধরে সাধারণ মানুষকে আটক করে টাকা লেনদেনের বিনিময়ে তাদের ছেড়েও দেয়। আমরা এসব হয়রানি থেকে মুক্তি চাই। এ বিষয়ে সদর থানার এসআই জেসমিন আক্তার বলেন, আমি দায়িত্ব পালন করেছি। আমার নামে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউর রহমান বলেন, রক্ষিত বেলতা ও পাইনা পানতা গ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত ঝগড়া চলে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় রক্ষিত বেলতা এলাকায় গত ২৮ মার্চ এক মহিলাকে হত্যা করা হয়। সেই হত্যার কোন ক্লু না পাওয়ায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিপূর্বে বেল্লাল মিয়া নামে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়।
×